শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

আসুন, একটু মানবিক হই

মাজহার মুনতাসসির
২৯ জুলাই ২০২০

ঈদ মানে হাসি, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে অবিরাম আনন্দ, ঈদ মানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কিছুটা সুখের সময় কাটানো। বিশ^ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান দুটি খুশি হচ্ছে রমজানের ঈদ আর কোরবানির ঈদ। কিন্তু গত হওয়া রমজানের ঈদের আনন্দ করোনা দাপটে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের মাঝে। করোনার প্রভাবে অনেকে চাকরি চলে গিয়েছে, অনেকের আয় কম গেছে, চাকরি থাকলেও বেতন কম দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বছরের দুটো বোনাসের টাকা দিয়ে ঈদ উদযাপন করবে। সেই বোনাস দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো। কোম্পানিগুলোর দাবি করোনার কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ছিল তা স্থবির হয়ে গেছে। এতে আয় কমে যাওয়ায় কর্মীদেরকে স্বাভাবিক বেতন দিতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র সরকারি চাকুরেরা ছাড়া আর কেউ তেমন ভালো নেই। 

শুধু স্বাস্থ্যগত সংকটই নয়, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে দেশের শ্রমবাজারেও। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জরিপ বলছে, করোনাকালীন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে চাকরি হারাতে যাচ্ছেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ আর এতে ক্ষতির মুখে পড়বেন প্রায় ৬ কোটি জনগোষ্ঠী। যাদের মধ্যে গার্মেন্টস, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্সসহ আছে আরো অনেক খাত। চাকরি হারানো বিপুল এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কর্মহীন প্রবাসী শ্রমিক ও বেতন কাটছাট হওয়া মানুষও। এর বাইরেও রয়েছে বেকারত্ব, আংশিক বেকারত্ব ও কাজ হারিয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীরাও। রাতারাতি ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ নেই জানিয়ে, পরিকল্পিত উপায়ে কর্মসংস্থান বাড়নোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে। আইএলও বলছে, মহামারিতে তারা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেকার, সেই সঙ্গে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে তাদের। এতে তাদের চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

সামনে আসন্ন কোরবানির ঈদ। অনেকে হয় তো বিগত সময় কোরবানি করে আসলেও এবার সমস্যার কারণে কোরবানি দিতে পারবেন না। যারা বেসরকারি চাকুরি করছেন তারা বোনাস বা বেতন ঠিক মত পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। তার সাথে যোগ হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তাদের মাঝে নীরব একটা হাহাকার বয়ে যাচ্ছে। হয় তো মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। তবে এই সময়ে তাদের প্রতি সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের মানবিকতা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।

যাদের সামর্থ আছে তারা একটু আপনার প্রতিবেশির খোঁজ নিন। তার ঘরে খাবার আছে কি না, প্রয়োজনীয় দ্রব্য আছে কি না। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, যে তার প্রতিবেশিকে অভুক্ত রেখে খাবার খায় সে আমার উম্মত নয়। সাহাবীরা রাসুলকে জিজ্ঞেস করলেন আমরা প্রতিবেশি কিভাবে নির্ণয় করব। রাসুল বলেন, তোমার আশেপাশের ৪০ বাড়ি পর্যন্ত প্রতিবেশি বলে গণ্য হবে। তাই আসুন, করোনার ক্রান্তিলগ্নে আমরা একটু মানবিক হই। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই সময়টাতে যারা সমস্যায় আছে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেন না তার পাশে দাঁড়াই। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে সাহায্য করার বিষয়টি সেলফিবাজিতে রূপান্তর না হয়। তাতে সাহায্যপ্রার্থীরা বিব্রত হন। এ বিষয়ে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দান করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা অবলম্বন করো। দান করো এমনভাবে, তুমি ডান হাতে কি দান করছ তা যেন তোমার বাম হাত না বুঝতে পারে।

লেখক : সাংবাদিক

করোনা : পর্যটন খাতে ক্ষতি ৩২ হাজার কোটি ডলার
ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ১০ লাখ টাকা পেলেন চট্টগ্রামের মাছচাষী নাজিম

আপনার মতামত লিখুন