মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

মদ আমদানি শুল্ক : পর্যটন করপোরেশন এনবিআর টানাপড়েন

অনলাইন ডেস্ক
২৫ আগস্ট ২০২২

মদ-বিয়ার-হুইস্কি আমদানির শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে টানাপড়েনে দেশের বাজার সয়লাব হয়েছে ভেজাল মদে। পর্যটন করপোরেশন বাল্ক পরিমাণে আনা মদের দাম ধরে শুল্ক পরিশোধ করতে চাইলেও এনবিআর চায় বিশ্বের খুচরা বাজার দরের শুল্ক। এতে করে এসব পানীয় আমদানিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে, আমদানিও প্রায় বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিরসনে বেসামরিক বৈঠকে বসবে বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ বিভাগ ও পর্যটন করপোরেশন।

চলতি বছরের ২২ জুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে মদজাতীয় পানীয় আমদানির শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে। ওই সুপারিশের আলোকে ৩০ আগস্ট সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

অর্থ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বিশ্ববাজার থেকে পাইকারি দামে বাল্ক পরিমাণে মদ-বিয়ার আমদানি করে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশ্ববাজারে মদ-বিয়ারের খুচরা দাম হিসাব করে শুল্ক আদায় করতে চায়। পর্যটন করপোরেশন এলসি করে পণ্য আমদানি করলেও এনবিআর তা মানতে নারাজ। এসব নিয়ে সরকারের সংস্থা দুটির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন মদজাতীয় পানীয় আমদানি করে থাকে। পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, মদ বা হুইস্কি আমদানির ক্ষেত্রে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, অগ্রিম আয়কর, আগাম কর (এটি) ল্যান্ডিং চার্জ, ইন্সুরেন্স, মূল্য সংযোজন কর মিলে ৪২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। একই ভাবে বিয়ার আমদানির ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ মোট ৩১০ শতাংশ সরকারি শুল্ক দিতে হয়।

বৈধপথে আনা মদের দাম বেশি হওয়ায় বেসরকারি বার-ক্লাবের মালিকরা গ্রে মার্কেট (একটি দেশের উৎপাদিত পণ্য অনুমতি ছাড়া অন্য দেশে বিক্রি) থেকে মদ সংগ্রহ করে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। বিদ্যমান ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক ও অন্যান্য করহার কমানো হলে এসব বার-ক্লাবের মালিকরা বৈধপথে আসা মদ্য পানীয় ক্রয়ে আগ্রহী হবে। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। এসব কিছু বিবেচনা করে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় আমদানিতে শুল্ক কমানোর বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও মন্ত্রণালয়কে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। 

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ লাখ ডলারের মদ-বিয়ার আমদানি করেছে। তার আগের অর্থবছরে আমদানি করেছিল ১১ লাখ ডলারের পণ্য। শুল্কের পরিমাণ বেশি ও করোনার মধ্যে বৈধপথে মদ-বিয়ার আমদানি কমে যাওয়ার কারণে অবৈধ পথে ভেজাল মদ-বিয়ার দেশে আসছে। গ্রে মার্কেটের মাধ্যমে আসার ফলে এসব পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ নেই। দাম কম হওয়ার কারণে অনেকেই গ্রে মার্কেট থেকে কেনা মদ-বিয়ার-হুইস্কি পান করছে। ভেজাল পানীয় পান করে গত দুই বছরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। মদপানে মারা গেছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়েকজন রাশিয়ান কর্মকর্তা। বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পর্যটন করপোরেশন বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে মদ্য পানীয় ক্রয়ের সুবিধা প্রদান করা হলে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি দূর হওয়ার পাশাপাশি সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়বে। আমদানি শুল্ক না কমালে বৈধপথে আমদানির পরিবর্তে মানহীন ভেজাল পণ্যেরও প্রসার ঘটবে। একই সঙ্গে দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের প্রিভিলেজ পারসন ঘোষণা করে মদ্যজাতীয় পণ্যের প্রাপ্যতা কার্ড ইস্যু করায় তারা সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য পাবেন। অবৈধ ও মানহীন পণ্যের প্রতি আগ্রহ থাকবে না। ফলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। রাজস্ব আয় বাড়বে। 

দেশি এবং বিদেশি বিয়ারে রয়েছে কর হারের বৈষম্য। স্থানীয় পণ্য হওয়ার কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হান্টার নামের বিয়ারের ওপর শুল্কহার নির্ধারণ করেছে ৩৫ শতাংশ। আর হ্যানিকেন নামে একটি বিদেশি বিয়ারের ওপর শুল্ক ধরা হয়েছে ৩৪৫ শতাংশ। করহারের এই বৈষম্য কমানোর দাবি জানিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলি কদর বলেন, আমদানি শুল্ক বেশি হওয়ার কারণে অনেকেই কালোবাজার থেকে মদ-বিয়ার সংগ্রহ করে। আমরা ভেজাল মদ-বিয়ার-হুইস্কি বিক্রি বন্ধ করতে সরকারকে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছি।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং, মধুমতীর তীরে নতুন পর্যটন কেন্দ্র
ওয়ালটন কাপ বেসবল চ্যাম্পিয়নশিপ সেপ্টেম্বরে

আপনার মতামত লিখুন