বান্দরবানে পর্যটক নিখোঁজের ঘটনায় পর্যটন সংস্থার প্রধান গ্রেপ্তার

পর্যটন সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলামছবি: বর্ষার ফেসবুক থেকে নেওয়া
বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক ভ্রমণ পরিচালনাকারী পর্যটন সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ওরফে বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পর্যটকদের নিয়ে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড় ভ্রমণ শেষে আলীকদমে ফিরে আসার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় আলীকদম থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর পাহাড়ি ঢলে নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমানের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শনিবার সকালে হাবিবুর রহমান বর্ষা ইসলামের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনকে আসামি করে আলীকদম থানায় মামলা করেন। মামলায় নিয়মকানুন অনুসরণ না করে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছে বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে।
গত বুধবার আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড় এলাকায় ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে একটি পাহাড়ি ঝরনায় তিনজন পর্যটক ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জুবাইরুল ইসলাম ও শুক্রবার স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান চৌধুরী নামে একজন পর্যটক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে গত ৮ জুন ট্যুর এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনায় দুই দলে ভাগ হয়ে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পর্যটকদের প্রথম দলটি ফিরে আসার পথে স্মৃতিসহ তিনজন শামুক ঝিরি ঝরনায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, বর্ষা ইসলামের পরিচালিত ট্যুর এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে ভ্রমণের ওপর আকর্ষণীয় পোস্ট করেন। ওই পোস্ট দেখে তাঁর মেয়ে স্মৃতি আক্তার আলীকদম যান। বৈরী আবহাওয়ায় ঝুঁকির বিষয়টি না জানিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের নিয়ে গিয়ে বর্ষা ইসলাম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তা ছাড়া স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড পর্যাপ্ত সংখ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাননি তাঁরা। স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ছাড়া পাহাড়ি পরিবেশে তাঁর অনভিজ্ঞ মেয়ে স্মৃতি আক্তারসহ পর্যটকেরা আলীকদমের দিকে ফিরছিলেন। শামুকঝিরি ঝরনা এলাকায় এসে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্মৃতি আক্তার ও সঙ্গে থাকা হাসান চৌধুরী এবং জুবাইরুল ইসলাম ভেসে যান। ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের অবহেলা, দায়িত্বহীন ও অদক্ষতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, কোনো পর্যটক উপজেলা সদরের বাইরে ভ্রমণে গেলে উপজেলা পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ট্যুর এক্সপার্টের বর্ষা ইসলাম ১২ জন পর্যটকের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ৩৩ পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েছিলেন সঙ্গে। ১২ জন ট্যুরিস্ট একজন গাইড নিয়ে আরও দূরে ভ্রমণে গেছেন। ২২ জন পর্যটককে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ জন্য দুর্ঘটনায় পড়ে তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনো একজনের কোনো হদিস মিলছে না।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের অন্য ব্যক্তিদেরও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বর্ষা ইসলামকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন