শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

সুন্দরবন ঘিরে সাতক্ষীরায় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা। পর্যটনকে ঘিরে এ জেলার রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের একটা বড় অংশ রয়েছে এ জেলায়। রয়েছে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থাপনা। এছাড়া সুন্দরবনকে ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন কেন্দ্রগুলোও আকৃষ্ট করে ভ্রমণ পিপাষুদের।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে, বাকি ৩ হাজার ৯৮৩ বর্গকিলোমিটার ভারতে। বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনকে পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ নামে ভাগ করা হয়েছে। বাগেরহাট ও বরিশাল অংশ পূর্ব বন বিভাগ আর খুলনা ও সাতক্ষীরার অংশ পশ্চিম বন বিভাগ নামে পরিচিত।

সাতক্ষীরা জেলার মোট আয়তন ৩ হাজার ৮৫৮.৩৩ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরও (১ হাজার ৪৪৫.১৮ বর্গকিলোমিটার) বেশি সুন্দরবন। এ বন ঘেঁষে সাতক্ষীরার অবস্থান হওয়ায় সড়কপথ দিয়েই সুন্দরবন দেখা যায়।

একদিকে হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, বানর, হরিণসহ বিভিন্ন পশুপাখির সমাহার, অন্যদিকে, বনের গভীর নিরবতা খুব সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সেই সঙ্গে এ বনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একাধিক আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্যে রয়েছে, কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, দোবেকী ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, ক্যারাম মুরা ম্যানগ্রোভ ভিলেজ, ক্যারাম মুরা পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, আদিবাসী গ্রাম, নৌকা ভ্রমণ সাইট ও শিয়ালকুনি বনায়ন, কৈখালী সীমান্ত ও পাঁচ নদীর মোহনা। যা পর্যটকদের খুব সহজেই আকর্ষণ করে।

সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার মৃত শওকত আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ্ আল মাহফুজ জানান, ২০১৫ সাল থেকে সাতবার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। বনের জীব বৈচিত্র ও প্রকৃতি খুবই ভালো লাগে। যার টানে চার বছরে সাতবার গিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন কটকা, কাচিখালি, কালিরচর, দুবলারচর, ডিমেরচর, হাড়বাড়িয়া, মান্দারবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধু দ্বীপ ঘুরেছেন। চোঁখে পড়েছে অজগর, হরিণ, শূকরসহ বিভিন্ন ধরণের পাখি, ডলফিন, হাজার হাজার বানর, লাল কাঁকড়া। তবে, এখনও বাঘ দেখতে পাননি।

সরকার সুবিধা বাড়ালে পর্যটক আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি জানান, সুন্দরবনকে ঘিরে এ এলাকায় পর্যটন শিল্পের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবনের দেখভালের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। বনের মধ্যে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও জেলেদের বিষ দিয়ে মাছ ধরতে দেখেছেন। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বিষ দিয়ে মাছ ধারায় সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট হয়।

তিনি জানান, স্পট কেন্দ্রগুলোতে ট্রলারযোগে পৌঁছানো গেলেও নামার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কাঁদামাটি বা পানিতে নেমে স্পটে যেতে হয়। এছাড়া জেলেরা বনে ঢুকে হরিণ শিকার করে। এগুলোও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে বন্ধ করতে হবে।

তিনবার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা হাবলুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী শান্ত। একই এলাকার ব্যবসায়ী আলামিন হোসেনও ভ্রমণ করেছেন দুইবার। তারাও অভিযোগ করেন, স্পটগুলোতে ট্রলারে পৌঁছানো গেলেও পর্যটক নামার ব্যবস্থা নেই। কাঁদামাটি বা পানিতে নামতে হয়।

সাতক্ষীরা-খুলনা অংশের বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশ ভ্রমণ করেছেন ৬২ হাজার ৮৯০ জন। এর মধ্যে দেশি পর্যটক ৬২ হাজার ৭২২ জন ও বিদেশি ১৬৮ জন। রাজস্ব আয় হয়েছে ৯১ লাখ ৫০ হাজার ২১৫ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৭১ হাজার ৫১৪ জন পর্যটক। এরমধ্যে দেশি ৭১ হাজার ২১৪ জন ও বিদেশি ৩২৭ জন। রাজস্ব হয়েছে ৮৮ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৪ টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছে ৭০ হাজার ৪৬৫ জন পর্যটক। এর মধ্যে দেশি পর্যটক ৭০ হাজার ২৮০ জন ও বিদেশি ১৮৫ জন। রাজস্ব হয়েছে ৭৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫৭ টাকা।

তিনি জানান, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার ৭৮৮ জন পর্যটক সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ ভ্রমণ করেছেন। এরমধ্যে দেশি পর্যটক ১০ হাজার ৬৫২ ও বিদেশি ১৩৬ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১৫৮ টাকা।

পশ্চিম সুন্দরবনকে নিয়ে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আ ছে কি-না এমন প্রশ্নে বশিরুল আল মামুন জানান, সুন্দরবনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়। এটা অনুমোদন হলে সুন্দরবনের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়বে। এছাড়া প্রকল্পটির মধ্যে পশ্চিম বনবিভাগের কলাবগি ও শেখেরটেক নামক এলাকায় নতুন করে দুটি পর্যটন স্পট তৈরি করা হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে সুন্দরবনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন বাড়বে, তেমনি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে।

তিনি জানান, এছাড়া সুন্দরবনের মধ্যে বিষ দিয়ে মাছ ধরা বা হরিণ শিকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে অবশ্যই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাই এমন দৃশ্য সামনে এলে বিষয়টি তাৎক্ষণিক বনবিভাগকে জানাতে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দনি খান বলেন, সুন্দরবন একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। এখানকার জীববৈচিত্র রক্ষা ও প্রাকৃতিক সৌন্দার্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি সুন্দরবনে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, অপরটি সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প। তীরবর্তী ৩৫ লাখ মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। তাদের জীবন ও জীবিকায়নে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মধ্যে কাজ করা হবে। যাতে করে সুন্দরবনের ওপর চাপ না পড়ে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট না হয়।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন সম্প্রসারণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নতুন পর্যটন কন্দ্রে স্থাপন। এর মধ্যে দুটি পশ্চিম বন বিভাগ ও দুইটি পূর্ব বন বিভাগে করা হবে। এছাড়া বন্যপ্রাণী পাচার রোধ, টেলি যোগাযোগ উন্নয়ন ও ইকোট্যুরিজম সুবিধা বাড়ানো। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনে ইকোট্যুরিজম সুবিধা নেই। আমরা এ সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যাতে পর্যটন হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন যে সম্ভাবনার জায়গা তা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়। পর্যটকদের জন্য ইকোট্যুরিজম সুবিধা বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন পর্যটক বাড়বে অন্যদিকে, সরকারও রাজস্ব বেশী পাবে।

দুই বিমান আনতে বিদেশ যাচ্ছেন ৪৫ জন, ১০ জনের আনন্দ ভ্রমণ!
সিডনি-লন্ডনের আকাশে উড়বে এ থ্রি ফাইভ জিরো-থাউজেন্ড বিমান

আপনার মতামত লিখুন