শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

বিশ্বের সবচেয়ে ভ্রমণবান্ধব দেশ অস্ট্রিয়া

পলাশ রহমান, অস্ট্রিয়া প্রবাসী
০৩ জানুয়ারি ২০২১

দেশের নাম অস্ট্রিয়া। দেশের বড় শহর ও রাজধানী ভিয়েনা। দানিউব নদী বিধৌত ভিয়েনা বহু বছর ধরে বিশ্বের এক নম্বর সবাসের উপযোগী শহর হিসাবে অবস্থান ধরে রেখেছে।

সেন্ট্রাল ইউরোপের দক্ষিণ অঞ্চলে দেশটির অবস্থান। আল্পস পর্বতমালার পশ্চিম অংশে অবস্থান বলে শীত প্রধান দেশ। বছরের প্রায় ৮ মাস ঠান্ডা থাকে। ৯টি ফেডারেল রাজ্য নিয়ে দেশটি গঠিত। ৮৩,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটির জনসংখা মাত্র ৮৯,৩৫,১১২ জন। ৪ ভাগের ৩ ভাগই পর্বতমালায় আবৃত।

ইউরোপের ৮ টি দেশের সাথে অষ্ট্রিয়ার বর্ডার পরিবেষ্টিত। এজন্য অষ্ট্রিয়াকে বলা The gate of Europe. দেশগুলো হলো- জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, স্লোভেনিয়া, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরী, স্লোভাক রিপাবলিক , লিখতেনষ্টেইন। সবচেয়ে কাছের দেশ স্লোভাক রিপাকলিকের রাজধানী ব্রাতিসলাভা। রাজধানী ভিয়েনা হতে দূরত্ব  মাত্র ৭৬ কিলোমিটার বা ১ ঘণ্টার রাস্তা।

অষ্ট্রিয়াতে  সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। অষ্ট্রিয়াতে বহু বছর ধরে কোয়ালিশন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি Alexander van der Bellen গ্রীন পার্টি হতে নির্বাচিত। অপরদিকে অষ্ট্রিয়ান পিপলস পার্টির Sebastian kurz চ্যান্সেলর বা সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।  দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বিদ্যমান। একটি ফেডারেল পরিষদ অন্যটি জাতীয় পরিষদ। এখানে ৯টি ফেডারেল রাজ্য রয়েছে। যারা স্বাধীনভাবে কাজ করে। অর্থাৎ সকল কিছুই রাজ্যের মেয়র বা প্রধান ব্যক্তি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রশাসনসহ পুলিশ, হাসপাতাল, সকল সরকারি অফিসসমূহ মেয়র এর তত্বাবধানে পরিচালিত হয়। 

অষ্ট্রিয়া ১৯৫৫ সাল থেকে জাতিসংঘের এবং ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। ভিয়েনা ছাড়া ও অষ্ট্রিয়ার অন্যতম শহর গুলো হলো Salzburg, Innsbruck, Graz, Linz, Voralberg, klagenfurt,Sankt polton ইত্যাদি। রাষ্ট্রীয় বা সরকারি  ভাষা জার্মান।

ভিয়েনা আরেক কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শহর। জাতিসংঘের  নিউ ইয়র্ক, জেনেভার পরে ভিয়েনায় ১৯৮০ সালে দপ্তর স্থাপিত হয়। এটমিক এনার্জির হেড অফিস, ওপেক এর প্রধান কার্যালয় ভিয়েনায় অবস্থিত। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থার অনেক অফিস ভিয়েনায় আছে বলেই অনেক প্রবাস রা এই দেশে বসবাস করছে।

বাংলাদেশীরা ৮০ এর দশক হতে মূলত অষ্ট্রিয়াতে বসবাস করে আসছে। এখন বাংলাদেশ কমিউনিটির বড় অংশ ইউকেতে চলে গেলেও অনেকেই প্রাণের শহর ভিয়েনাতে বসবাস করেন। সোশ্যাল সিকিউরিটি ও জননিরাপত্তা ১০০% বিধায় মানুষ বসবাস করে মজা পায়। কেউ জব না করেও বেকার ভাতাসহ সোশ্যাল সাহায্য, হাউজ বেনিফিট, ফ্রি মেডিসিনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। সেই সাথে আছে ১৮ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ভাতাসহ নতুন বাচ্চা হলে ১ বছর হতে ৩ বছর পর্যন্ত মাতৃকালীন বিশেষ ভাতাসহ সুযোগ সুবিধা।

