শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ অক্টোবর ২০২২

বিদায় নিয়েছে শরৎ, প্রকৃতির কোল জুড়ে চলছে কাশফুল-ফোটা হেমন্তের খেলা। হিমালয়ের চাদর বিছানো সমতল অঞ্চল পঞ্চগড়ের মাঠজুড়ে ধান ফোটা শুরু হয়েছে। হিমালয় কন্যাখ্যাত এই জেলায় অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। ভোর বেলায় কুয়াশা পড়ছে। ঝরছে শিশির বিন্দু। ধানের শীস বা ঘাসের উপর শিশির কণার মুগ্ধতা।

কুয়াশা আর শীতের আমেজে মোহময় পরিবেশ। শরীর জুড়ে লাগছে হিমালয় থেকে আসা হেমন্তি হীম হাওয়া। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পর্বত হিমালয়ের বুকচিরে জেগে উঠছে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভোর বেলা সূর্য ওঠার সাথে সাথে রূপ লাবণ্য ছড়িয়ে দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা সারা পঞ্চগড়ে এক মায়াময় আবেশ সৃষ্টি করছে।

সুদীর্ঘকাল ধরে পঞ্চগড়ের মানুষ সকালে এককাপ চায়ের উষ্ণ চুমুক দিতে দিতে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করে আসছে। শরৎ, হেমন্ত আর শীত কালেই দেখা মেলে এই মহাশুভ্রতার। কখনো কখনো বছরের অন্যান্য সময়েও দেখা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভোর থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে মেলে ধরে এই শৃঙ্গ। হিমালয়ের স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এক শক্তিমান প্রতিভূর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ লুকিয়ে পড়ে মেঘের আড়ালে। আকাশ আর স্থলের ক্যানভাসে যেন আঁকা ছবি। বাতাসে উড়তে উড়তে মেঘ সরে গেলে আবার জেগে ওঠে। আবার হারিয়ে যায়। মনে হয় কেউ যেন মুছে দেয় সেই ছবি। যেন লুকোচুরি খেলা।

এই লুকোচুরির খেলায় দর্শকেরাও যোগ দেয়। আবার জেগে ওঠার অপেক্ষা করেন তারা। তেঁতুলিয়া উপজেলার ডাকবাংলো এলাকা, মহানন্দা, ভেরসা,করোতোয়া, ডাহুক নদীর পাড় এবং বিভিন্ন গ্রাম থেকে সবচেয়ে ভালো উপভোগ করা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই শৃঙ্গকে বলা হয় সুপেয় পানির ঠিকানা। বরফের এই পাহাড় থেকে নেমে এসেছে চারটি নদী। এই নদীগুলো বয়ে গেছে পঞ্চগড়ের উপর দিয়ে। হিমালয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার জলের ধারাও বয়ে যাচ্ছে এই সমতলের মাটির গভীর দিয়ে। এজন্য এই এলাকার পানি বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট সুপেয়। এই পানিকে মিঠা পানিও বলা হয়।

তবে সবসময় দেখা মেলে না সাদা শুভ্র এই কাঞ্চনজঙ্ঘার। মেঘ আর কুয়াশা মাঝে মাঝেই আড়াল করে রাখে তাকে। তখন অপেক্ষা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। এ জন্য অনেকে বলে থাকেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য কপালও লাগে। 

হিমালয় পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ১৮৫২ সালের আগে পৃথিবীতে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলেই ধারণা করা হতো। বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে পৃথিবীতে স্থান করে নিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এর  উচ্চতা ৮ হাজার মিটার বা ২৬ হাজার ফুট। এই পর্বত চূড়ার মোহনীয় সৌন্দর্য দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ভারত নেপাল ভ্রমণ করেন। পঞ্চগড়ে খালি চোখেই দেখা যায় এই পর্বত শৃঙ্গের অপরূপ সৌন্দর্য। কাঞ্চনজঙ্ঘার এই মনোমুগ্ধকর রূপ দেখতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকেরা। স্থানীয়রা বলছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলে সারাদেশের পর্যটকরা ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ায়। তখন একটি উৎসবের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা, শীতের আমেজ আর কুয়াশা এখন পুরো পঞ্চগড়কে আবেশময় করে তুলেছে। কিন্তু বছর জুড়ে তেঁতুলিয়ায় পর্যটকের ভিড় লেগে থাকলেও এখনো পর্যটন কেন্দ্রীক উন্নয়ন ঘটেনি । এ জন্য প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ।

তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১৬৫ কিলোমিটার । এমন সংবাদে কেউ বেড়াতে এলে কপাল ঘষে আর ভোরে ঘুম থেকে ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েই যাত্রা শুরু করবেন। তবে হাতে খুব বেশি সময় নেই। কাঞ্চনবাবুকে দেখতে হলে এখনই নেমে পড়ুন।

এই শীতে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় পর্যটক শূন্য বান্দরবান!

আপনার মতামত লিখুন