শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

চীনামাটির পাহাড়ে নীল জল দেখতে যাচ্ছেন তো?

ডেস্ক রিপোর্ট
০১ জানুয়ারি ২০২২

বাংলাদেশ একটি অনন্য সুন্দর দেশ। যেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান। এমনি একটি স্থান হলো নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হলো বাংলাদেশের একমাত্র চীনামাটির পাহাড়। এছাড়াও আপনি দেখতে পাবেন রাণীখং গির্জা, কমলা রাণীর দীঘি এবং সোমেশ্বরী নদী।

সেন্টমার্টিনের নীল অনেকের কাছেই পরিচিত। কিন্তু সবুজ আর নীলের মিশেলে হ্রদ কখনও দেখেছেন? যদি না দেখে থাকেন তাহলে চলে যান সোজা চীনামাটির দেশ বিরিশির বিজয়পুরে।

যদিও শীতের সময়েই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবু এই বর্ষাতেও যেতে পারেন বিজয়পুরে। পাহাড়, নদী আর সবুজ নীলের মিশেলে হ্রদটি আপনার সকল ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দিবে।

তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন না। আপনাকে বিরিশিরি থেকে ব্রিজ পারি দিয়ে যেতে হবে দুর্গাপুর। দুর্গাপুর থেকে ফেরিতে করে সুমেশ্বরী নদী পার হয়ে যাবেন শিবগঞ্জ বাজার। সেখান থেকে অটো অথবা মোটরসাইকেলে করে যাবেন বিজয়পুর। এবার আপনার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকনের পালা। বৈচিত্রময় এক সাংস্কৃতিক আবহাওয়া, কংশ-টেপা-সোশেম্বরীর কাশবন আর অনেকটা হাত ছোঁয়া দূরেই আকাশে হেলান দিয়ে আছে ধ্যানমগ্ন গাড়োপাহাড়।

আসলে বর্ষায় সোমেশ্বরীর তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেক গুণ। পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ররূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য।

বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি। এখান অধীবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগই গাড়ো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টঙ্ক বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ।

তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি শহীদ রাশিমনির স্মৃতিস্তম্ভ আছে এখানে। এছাড়াও যেতে পড়বে সেন্ট জোসেপের গির্জা। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর। তারপর এসে পৌঁছবেন বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড়ে। পাহাড় ও সমভূমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড়জুড়ে রয়েছে সাদামাটি। কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটিও দেখা যায়।

পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাভ নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে। এই হ্রদের নীল পানি যেন আপনার সব অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে।

বিরিশির পাশেই কমলা রাণীর দীঘি। কথিত আছে সুসংয়ের রাজা একটি বিশাল দীঘি খনন করেছিল। কিন্তু সেই দীঘিতে কোনও পানি ছিল না। একদিন রাজা স্বপ্ন দেখেন রাণী কমলা এই দীঘিতে নামলে পুকুরে পানি উঠবে। রাজার স্বপ্নের কথা শুনে রাণী দীঘিতে নামেন, এমনি দীঘিতে পানি উঠা শুরু করে। কিন্তু কমলা রাণী আর সেই দীঘি থেকে উঠতে পারেননি। সেই থেকে স্থানীয়দের কাছে এই দীঘির নাম কমলা রাণীর দিঘী। বর্তমানে দীঘিটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

সব মিলিয়ে বিরিশির নিরিবিলি কোলাহলহীন শান্ত পরিবেশ আপনার প্রশান্তি দিবে। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেও আপনার খারাপ লাগবে না। উত্তরে যেদিকেই তাকাবেন শুধু পাহাড় আর পাহাড়। অবশ্য এসব পাহাড়ের বেশির ভাগই ভারতের।

যেভাবে যাবেন
ঢাকায় যারা আছেন, তারা বিরিশিরি যাবেন ঢাকার মহাখালী বাসস্টেশন থেকে সরাসরি বিরিশিরি। বাস পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবে। ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা।

থাকার ব্যবস্থা
দুর্গাপুরে থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা হলো ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউজ ও কালচারাল অ্যাকাডেমি। এছাড়াও দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। স্বর্ণা গেস্ট হাউজ, হোটেল সুসং, হোটেল গুলশান ইত্যাদি। এগুলোর ভাড়া খুব একটা বেশি না। অল্প খরচেই থাকতে পারবেন।


মেঘ, পাথর আর পাহাড়ের রাজ্যে
এক যুগেও বাস্তবায়িত হয়নি পর্যটন জোন

আপনার মতামত লিখুন