পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধারের বছর হবে ২০২২
নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে লম্বা সময় ধরে থমকে ছিল বিশ্ব। সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের সব দেশই নিয়েছিল বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ করে সীমান্তগুলোয় আরোপ করা হয় কড়াকড়ি। বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ ছিল সব ধরনের পর্যটন কেন্দ্র। ফলে দেখা গেছে, মহামারীর কারণে যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার অন্যতম হলো পর্যটন খাত। কভিড প্রতিরোধী টিকার আবিষ্কার ও প্রসারে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। অনেক দেশেই তুলে নেয়া হয়েছে সীমান্তসংক্রান্ত সতর্কতা। পর্যটন কেন্দ্রগুলোও মুখর হচ্ছে পর্যটকদের পদচারণায়। খবর খালিজ টাইমস।
খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চলতি বছরটি হবে পর্যটন খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। দুই বছর ধরে জমিয়ে রাখা পরিকল্পনাগুলো এবারই বাস্তবায়ন করতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা। এরই মধ্যে অনেক আন্তর্জাতিক গন্তব্য পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে, শিথিল হয়েছে কোয়ারেন্টিন নীতিমালা। পর্যটকদের প্রত্যাশা এ বছর পূরণ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এরই মধ্যে মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে বিশ্বের পর্যটন খাত। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের মোট অবদানের পরিমাণ হবে ৮ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার, ২০১৯ সালে যা ছিল ৯ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন। কিন্তু ২০২০ সালে মহামারী শুরু হলে রীতিমতো ধস নামে এ খাতে। প্রায় ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার লোকসান গুনতে হয় বিশ্বের পর্যটন খাতকে। ডব্লিউটিটিসি বলছে, যদি পুনরুদ্ধারের গতি বাড়তে থাকে তাহলে প্রাক-মহামারীকালের তুলনায় বৈশ্বিক জিডিপিতে এ খাতের অংশগ্রহণ বাড়বে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালাদারি ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল সার্ভিসেসের ম্যানেজার রাজা মীর ওয়াসিম বলেন, পর্যটন খাত মহামারীর সবচেয়ে ভয়াবহতা পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পর্যটন খাতের পুনরুদ্ধার হতে যাচ্ছে। কারণ বিভিন্ন দেশের সীমান্তগুলো খুলে গেছে, কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়সীমাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা বিভিন্ন দেশে ঘুরতে বা বেড়াতে শুরু করেছেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার মতো অনেক দেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এটা বলাই যায় যে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।
খাতের পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বাড়ছে কর্মসংস্থানও। গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক কর্মসংস্থানে পর্যটন খাতের কর্মীর সংখ্যা ৩৩ কোটি ছাড়াবে, যা মহামারীর আগের সময়ের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশ কম। ২০২০ সালের তুলনায় এ সংখ্যা ২১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। ডব্লিউটিটিসি বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে পর্যটকদের জন্য পরিস্থিতি সহজ করতে বলেছে। বিশেষ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যেসব কাজ করা যায় তা সেভাবে করতে বলা হয়েছে।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জুলিয়া সিম্পসন বলেন, সরকারগুলোর উচিত গোটা দেশের ওপর নিরাপত্তাঝুঁকির দায় চাপিয়ে না দিয়ে পর্যটকদের বিষয়ে মনোযোগী হওয়া। পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকা নেয়া একজন সুস্থ ব্যক্তিকে স্বাভাবিকভাবে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া উচিত। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে বিধিনিষেধসহ নানা কারণে বিশ্বের পর্যটন খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থান আর অর্থনীতি, দুই ক্ষেত্রেই ২০২২ সালকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন