শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

এ এইচ এম খায়রুল আনম সেলিম : ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব

মো. নুর নবী
৩১ ডিসেম্বর ২০২২
এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী

এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী

অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর বাবার নির্দেশ ছিল 'sincerity of purpose and honesty of purpose'-এই গুণাবলী থাকলে জীবনে পরাজিত হবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই নির্দেশ হুবহু অনুসরণ করেছেন। অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী’র জীবন ও কর্মে এই নিদের্শনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করেছেন এবং করেন। এই মানুষটার পুরো হৃদয় জুড়ে বঙ্গবন্ধুকে পাওয়া যায়। তাঁর সংস্পর্শে এসে অনুভব হয় বঙ্গবন্ধুকে কতটা ভালোবাসা যায়, দেশকে এবং দেশের মানুষকে কতটা ভালোবাসা যায়। 

অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম সেলিম-এর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১লা জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বর্তমান সুবর্নচর উপজেলার চরবাটায়। ১লা জানুয়ারি তাঁর ৭৫তম জন্মদিন। (সৌভাগ্যবশত আমার জন্মদিনও ১ জানুয়ারি।) পৈত্রিক সূত্রেই তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও জীবনের ৭৪টি বছর অতিবাহিত করেছেন খুবই স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে। এস.এস.সি. পর্যন্ত কাটিয়েছেন নিজ গ্রামের নৈস্বর্গিক পরিবেশে। মাধ্যমিক এবং বি.এ. সম্পন্ন করেন যথাক্রমে চৌমুহনী কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। তারপর অর্থনীতিতে এম.এ. পাশ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া প্রথম ছাত্র। 

জনাব খায়রুল আনম আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন নোয়াখালীর বিখ্যাত চৌমুহনী কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেটা আরো পোক্ত হয়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) প্রথম সাহিত্য সম্পাদ নির্বাচিত হন। ছাত্র জীবন শেষ করে নিজ গ্রামের হাল ধরেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগদেন মাতৃভূমি রক্ষার লড়াইয়ে। কাজ করেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নোয়াখালী জেলার কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “গরীব কৃষক ও শ্রমিকের মুখে যতদিন হাসি না ফুটবে ততদিন আমার মনে শান্তি নাই। এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলাদেশের কৃষক মজুর ও দুঃখি মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।” বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে একজন কর্মী হিসেবে জনাব খায়রুল আনম নিজেকে নিয়োজিত করেন দেশ গড়ার সংগ্রামে।

মার্কিন জেনারেল  Douglas MacArthur একজন আদর্শ নেতার গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, “A true leader has the confidence to stand alone, the courage to make tough decisions, and the compassion to listen to the needs of others. He does not set out to be a leader, but becomes one by the equality of his actions and the integrity of his intent.” ডগলাস ম্যক-আর্থারের বর্ণিত আদর্শবান নেতার গুণাবলী অধ্যক্ষ খায়রুল আনমের রাজনৈতিক জীবন ও কর্মে সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। মানুষের হৃদয়ে কতটুকু জায়গা করে নিয়েছেন তিনি- তার একটি উদাহরণ হচ্ছে প্রায় ৩৭ বছর ধারাবহিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে (তৃতীয় মেয়াদে) নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রতদ্বিন্দ্বিতা করেছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। 

১৯৮১ সালে শেরেবাংলা নগরে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় ভাষণে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি তো নেতা নই, সাধারণ মেয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আপনাদের নিয়ে আমি নিরলস সংগ্রাম চালিয়ে যাব...।’ শেখ হাসিনার এরূপ চিন্তা ও কর্মের স্পষ্ট প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় অধ্যক্ষ সেলিম-এর রাজনৈতিক জীবন ও কর্মের প্রতিটি পারতে পারেত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কর্মী হিসেবে জীবনের দীর্ঘ সময় নিরলস পরিশ্রম করেছেন; এখনও করছেন। 

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম গ্রন্থের ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, “আমি রাজনীতি করি এদেশের মানুষকে ভালোবেসে। দেশের শহর, গ্রাম যেখানেই আমি সফরে যাই মানুষের দুঃখ-কষ্ট মনকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে।” অধ্যক্ষ খায়রুল আনমের রাজনীতির ভাষাও তাই। দেশের মানুষের কল্যান ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাস্তবায়ন’ই তাঁর রাজনৈতিক ব্রত। একক কর্তৃত্বের রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করেন নি কখনো। তাঁর ভাষায়- “আমি দিয়ে রাজনীতি হয় না, রাজনীতি হয় আমরা দিয়ে।” (দৈনিক প্রথম আলো, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২)। সম্ভবত, এজন্যই তিনি নোয়াখালীর গণমানুষের হৃদয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন; কেবল ব্যানার-পেস্টুনে নয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছেও এজন্য তাঁর এতো গ্রহণযোগ্যতা। 

জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম গ্রন্থে লিখেছেন, “ফাঁসির রজ্জুকে যিনি উন্নত মস্তকে ধারণ করতে এগিয়ে গেছেন বহুবার, শুধু এই জাতির জন্য এ দেশের মানুষের জন্য! সেই মহান মানুষের ভালোবাসার জাতি আর মানুষই আমার কাছে তাঁর বড় আমানত। আর সেই আমানতকে শিরোধার্য করেই আমি জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত থাকতে চাই সোচ্চার, এদেশের মানুষের অধিকারের প্রশ্নে, তাঁদের স্বার্থের প্রশ্নে।” বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার এই মহান জাতির কল্যানে স্বীয় কন্যা শেখ হাসিনা যেমন নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন; শেখ হাসিনার আদর্শ কর্মী হিসেবে জনাব সেলিম একই পথের যাত্রী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

এ এইচ এম খায়রুল আনম একজন স্বপ্নচারী মানুষ, যাঁর স্বপ্নের পরিসর অনেক বিস্তৃত। সম্ভবত এ কারণেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রথম সারির ছাত্র হওয়া সেত্তও সরকারি কোনো চাককুরীতে জড়িত না হয়ে বেছে নিয়েছিলেন নিজ গ্রামকে। পল্লী গ্রামের দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বটবৃক্ষ হয়ে। যার ছায়ার হাত অনেক বিস্তৃত। তিনি একজন প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী এবং দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হলো একজন নিরহঙ্কারী মানুষ হিসেব সর্বমহলে সমাদৃত তিনি। জনাব সেলিম নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলার বিখ্যাত সৈকত সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। নোয়াখালীর অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বড়ির নেতৃত্বে থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার উন্নয়নে। এতিম বাচ্চাদের কথাও তিনি ভুলেন নি। প্রতিষ্ঠা করেছেন এতিমখানাও। ব্যক্তি জীবনে তিনি স্বীয় ধর্মের প্রতি অনুগত এবং ধর্মীয় নির্দেশাবলী শ্রদ্ধার সাথে পালন করেন।

অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী তিন সন্তানের জনক। তাঁর একমাত্র পুত্র জোবায়ের আনম চৌধুরী পেশায় একজন ডাক্তার- যিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রয়্যাল ব্ল্যাকবার্ন হসপিটাল-এ একিউট মেডিসিন বিভাগরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছেন।

লেখক: মো. নুর নবী, শিক্ষক ও গবেষক

আলোর মুখ দেখেনি ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট
ডিএলএস ডিজির সঙ্গে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের শুভেচ্ছা বিনিময়

আপনার মতামত লিখুন