এখানে বেতনের পয়সা হতে একটা অংশ মেডিকেল ইন্স্যুরেন্সের জন্য কেটে রাখা হয় বলে ডাক্তার দেখাতে বা হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নিতে পয়সা খরচ হয় না। 

অষ্ট্রিয়া অতীতে হাবসবুর্গ রাজাদের অধীনস্থ একটি বিস্তৃত শক্তিশালী সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ভিয়েনা ছিল সেই সাম্রাজ্যের রাজকীয় রাজধানী। ভিয়েনা এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রধান শহর হিসেবে আদৃত। এর রাজকীয় রূপ, অসাধারণ বারোক স্থাপত্য, সঙ্গীত ও নাট্যকলা জগদ্বিখ্যাত।

এদেশের Salzburg  এই জন্ম নিয়েছে সুরের বাজিগর   Wilfgang Amadeous Mozart।  আরেক সুর সম্রাট Ludwig Van Beethoven  এর মতো বিখ্যাত সব মানুষেরা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের মহা খলনায়ক, নাৎসি বাহিনীর ডিক্টেটর  একিভূত জার্মানীর ফিউরার ও সাবেক চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারও এদেশে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন।

টার্মিনেটর খ্যাত হলিউডের সুপার ষ্টার এবং ক্যালিফোর্নিয়া র সাবেক গভর্নর আর্নল্ড সোয়াজনেগার  এদেশের জন্ম নেয়া একজন সন্তান। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) শেষে অষ্ট্রিয়ার  অধীনস্থ বহুজাতিক সাম্রাজ্যটি ভেঙে যায় এবং তার স্থানে একাধিক জাতিরাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। অষ্ট্রিয়া  নিজে একটি ক্ষুদ্র স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নতুন রাষ্ট্রগুলি বাণিজ্য বাধার সৃষ্টি করলে  তার প্রাক্তন বৈদেশিক বাজার এবং জ্বালানির উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দেশটির অর্থনীতি বৈদেশিক সাহায্যের পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অষ্ট্রিয়াতে রক্ষণশীল শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৩০-এর দশকের অর্থনৈতিক মন্দা দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। যে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি ভিয়েনাকে সামাজিক গণতন্ত্রের মডেল হিসেবে গড়ে তুলেছিল, ১৯৩৪ সালে তাদের পতন ঘটে এবং ডানপন্থী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৯ সালে নাৎসি জার্মানি অষ্ট্রিয়াকে নিজেদের সাথে সংযুক্ত করে নেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) জার্মানির পরাজয়ের পর মিত্রশক্তি অষ্ট্রিয়া দখল করে। এসময় মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা এখানে অবস্থান করছিল। ১৯৫৫ সালে অষ্ট্রিয়া আবার স্বাধীন হয় এবং তারপর থেকে দেশটির অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বর্তমানে দেশটি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। রপ্তানি ও পর্যটন শিল্প দেশটির আয়ের বড় উৎস। ভিয়েনার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং অষ্ট্রিয়ার অসাধারণ সৌন্দর্যময় পার্বত্য ভূদৃশ্যাবলীর টানে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন।

দর্শনীয় স্থান সমুহের মাঝে আছে ভিয়েনার Schönbrunn Palace ,Belvedere Palace ,Wasser haus ,হফবুর্গ প্যালেস, সেন্ট স্টেফান্স গির্জা, অপেরা হাউজ অব ভিয়েনা, ভিয়েনা সিটি মেয়র এর অফিস, কার্লস গির্জা, দানিউব নদী সহ অসংখ জাদুঘর।

ভিয়েনার বাইরে অবস্থিত Salzburg এর পুরাতন শহর, Salzzack, মিরাবেল গার্ডেন, Salzburger Land ও Salzkammergut এর লেক সহ অবিরাম সৌন্দর্য মন্ডিত পর্বত মালা।

Tirol প্রদেশের রাজধানী Innsbruckএর Swarwoski Crystal Museum, লিঞ্জ শহরের অদূরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের জার্মানীর ন্যাৎসী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ইহুদীদের জন্য Mathaussen Concentration camp সহ অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

বিশ্বের সব থেকে সুন্দর গ্রাম বলে খ্যাত Hallstatt। যেখানে লেকের স্বচ্ছ পানি ও পাহাড়ের অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়নি এমন লোক পাওয়া যাবে না।

নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য, বাতাসে দুর্গন্ধ
বিমানের সৌদিগামী ফ্লাইট চালু বুধবার

আপনার মতামত লিখুন