চরের অবহেলিত মানুষের পরমাত্মীয়

ডা. বোরহান উদ্দিন
১৯৯১ সালের ঘটনা, আমি তখন শিশু। আমার নানু খুব অসুস্থ। তখন গ্রামে কোনো ডাক্তার ছিলেন না। অসুখ বেড়ে গেলো। নানুকে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলো। নোয়াখালী শহরে ডা. বোরহান উদ্দিন আছেন, সব তিনি দেখবেন। তিনি আমাদের নানুদের পরিবারের বড় আশ্রয়। নানুকে তিনি রক্ত দিলেন। তখন রক্ত দান খুবই দুর্লভ বিষয়।
সেই শৈশব থেকেই দেখছি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটার ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের একজন আপন মানুষ ছিলেন ডা. বোরহান উদ্দিন। কতো শত মানুষকে তিনি রক্ত দিয়েছেন তার হিসাব তিনি নিজেও জানেন না।
ডা. বোরহান আমাদের চরবাটা খাসের হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের খুব সম্ভবত ১৯৭৫ সালের ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই হিসেবে তিনি আমাদের স্কুলের বড় ভাই। ২০১০ সালে স্কুলের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে তিনি নিভৃতে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা করেছেন। ২০০৮ সালে বিজয় স্যারের মৃত্যুর পর স্যারের স্মরণিকা 'মশালচি' প্রকাশিত হয়। মশালচি প্রকাশে তিনি সবসময় খবর নিতেন, তাড়া দিতেন। তখন নিজে থেকে অর্থ দিয়েও সহায়তা করেছেন। গত ২৭ বছরে তাঁকে এরকম অসংখ্য সামাজিক কাজে নিভৃতে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি। কিন্তু কখনোই দেখিনি তিনি প্রচার চেয়েছেন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমার বাবা যখন মারা গেলেন তখন একদিন ভোরে তিনি সিএনজিতে করে আমাদের বাড়ি এলেন। সাথে নিয়ে এলেন গুঁড়ো দুধ, তেল, ময়দা, পলাওয়ের চালসহ নানান রকম নিত্যপণ্য। তাছাড়া বাবা অসুস্থ থাকা অবস্থায় তিনি প্রায় প্রতিদিন বাবার খোঁজ নিতেন।
তিনি আত্মীয়তার সম্পর্কে কোনো আত্মীয় কিনা জানি না, তবে এটা জানি আমাদের চরের অবহেলিত মানুষের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ পরমাত্মীয় ডা. বোরহান উদ্দিন।
আপনার মতামত লিখুন