শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

পর্যটন কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩ জুলাই ২০২২

পর্যটনকেন্দ্রগুলো ছিল পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত। কিছু ভোগান্তি থাকলেও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দে ভাটা পড়েনি। রাজধানীতে ভাগ্নি রাইমাকে শিশুপার্ক দেখানোর জন্য শাহবাগে নিয়ে গিয়েছিলেন আব্দুস সালাম নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন শিশুপার্ক আর নেই, সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ রয়েছে। পরে ভাগ্নিকে নিয়ে হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরেছেন তিনি। হাতিরঝিলে কথা হয় সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশে থাকি, ৫ বছর পর এবার দেশে ঈদ করেছি। ভাগ্নিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু শাহবাগে গিয়ে দেখি শিশুপার্কটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে হাতিরঝিলে গিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরেছি।’

করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছর যে কোনো উৎসবে ছিল না স্বতঃস্ফূর্ততা। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। পর্যটনকেন্দ্রগুলো ছিল উৎসবমুখর। বিস্তারিত আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে:

রাজধানী: ঢাকার বিনোদনকেন্দ্রের সংকটের কারণে এবার ঈদের ছুটিতে অনেকে ঘুরে বেড়িয়েছেন ফাঁকা শহরের উন্মুক্ত স্থানে। যার ফলে হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন, রমনা পার্ক, ধানমণ্ডি লেকসহ কিছু জায়গা যেন হয়ে উঠেছিল ‘ভ্রাম্যমাণ বিনোদনকেন্দ্র’।

হাতিরঝিলে দেখা যায়, অন্যান্য সময় যাত্রী পারাপারে যে ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো ব্যবহার হয়, সেগুলো ঈদের তিন দিন ব্যবহার হয়েছে বিনোদনপ্রেমী মানুষকে আনন্দ দিতে। এফডিসি, রামপুরা, পুলিশ প্লাজাসহ কয়েকটি স্পটে ঘোরানোর জন্য আধাঘণ্টায় জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা করে।

চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রতিদিনই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যায় মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সংসদ ভবনের সম্মুখভাগেও দেখা যায় মানুষের ভিড়। পাশাপাশি চিড়িয়াখানা, ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড (শিশুমেলা)’, লালবাগ কেল্লাসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।

শাহবাগের শিশুপার্ক বন্ধ থাকার কারণে শ্যামলির ওয়ান্ডারল্যান্ডে চাপ ছিল বেশি। একসময়ের শিশুমেলা নামে পরিচিত বিনোদনকেন্দ্রটি এখন ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ৪০টির মতো রাইডের মধ্যে পরিবারের সবার চড়ার উপযোগী আছে ১২টি রাইড। বাকিগুলো শিশুদের। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এটি খোলা আছে। ওয়ান্ডারল্যান্ডে প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। আজিমপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে ওয়ান্ডাল্যান্ডে এসেছেন আরিফা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘এখন তো বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকায় ঘোরার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই। শাহবাগের শিশুপার্কটি অনেক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এজন্য ওয়ান্ডারল্যান্ডে এসেছি। আমার ছেলেটা খুবই আনন্দ করেছে। আমারও ভালো লেগেছে।’

প্রতি ঈদেই মিরপুর চিড়িয়াখানা রাজধানীর মানুষের ঈদ আনন্দে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। চিড়িয়াখানার তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, মূলত ঈদের পরদিন থেকে ভিড় বেশি হয়। এক সপ্তাহ ধরে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে। সম্প্রতি আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডস থেকে পাঁচ প্রজাতির ১৬টি প্রাণী আনা হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি আফ্রিকান সিংহ, তিনটি পেলিক্যান, চারটি লামা, দুটি ক্যাঙ্গারু ও তিনটি ওয়াইল্ড বিস্ট। এই প্রাণীগুলো দেখা ছিল দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া ‘হাতির ফুটবল খেলা’ মুগ্ধ করেছে। বাঘ, সিংহ, বানরের খাঁচার সামনে দেখা গেছে বেশি ভিড়। কাঁঠালবাগান থেকে বাবার সঙ্গে চিড়িয়াখানায় গিয়েছে ওয়াইডব্লিউসি স্কুলের ছাত্রী মারিয়া। বাঘ, সিংহ ও বানর দেখে উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়ে মারিয়া জানায়, এতদিন বইয়ে এবং মোবাইল ফোনে যে প্রাণী দেখেছে এবার নিজ চোখে সেই প্রাণীগুলো দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে তার।’

এবার ঈদের ছুটিতে ঢাকার মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল পদ্মা সেতু, ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্কও। কেউ কেউ মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ঘুরে চলন্ত গাড়ি থেকে পদ্মা সেতুর ভিডিও করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

খাগড়াছড়ি : পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে এবারও বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতে। ঈদের দিনে ও ঈদের দ্বিতীয় দিনে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলো ছিল পর্যটকমুখর। তবে কেন্দ্রগুলোতে বাইরের চেয়ে স্থানীয় পর্যটক ছিল বেশি।

পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আলুটিলা, রহস্যময় গুহা ও জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কসহ পর্যটকের আগমনে পরিপূর্ণ। এ ছাড়াও রহস্যময় গুহা ও রিছাং ঝরনা, মায়াবিনী লেক, হাতি মাথা পাহাড়,  দেবতারপুকুর, তৈদু ছড়া ঝরনা, পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও পানছড়ির অরণ্য কুটিরে ছিল ভিড়।

