শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

এক যুগেও বাস্তবায়িত হয়নি পর্যটন জোন

নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ জানুয়ারি ২০২২
বগালেক

বগালেক

দেশের পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাময় অঞ্চল ও প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ অঞ্চলের ৩ জেলার মধ্যে বান্দরবানে রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্ণা, পাহাড়ের ওপর লেক, দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড়, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক,সাজেক, খাগড়াছড়ির আলুটিলা, রিসাং ঝর্ণা, চাকমা-মারমা-ম্রো-বমসহ ১১ আদিবাসীর বৈচিত্র্যময় কৃষ্টি-সংস্কৃতি; কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণার ১২ বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ ২০০৭ সালে তৎকালীন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিল।

পাহাড়-খরস্রোতা নদী আর দিগন্ত জোড়া সবুজ বনানী- সব কিছু মিলিয়ে যে কোনো মানুষকে কাছে টানতে সক্ষম পার্বত্য চট্টগ্রাম। তবে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় হোটেল-মোটেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো। রাস্তা-ঘাটেরও বেহাল দশা। ফলে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমালেও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় তারা দ্রুত ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।  

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের অনিচ্ছা ও উদাসীনতার কারণে আজও পার্বত্যাঞ্চলকে পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। অথচ পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে পাল্টে যেত পারে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।  

পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলাজুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন স্পট। বান্দরবানে মেঘলায় একই স্থানে রয়েছে দুটি ঝুলন্ত সেতু, যা দেশের অন্য কোথাও নেই। মেঘলায় আরও রয়েছে মিনি সাফারি পার্ক, শিশু পার্ক, প্রাকৃতিক লেক, চিড়িয়াখানা, চা বাগানসহ পর্যটকের মন ভোলানো সব আয়োজন।  

এছাড়াও শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে রয়েছে নীলাচল, যেখানে পাহাড়ের সাথে আকাশের গড়ে তুলেছে গভীর মিতালী। দেশি-বিদেশি যে কোনো পর্যটক স্পটটিতে গিয়ে মুগ্ধ হতে বাধ্য। অথচ স্পটটিতে প্রয়োজনীয় সুবিধা এখনও গড়ে ওঠেনি।  

বান্দরবানে আরও রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ বিজয় (স্থানীয় ভাষায় তাজিংডং), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং। রয়েছে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়। যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্থানও বটে।  

এছাড়াও রুমা উপজেলায় ঋজুক ঝর্ণা নিজস্ব গতিতে সব মৌসুমেই থাকে সচল। জেলা শহরের অদূরে শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। কিন্তু এখানে নেই পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।  

সরকারি ব্যবস্থাপনায় মেঘলায় একটি পর্যটন মোটেল গড়ে উঠলেও নির্মাণ কাজে ত্রুটির কারলে এটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হলিডে ইন, মিলনছড়ি রিসোর্টসহ বেশ কয়েকটি অভিজাত হোটেল গড়ে উঠলেও তা পর্যটকের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। পর্যটন মৌসুমে শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার অসুবিধার কারণে অসংখ্য পর্যটক বান্দরবান থেকে দ্রুত ফিরে যেতে বাধ্য হয়।  

এদিকে, পর্যটন স্পটগুলোতে নেই পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। বিশুদ্ধ পানির অভাব, পয়ঃনিষ্কাশনের বেহাল দশা এক্ষেত্রে প্রকট। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাবল কার প্রকল্প হাতে নিলেও বর্তমান সরকার সে প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে। ফলে পর্যটন শিল্পে যতটুকু সম্ভাবনা জেগেছিল তাও অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে।  

রাস্তা-ঘাটের চিত্রও একই। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এই শিল্পকে কাজে লাগানো গেলে সরকার এখান থেকেই প্রতি বছর যেমন কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারে, তেমনি বেকার সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে। এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি।

চীনামাটির পাহাড়ে নীল জল দেখতে যাচ্ছেন তো?
৫০ বছরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন

আপনার মতামত লিখুন