রোববার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পুরস্কার পিপিএম পদক পেলেন নেজাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম-সেবা) গ্রহন করেছেন চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।  সোমবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মেডেল পরিয়ে দেন। গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, সততা, কর্মনিষ্ঠা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং সেবামূলক কাজের বিবেচনায় এ পদক দেওয়া হয়।

জানা যায়, চট্টগ্রামের সদরঘাট থানা এলাকা এক সময় সন্ত্রাস ও মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত ছিল। মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন এখানে যোগদানের পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির পথে হাঁটতে শুরু করে। চিরুনী অভিযান চালিয়ে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীদের পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় কয়েক কোটি টাকার মাদক ও অস্ত্র। মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত বরিশাল কলনীতে এখন আর মাদক নেই। পুরো কলনীতে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন উদ্যোগ নিয়ে মাদকের আখড়ায় নির্মাণ করেছেন স্কুল-মসজিদ-খেলার মাঠসহ নানা প্রতিষ্ঠান। তার কর্মদক্ষতায় সদরঘাট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম, গ্রাম পুলিশ সদস্যরা প্রতিটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।

২০০৪ সালে শিক্ষানবীশ সাব ইন্সপেক্টর পদে কর্মজীবন শুরু করেন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। কর্মজীবনে তিনি বান্দরবান, বেগমগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন থাকায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১২ জুন পরিদর্শক হিসেবে পদন্নতী পান মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। ২০১৫ সালে তিনি আইজিপি পদক এবং ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ পরিদর্শকের পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালনের সময় একাধিকবার পুরস্কৃত হন।

সাহসী এই পুলিশ অফিসার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ মডেল থানায় দায়িত্ব পালনের সময় চাঞ্চল্যকর বহু মামলা তদন্ত করেন। তার নেতৃত্ব গ্রেফতার হয় সেই সময়ের দুর্ধর্ষ বহু চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। তখন সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ্যসহ দুই শিক্ষকের গ্রেফতারের ঘটনায়। এই কলেজটি এক সময় ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। টাকা ছাড়া এখানে কিছুই হতো না। ভর্তির সময় চলতো লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য। ওই সময় মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন ভর্তি পরীক্ষা চলকালে হাতে নাতে টাকাসহ অধ্যক্ষ ও এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেন। হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে তিনি তখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল কলেজ এখন দুর্নীতিমুক্ত।

সম্প্রতি বরিশাল কলনীকে মাদকমুক্ত ছাড়াও চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর একটি মামলার তদন্ত করে ভূয়সী প্রসংশা কুড়িয়েছেন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। গ্রেপ্তারের পর নিজের নাম গোপন করে চাচাত ভাইকে ফাঁসিয়ে দেয় স্বপন দাশ নামে এক ব্যক্তি। মিথ্যা পরোয়ানায় চার মাস কারাভোগও করেন নিরীহ অমর দাশ। শেষে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। গ্রেফতার হয় ধূর্ত অপরাধী স্বপন। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রতারণা করে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারায় তার বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলা হয় নগরীর সদরঘাট থানায়। ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে স্বপনকে তিন বছর কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাত্র ছয় কার্যদিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে করা মামলাটির নিষ্পত্তি হয়েছে, যা চট্টগ্রামের আদালতের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের যে মামলায় স্বপন দাশ প্রথমে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সে মামলায় তিনি ২২ বছর দণ্ডিত। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আল ইমরান খানের আদালত মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এটি পুলিশ ও বিচার বিভাগের জন্য একটি মাইলফলক মামলা। এ মামলার রায়ে বিচার বিভাগের কাজের গতিশীলতা যেমন প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি একজন নিরীহ ব্যক্তিকে ২২ বছরের সাজা থেকে মুক্ত করায় পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন সদরঘাট থানা এলাকাকে অপরাধমুক্ত করা ছাড়াও নানা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিনি মানুষকে সচেতন করছেন। এলাকার তরুণ-যুবকদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করছেন, তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খেলাধুলার সরঞ্জাম। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষের বন্ধু।  

বাণিজ্য মেলায় অটিস্টিকরা বিনামূল্যে বিনোদন পেয়ে আনন্দিত
পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পুরস্কার পিপিএম পদক পেলেন কাজী লিমা

আপনার মতামত লিখুন