শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

ধ্বংসের পথে সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

মাহফুজ মামুন
২১ জানুয়ারি ২০২২

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা ঐতিহাসিক স্থানটি কয়েক মিনিটে দেখে হতাশা নিয়ে ফিরে যান। একজন নৈশপ্রহরী জাদুঘর ও রাজার ভিটা দেখাশোনা করেন। সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে পর্যটন এলাকা গড়ে উঠতে পারে। স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়নের কালুপোল গ্রামের চিত্রা নদীর পাড়ে গন্ধর্ব রায় রাজার ভিটা রয়েছে। চিত্রা নদীর পাড়ে কালুপোল রাজার ভিটা। খ্রিষ্টীয় ১৪-১৫ শতকের সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও অনুসন্ধানে রাজা ভিটা নামক প্রত্নঢিবির শনাক্ত হয়। ২০১৮ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর খনন করে দুটি স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্তু পায়।

সুলতানি আমলের প্রত্নবস্তু পাওয়া যায় ইমারতের দেওয়াল, পোড়ামাটির তৈজসপত্র হাঁড়ি, ঘট, থালা, বাটি, কলস, তৈলপ্রদীপ, প্রদীপদানি, ধূপতি, মটকা, গণনার টোকন, শিল-নোড়া, অলংকৃত ইট, চুরি, কড়ি। স্বল্প মূল্যমানের পাথরের গুটিকা, ফলক, বাটখারা, পাথরের পুথি, মৃৎপাত্র পাওয়া যায়। মধ্যযুগের সুলতানি আমলের শহর খলিফাতাবাদ (বাগেরহাট) ও মুহাম্মাদাবাদ (বারবাজার) প্রত্নস্থানে প্রাপ্ত স্থাপত্যিক নিদর্শন ও প্রত্নবস্তুর সঙ্গে রাজার ভিটার সাদৃশ্য মিল রয়েছে। সুলতানি আমলের প্রত্নবস্তুগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

রাজার ভিটার খনন কার্য শেষ হলেও সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। হারিয়ে যাচ্ছে একটি ঐতিহাসিক স্থান। দুটি স্থাপত্য কাঠামোর ধ্বংসাবশেষের দেওয়ালের ইটগুলো খুলে যাচ্ছে। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় মানুষের অবাধ চলাচল ও গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কালুপোল রাজার ভিটা আধুনিকায়ন ও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এটি পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে উঠবে এবং পর্যটকরা ছুটে আসবে। অল্পসংখ্যক পর্যটক রাজার ভিটা দেখতে এলেও হতাশ হয়ে ফিরে যান। সীমানাপ্রাচীর, নতুন সড়ক নির্মাণ, পর্যটকদের বসার স্থান, ছাউনি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, টয়লেটসহ অন্য সব জিনিসগুলো প্রয়োজন। স্থানীয়রা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। বদলে যাবে এখানকার দৃশ্যপট।

গন্ধর্ব রায় রাজা সম্পর্কে ইতিহাস গ্রন্থে তথ্য না থাকলেও স্থানীয়রা এ রাজার ভিটা নামেই জানেন। চার আউলিয়ার অন্যতম হযরত মালেক উল গাউসের সাথে গন্ধর্ব রায় রাজার যুদ্ধ হয়। হজরত মালেক উল গাউস প্রখ্যাত সাধক হজরত  খানজাহান (র.) এর সহচর ও অনুসারী ছিলেন।

জানা যায়, গন্ধর্ব রায় রাজা খ্রিষ্টীয় ১৪-১৫ শতকের দিকে খানজাহান (র.) এর সমসাময়িক কোনো আঞ্চলিক রাজা বা শাসক ছিলেন।

ঝিনাইদহ জেলা থেকে আসা পর্যটক কাজি আলি আহমেদ লিকু বলেন, ইতিহাসসমৃদ্ধ স্থানটি দেখতে এসেছি পরিবার নিয়ে। এখানে পর্যটকদের জন্য সব ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারুন মাস্টার জানান, জাদুঘরটি উন্মুক্ত করলে আমরা ঘুরে দেখতে পারব। পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠলে সরকার রাজস্ব পাবে।

চুয়াডাঙ্গা গড়াইটুপি গ্রামের আব্দুল কাদের বলেন, রাজার ভিটার ইতিহাসটি ধ্বংসের দ্বার প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে। খননসহ অন্য কাজগুলো দ্রুত সময়ে শেষ করার দাবি জানান।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাজু বলেন, রাজার ভিটার ইতিহাস আছে। রাজাদের বসবাস ছিল। তার ইতিহাস খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধন করা গেলে মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরি হবে। দেশ-বিদেশের মানুষ ইতিহাস জানবে সহজে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূঁইয়া জানান, কালুপোল রাজার ভিটা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকা ভুক্ত। এখানে রাজা ও তার দুই মেয়ের করুণ কাহিনীর ইতিহাস রয়েছে। রাজার ভিটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এ ইতিহাসটি সবাইকে জানাতে চায়। পর্যটকদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। পর্যটকদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়টি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।

পর্যটন এলাকায় যেতে লাগবে টিকার সনদ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
একশ কোটি টাকায় পর্যটনকেন্দ্র হচ্ছে হাকালুকি

আপনার মতামত লিখুন