শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক ভ্রমণ স্পট

স্টাফ রিপোর্টার
১১ জানুয়ারি ২০২১

হাজারিখিল। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এ স্থানটি পাখিদের কিচিরমিচিরে মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শনার্থীদের মাঝে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকাটি-ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’ এবং গিরিপথ, সুড়ঙ্গ ও পাহাড়ি ঝর্ণা ভ্রমণ, আর সঙ্গে চারপাশে চা বাগানঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর জন্য বেশ আনন্দের।

আপনি যদি পাখির রাজত্বে হারিয়ে যেতে চান, তা হলে চোখ বন্ধ করে হাজারিখিল চলে যান। যেখানে হাজারও নাম না জানা পাখির আনাগোনা। হাজারিখিল অভয়ারণ্য আপনাকে পাখির কলকাকলিমুখর আবেশময় এক জগতে নিয়ে যাবে।

২৯০৮ হেক্টর জমি নিয়ে এ বনপ্রাণ অভয়ারণ্যটি গঠিত। ১৮৯৩ সালে এ জায়গাটিকে ‘রামগড়-সীতাকুণ্ড সংরক্ষিত বন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বন্যপ্রাণীতে মুখর হাজারিখিলে দেখা মেলে নানা ধরনের জীবজন্তুর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ভাল্লুক, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, শিয়াল, মায়া হরিণ, সাম্বার, বন কুকুর, বনছাগল, বানর ও হনুমান। আবার মাঝে মাঝে দেখা মিলে চিতাবাঘেরও!

মোট আট প্রজাতির উভচর এবং ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ আছে এ বনে। তবে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত এ বনে রয়েছে প্রায় ১২৩ প্রজাতিরও বেশি পাখি! সে হিসেবে হাজারিখিল অভয়ারণ্যকে পাখিপ্রেমীদের স্বর্গ বললেও ভুল হবে না।

বিশেষ করে বিপন্নপ্রায় কাঠময়ূর আর মথুরার দেখা পাওয়া যায় এখানে। আছে কাউ ধনেশ ও হুতুম পেঁচাও। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ থাকার কারণে চিরসবুজ এ বনে এমন কিছু প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখা যায় না।

এর মধ্যে রয়েছে হুদহুদ, চোখ গেল, নীলকান্ত, বেঘবৌ ও আবাবিল। এসব পাখির আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবে বৈচিত্র্যময়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে এক গবেষণায় পাখির এসব প্রজাতির সন্ধান পায় গবেষক দল। এ অভয়ারণ্যে নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে শীতকালে যোগ দেয় অতিথি পাখির দল। এদের বিচরণে চিরসবুজ বন পরিণত হয় পাখির-ই আলাদা এক রাজ্যে।

অভয়ারণ্যের ভেতর ঢুকতেই দেখবেন, হাতের বামপাশে বিশাল চা বাগান আর ডান পাশে সিঁড়ি বেয়ে উঠেই বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে আপনি হারিয়ে যাবেন চা বাগানের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে।

কিছু সময়ের জন্য হলেও মনে হবে, পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করতে পারলেই ভালো হতো। এ ছাড়া হাজারিখিলে নানা ধরনের বৃক্ষের সমাহারও উপভোগ করতে পারবেন। তবে চিরহরিৎ গাছ-ই বেশি এখানে। এ ছাড়া আছে গর্জন, চাপালিশ, সেগুন, কড়ই, মেহগনি। বিখ্যাত রাঙাপানি চা বাগান এ অভয়ারণ্যের পাশেই অবস্থিত।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে পারেন বাসে অথবা ট্রেনে। এর পর ফটিকছড়ি হয়ে হাজারিখিল যেতে হবে। অক্সিজেন থেকে ফটিকছড়ির বাস পাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ৪০। বাসে মোটামুটি ১.৩০ মিনিটের জার্নি।

বাসে আপনাকে নামতে হবে বিবিরহাট। বিবিরহাট নেমেই রোডের উল্টা দিকে গিয়ে সিএনজি আছে, ওরা হাজারিখিল বাজার পর্যন্ত জনপ্রতি ৩৫ টাকা করে নেয়।

হাজারিখিল বাজার থেকে অভয়ারণ্য ১০ মিনিটের পথ। সেখানে গিয়ে গাইড সঙ্গে করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পাহাড়ের গিরিপথ ট্রেকিং করার পর পাওয়া যাবে ‘কালাপানির ঝর্ণা’। সেখান থেকে ফিরে এসে চা বাগান পেরিয়ে যেতে পারেন সুড়ঙ্গ দেখতে।

খাবেন কোথায়?

হাজারিখিল অভয়ারণ্যে দুপুরে খাওয়ার জন্য একটা ভাতঘর আছে, যেখানে জনপ্রতি ১৩০ টাকা দিয়ে প্যাকেজ নিতে পারেন। এ ছাড়া ফটিকছড়ি শহরে নানা ধরনের খাবারের হোটেল আছে।

থাকবেন কোথায়?

থাকার জন্য চট্টগ্রাম বা ফটিকছড়ি শহরে নানা মানের হোটেল আছে। অবশ্যই ভাড়া দরদাম করে রুম দেখে উঠবেন।

তা হলে আর দেরি কেন? ঘুরে আসুন পাখির স্বর্গ হাজারিখিল! হারিয়ে যান পাখিদের সঙ্গে চিরসবুজ অরণ্যের মাঝে।

‘বিদেশ ভ্রমণে যেতে হবে না, বিদেশিরা ঢাকায় ভ্রমণে আসবে’
সৌদি নাগরিকদের ভ্রমণে করোনা টিকার আবশ্যকতা উঠে যাচ্ছে

আপনার মতামত লিখুন