অপার সম্ভাবনার পর্যটনকেন্দ্র সোনালি বালুর সোনারচর

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা এক অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপ সোনারচর। এর পাশেই রয়েছে চরহেয়ার দ্বীপ ও জাহাজমারা সমুদ্রসৈকত। সবুজ বনানি, পাখির কলোরব, বন্যপ্রাণী ও লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটি এবং জেলেদের উচ্ছ্বাস সব মিলিয়ে সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশির বুক চিড়ে জেগে ওঠা সোনারচর সৌন্দর্যপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।
প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের এই চরে রয়েছে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। ফেনিল নোনা জলে ভেজা সৈকতে ঘুরে বেড়ানো কাঁকড়ার মিছিল ও সূর্যাস্তের মনারম দৃশ্য সবার মন কেড়ে নেয়। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের তটরেখা বরাবর সোনারচরের অবস্থান। সড়কপথ আর নদী পাড়ি দিয়ে সোনারচরে এসে এর সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায় সহজেই। শহরের কোলাহল ডিঙিয়ে বহুদূরের এই সৈকতের সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছেই অজানা। সোনারচর ও চরহেয়ারের আকর্ষণ যেকোনো ভ্রমণপিপাসুকেই আরো কাছে টেনে নেবে।
সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়: সোনারচরের তটরেখায় দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ লালিমা। দেখা যাবে লাল কাঁকড়াদলের অসাধারণ শিল্পকর্ম। এখানে রয়েছে হরিণ, বুনো মহিষ, মেছোবাঘ, শূকর, উদসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। শীত মৌসুমে স্থানীয় পাখির দলে যোগ দেয় হাজারো অতিথি পাখি। সাইবেরিয়ান হাঁস, সরাইল, গাঙচিলসহ নানা জাতের পাখির আগমন ঘটে তখন। এছাড়াও অগণিত চ্যানেল রয়েছে সোনার চরের আশপাশে। এসব চ্যানেলে পর্যটকরা ঘুরতে পারেন নৌকা অথবা ট্রলার নিয়ে। চ্যানেলের দুই পাশে বহু পুরনো ম্যানগ্রোভ আর ঝাউবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে চরের কোলঘেঁষে আশ্রয় নেয় অগণিত জেলে। এসব দেখে মনে হবে যেন এক অন্যরকম জগতে এলাম বুঝি।
সোনারচরে স্বর্ণ না থাকলেও আছে স্বর্ণালী রঙের বালু। সকালে কিংবা শেষ বিকেলের রোদের আলো চরের বেলাভূমিতে পড়লে দূর থেকে পুরো দ্বীপটাকে সোনালি রঙের থালার মতো দেখায়। সূর্যের আলো বালুর ওপরে সোনারঙ আভা ছড়ায়। মনে হয় দ্বীপটিতে কে যেন কাঁচা সোনার প্রলেপ দিয়ে রেখেছে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই দ্বীপটির নাম ‘সোনারচর’ রাখা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
যাওয়ার পথ : সরাসরি সড়ক পথে সোনারচরে যাওয়ার সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি। প্রথমে জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা উপজেলায় পৌঁছাতে হবে আপনাকে। সেখান থেকে আগুনমুখা নদী পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হবে রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এরপর উপজেলার গহিনখালী খেয়াঘাট থেকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদী পাড় হয়ে ট্রলারে পৌঁছে যাবেন সোনারচরে। তবে কুয়াকাটা থেকেও সরাসরি ট্রলার অথবা স্পিড বোট ভাড়া নিয়ে সোনারচরে আসতে পারেন।
থাকার জায়গা : রাতযাপনের জন্য সোনারচরে আরামদায়ক ও নিরাপদ কোনো ব্যবস্থা অদ্যাবধি গড়ে ওঠেনি। সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য ছোট্ট তিন কক্ষের একটি বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে বন বিভাগের ক্যাম্প। এসব স্থানে রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে। চাইলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারে করে আধাঘণ্টার মধ্যে চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গিয়ে থাকতে পারেন। চরমোন্তাজে রয়েছে বন বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা স্যাপ-বাংলাদেশ ও মহিলা উন্নয়ন সমিতির বাংলো।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন, রাঙ্গাবালীর সোনারচর, চরহেয়ার ও জাহাজমারা সমুদ্রসৈকত দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন বিকাশের সুযোগের জন্য অপেক্ষায় আছে। আমি এ ব্যাপারে সংসদে একাধিকবার বক্তব্য রেখেছি। প্রধানমন্ত্রীও সোনারচরের বিষয়ে অবগত আছেন। সোনারচর নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সোনারচর হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র।
আপনার মতামত লিখুন