বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ঘুরে দাঁড়াবে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা দেখছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বাগেরহাট ঘিরে পর্যটনশিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার ও বন বিভাগকে সমন্বিত ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

প্রকৃতি ও প্রত্ন পর্যটনে সমৃদ্ধ বাগেরহাটের দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর। জেলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পুরাকীর্তি ও প্রত্নতত্ত্ব। আছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা, ইপিজেড, চিংড়ি, সবজিসহ কৃষিপণ্যের প্রাচুর্য।

সুন্দরবন ছাড়াও ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রতিদিন কয়েক শ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। বন বিভাগ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সুন্দরবনের বাগেরহাট অংশে পর্যটক এসেছেন ১ লাখ ২০ হাজার। যেখান থেকে রাজস্ব এসেছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই সময়ে ষাটগম্বুজ মসজিদে এসেছেন ১ লাখ ৮০ হাজার দর্শনার্থী। রাজস্ব আয় হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।

সেতু চালুর ফলে দূরত্ব ও আসা-যাওয়ার সময় কমে আসবে। ঢাকাসহ অন্য অঞ্চলের পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়বে এসব পর্যটন এলাকায়। এতে পর্যটকের পাশাপাশি এ অঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রিক বিনিয়োগও বাড়াবে, যা স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

সুন্দরবনে দীর্ঘ সময় ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণসহায়তা দিচ্ছে পাগমার্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে নিঃসন্দেহে সুন্দরবনে পর্যটক বাড়বে। কিন্তু সে জন্য আমাদের সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে এখনো ততটা প্রস্তুতি নেই বলা চলে। বাড়তি পর্যটককে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না গেলে তা বিপর্যয় তৈরি করবে, যেমনটা হচ্ছে কক্সবাজারে। এ জন্য সমন্বিত ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে সরকার ও বন বিভাগকে।’

পদ্মা সেতু চালু হলে একজন অফিস শেষ করে বৃহস্পতিবার বিকেলে রওনা দিয়ে রাত ও শুক্রবার দিনে সুন্দরবনে ট্যুর করে আবার ঢাকায় ফিরে যাবেন। সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি মানুষ এমন ট্যুরে আগ্রহী হবেন। অনেক কটেজ তৈরি হবে। কমিউনিটি বেজ ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সুন্দরবনে গহিনে ভ্রমণের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। শীত মৌসুমে নদ-নদী শান্ত থাকায় মূলত সুন্দরবনে সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের আগমন হয় ওই সময়ে। এ সময় ৩৫ থেকে ৪০টি ট্যুরিস্ট লঞ্চ ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে সুন্দরবনে যায়। আগামী বছর আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আরও ৫টি ট্যুরিস্ট লঞ্চ এ যাত্রায় যোগ হবে জানিয়ে সুন্দরবন গাইড ট্যুরের মালিক গোলাম রহমান বলেন, পর্যটন একটি সামগ্রিক ব্যবসা। এর প্রসারে স্থানীয় জনগোষ্ঠী লাভবান হবে। প্রতিটি লঞ্চে সরাসরি ৫ থেকে ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কারণে আগের চেয়ে কয়েক গুণ পর্যটক বেশি আসবেন। তবে বনের ওপর চাপ পড়বে না। আমাদের আরও নতুন চারটি পর্যটনকেন্দ্র চালু হচ্ছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও ইকো কটেজসহ বিভিন্ন ধরনের পর্যটনসুবিধা গড়ে উঠেছে।’ এতে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা তাঁর।

সম্প্রতি ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাটে নতুন করে আরও ১৬৩টি প্রত্নস্থানের সন্ধান মিলেছে। ষাটগম্বুজ মসজিদ, মাজারসহ এসব স্থানে বাড়বে পর্যটকের চাপ। তাই যথাযথভাবে এগুলোকে সংরক্ষণ ও তুলে ধরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বাগেরহাটের এভারগ্রিন বার্ড পার্কের মহাপরিচালক মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে মানুষ খুব সহজেই এই অঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। কক্সবাজার, সিলেট বা পার্বত্য অঞ্চলের মতো আমাদের সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদও কিন্তু পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক আসতে চান। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এখন পর্যটকেরা সহজেই আসতে পারবেন। পর্যটক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এখানে হোটেল, মোটেল, কটেজসহ নানা খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। এর সঙ্গে আমরা ভিলেজ ও এগ্রো টুরিজম বিকাশে কাজ করতে চাই। এতে বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি বিনিময়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ বলেন, পদ্মা সেতু যে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, তাতে দর্শনার্থী সংখ্যা ধারণার চেয়েও বেশি হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ষাটগম্বুজের সামনের বিশ্রামাগার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদসংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে হাঁটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে হজরত খানজাহান (রহ.)–এর মাজার মোড়ে তিন তারকা মানের একটি হোটেল নির্মাণের কাজ চলছে, যার প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে লাগবে মাত্র ৬ ঘণ্টা
পদ্মা সেতু চালু : পর্যটনে সম্ভাবনার নতুন দ্বার

আপনার মতামত লিখুন