বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ভ্রমণ করতে হলে টিকা নিতে হবে

অনলাইন ডেস্ক
২৮ ডিসেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে আগেই। এখন এই টিকাদান কর্মসূচির পরিসর বাড়ছে। তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন দেশের নাম। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হওয়ার একটা আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে আগের মতো বেড়ানো, সিনেমায় যাওয়া থেকে শুরু করে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফেরার এই আশা পূরণ হওয়া এত সহজ নয়। লাগবে করোনা টিকা গ্রহণের প্রমাণপত্র।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা টিকা দেওয়া শুরুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। বিশেষত ভ্রমণ পিপাসুরা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন, করোনার কারণে যারা একেবারে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু চাইলেই যে কেউ আগের মতো ভ্রমণ শুরু করতে পারবে না। এ জন্য দরকার হবে ভ্যাকসিন পাসপোর্টের। অর্থাৎ, ভ্রমণে ইচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই করোনা টিকা নিতে হবে এবং তার প্রমাণপত্র থাকতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটিকে সহজ করতে এরই মধ্যে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন পাসপোর্ট সম্পর্কিত স্মার্টফোন অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ টেস্ট ও ভ্যাকসিন গ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য থাকবে এ ধরনের অ্যাপে। এই অ্যাপকে যেন কনসার্ট ভেন্যু, সিনেমা হল, অফিস, পর্যটন কেন্দ্র ও বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রমাণপত্র হিসেবে কাজে লাগানো যায়, সে কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করা হচ্ছে।

এ লক্ষ্যে জেনেভাভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দ্য কমন প্রোজেক্ট ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের উদ্যোগে গঠিত দ্য কমন ট্রাস্ট নেটওয়ার্ক বেশ কিছু এয়ারলাইনস এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও আরুবা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তিতে থাকা এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাথে প্যাসিফিক, জেটব্লু, লুফথানসা, সুইস এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও ভার্জিন আটলান্টিক। এই উদ্যোগের আওতায় এরই মধ্যে কমনপাস নামের একটি অ্যাপ এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা কোভিড-১৯ পরীক্ষা, টিকা গ্রহণের প্রমাণ হিসেবে হাসপাতাল বা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া সনদপত্রসহ নানা স্বাস্থ্য তথ্য আপলোড করতে পারবেন। অ্যাপটি এসব তথ্য নিয়ে এ সম্পর্কিত সনদের কিউআর কোড জেনারেট করবে। তবে, এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হবে না। ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই কিউআর কোড প্রদর্শন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে।

এ বিষয়ে দ্য কমন প্রোজেক্টের প্রধান বিপণন ও যোগাযোগ কর্মকর্তা থমাস ক্র্যাম্পটন সিএনএনকে বলেন, ‘প্রতিটি ভ্রমণের আগে আপনার পক্ষে কোভিড পরীক্ষা করানো সম্ভব হলেও টিকা নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে টিকা গ্রহণ সম্পর্কিত বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম থাকা জরুরি।’

একই ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে আইবিএমের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এরই মধ্যে আইবিএম নিজস্ব একটি অ্যাপ তৈরি করেছে, যার নাম তারা দিয়েছে ডিজিটাল হেলথ পাস। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানের ভেন্যু কর্তৃপক্ষ ও আয়োজকেরা তাদের ইভেন্টে যোগ দিতে টিকা গ্রহণসহ দরকারি স্বাস্থ্য তথ্যের একটি তালিকা এতে যুক্ত করতে পারবে। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য তথ্য অ্যাপটিতে স্টোর হবে।

এ তো গেল এই নতুন বাস্তবতায় টিকা গ্রহণের সনদ ও অন্য স্বাস্থ্য তথ্য সম্পর্কিত অ্যাপ তৈরির বিষয়। এ ক্ষেত্রে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলেও একটি বড় সংকট কিন্তু রয়ে গেছে। সিএনএন জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে বাজারে এরই মধ্যে কয়েকটি টিকা চলে আসার কারণেও একটি সংকট তৈরি হয়েছে, যা সামনে আরও বাড়বে। কারণ, সব টিকার কার্যকারিতা এক নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আরও বড় সংকটটি সম্ভবত স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপের কার্যকর প্রয়োগ নিয়ে। এর আগেও বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপ তৈরি করেছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে বড় আস্থা তৈরি করতে পারেনি।

কোভিড-১৯ মহামারির একেবারে শুরু দিকেই অ্যাপল ও গুগল ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ভুলে যৌথভাবে ব্লুটুথভিত্তিক একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল, যা ব্যবহারকারীদের আগে থেকেই কোভিড আক্রান্তদের সম্পর্কে সতর্ক করবে। কিন্তু এটি তেমন সাফল্য পায়নি। একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারও অনুরূপ অ্যাপ তৈরি ও ব্যবহার করেছে।

এ বিষয়ে লিনাক্স ফাউন্ডেশন পাবলিক হেলথের এ সম্পর্কিত উদ্যোগের প্রধান জেনি ওয়াঙ্গার বলেন, ‘সংক্রমণ ঝুঁকি নির্ণয় ও সতর্ক করার এই অ্যাপটি সফল না হওয়ার পেছনে মার্কিন ফেডারেল সরকারের অদক্ষতা দায়ী। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে যুক্ত করে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করা দরকার ছিল। একই সঙ্গে অঙ্গরাজ্যগুলো যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা প্রয়োজন ছিল।’

এবার এ ধরনের সমন্বয়ে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য লিনাক্স ফাউন্ডেশন কোভিড-১৯ ক্রেডেনশিয়ালস ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে জোট বেঁধেছে, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পাঁচ মহাদেশের বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক ব্যক্তি। একই সঙ্গে তারা আইবিএম ও কমনপাসের সঙ্গেও কাজ করছে।

এ বিষয়ে লিনাক্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ব্রায়ান বেলেনডর্ফ বলেন, ‘আমরা সফল হলে অ্যাপটির ব্যবহারকারীরা সহজেই বলতে পারবেন—কোভিডের টিকা নিয়েছি, তার প্রমাণ আমার ফোনে আছে। সঙ্গে ওই ব্যক্তির অন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য তথ্যগুলোও থাকবে। কনসার্ট হোক বা সিনেমা হলই হোক, যে কেউ চাইলেই এই ডিজিটাল পাস দেখিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারবে। এতে করে ওই স্থানগুলোতে থাকা লোকেরাও নিরাপদ থাকবে। দুই পক্ষেরই এটি ব্যবহারের সুযোগ থাকতে হবে, অনেকটা ই-মেইলের মতো। একই সঙ্গে এটি হতে হবে সহজে ব্যবহারযোগ্য, যাতে ব্যবহারকারীদের কোনো ঝামেলা পোহাতে না হয়। থাকতে হবে বিশ্বাসযোগ্যতা।’

বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কমনপাস, আইবিএম ও লিনাক্স ফাউন্ডেশন। আইবিএম জানিয়েছে, তারা চায়, পুরো বিষয়টির নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারকারীদের হাতে থাকুক। এমনকি তারা কোন পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্য তথ্য দিতে চায়, তাও যেন তারাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

টানা ৫ বছর ‘এএএ’ ক্রেডিট রেটিং পেলো ওয়ালটন
বিদেশিদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করছে জাপান

আপনার মতামত লিখুন