বাগেরহাট: পবিত্র ঈদুল আজাহার ছুটিতে বাগেরহাটের পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো ছিল দর্শনার্থীদের পদচারণায়  মুখরিত। করোনার কারণে দুই বছর পর বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে আসতে পারায় দর্শনার্থীরা দারুণ উচ্ছ্বসিত। ঈদের দিন দুপুর থেকে পর্যটনকেন্দ্র বাগেরহাটে বিশ^ ঐতিহ্যের অংশ ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, হযরত খানজাহান (রহ.) মাজার, বিনোদনকেন্দ্র সুন্দরবন রিসোর্ট, চন্দ্রমহল হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে।

রাজশাহী : ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ছুটছে মানুষ। ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরু হওয়া ঘোরাঘুরি এখনো চলছেই। বিনোদনপ্রেমীরা নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গতকালও ভিড় করে। বিকেলে নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশি মানুষের সমাগম হয় পদ্মা নদীর পাড়ে। তিন দিন ধরেই মানুষের ঢল নামছে নদীর পাড়ে।

এ ছাড়া রাজশাহীর আরেক বিনোদনকেন্দ্র শহীদ জিয়া শিশুপার্ক। অন্যান্য সময় এই পার্কে লোকজনের যাওয়া আসা খুবই কম হলেও ঈদের ছুটিতে জমেছে এই শিশুপার্ক। শিশুদের বাড়তি বিনোদন দিতে অভিভাবকরা আসছেন এখানে।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর পৌর শিশুপার্ক, খোয়াসাগর দীঘি, দালাল বাজার জমিদারবাড়ি, রায়পুর আলতাফ মাস্টার মাছঘাট, সাজু মোল্লার মাছঘাট (সর্দার পর্যটনকেন্দ্র), রামগঞ্জের মাঝিরগাঁও পার্ক, আলেকজান্ডার বেড়িবাঁধসহ সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট ঘাটে ছিল দশনার্থীদের ভিড়। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ব্যক্তি মালিকানায় ৪ একর জমিতে সদর উপজেলার কুশাখালী হাজি কান্দি এলাকায় তৈরি স্টার পার্কে। অতিরিক্ত প্রবেশমূল্য নেওয়াসহ অনুমোদনহীন স্টার পার্কে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছে  দর্শনার্থীরা।

কুয়াকাটা : সমুদ্রসৈকত সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ঈদের টানা ছুটিতে ভ্রমণপিয়াসীদের আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ। গতকাল মঙ্গলবার কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায় হাজারো পর্যটকের সরব উপস্থিতিতে মুখর রয়েছে দর্শনীয় স্থান। ছবি তোলা, বালিয়াড়িতে হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা, পরিবার নিয়ে সৈকত উপভোগে ব্যস্ত পর্যটকরা। পঞ্চগড় থেকে আসা পর্যটক এস এম মামুন বলেন, কুয়াকাটায় এসে অনেক ভালো লাগছে বেশ আনন্দ উল্লাস করছি। দুজনে প্রথম ট্যুরে অনেক আনন্দে কাটাচ্ছি।

মোংলা : ঈদুল আজহার ছুটিতে মোংলার মেরিন ড্রাইভ সড়ক দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। পৌর শহরের ফেরিঘাট থেকে শুরু করে কাইনমারি সøুইস গেট পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের এই সড়কে বিকেল থেকে ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের। বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে পৌর কর্তৃপক্ষের এ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি। সড়কটি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী ক্যানেলের পাড়ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে। এই মেরিন ড্রাইভে এসে সুন্দরবন, পশুর চ্যানেলে সারিবদ্ধ কার্গো-কোস্টার জাহাজসহ নৌযান ধরনের নৌযান, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করছেন।

ময়মনসিংহ : এবারের ঈদুল আজহার ঈদের ছুটিতে উৎসবপ্রিয় মানুষের ভিড়ে ঠাসা ছিল ময়মনসিংহের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। বৈচিত্র্যময় বিনোদনে মেতে উঠেছিল হাজার হাজার মানুষ। শিশু-কিশোরদের কলকাকলি আর নানা বয়সী মানুষের সরব পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে ওঠে নগরীর জয়নুল উদ্যান, বিপিন পার্ক, রাজা-জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত শশী লজ, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, স্বাধীনতা স্তম্ভ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিজিবি পার্ক এলাকাগুলো।

কমলগঞ্জ: এবারও ঈদুল আজহার ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পর্যটকদের বরণ করে নিতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরও আশা ছিল, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে মুখর হবে পর্যটনকেন্দ্রগুলো। কিন্তু তাদের সে আশায় ভাটা পড়েছে। ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের পা পড়েনি কমলগঞ্জে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরে যেভাবে লাউয়াছড়া ও মাধবপুর লেকে পর্যটকের ঢল নেমেছিল, এবার তা ভিন্ন। অল্প কিছু পর্যটককে বনের ভেতর ও চা বাগানে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা অবস্থান করছে দুটি স্পটেই।

কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝে আলোর সঞ্চার পদ্মা সেতু
নতুন ফোন আনল ওয়ালটন

আপনার মতামত লিখুন