কোন পথে পর্যটন খাতের উন্নয়ন
দফায় দফায় পরিকল্পানায় যুগে যুগেও পর্যটন খাতের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। সম্ভাবনার এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করলেও অগ্রগতির কোনো সুফল আসেনি। বারবার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও মূলত মহাপরিকল্পনার পাহাড়চাপায় উন্নয়ন আটকে আছে নাকি তা চলমান রয়েছে তার জবাব মিলছে না।
পর্যটন খাতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা অন্যতম দুই প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সংশ্লিষ্টদের মতে, পর্যটকদের বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট করতে এ খাতের উন্নয়নে করোনার আগেই ২১ সাল ঘিরে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনার মধ্যে ছিল, সাত দিনব্যাপী ইনানীতে ৫০টি দেশের নৌবাহিনীর সাথে অনুষ্ঠান। মেলা, ফেস্টিভাল, কার্নিভাল, কালচারাল অনুষ্ঠান, ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা, ভিডিও নির্মাণ, ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনী ও ওশান ট্যুরিজমকে বেসরকারি উদ্যোগে চালু। কথা ছিল চলতি বছরে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনে পর্যটনবর্ষ পালন করা। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে তা আর এগোয়নি।
তবে ট্যুরিজম বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, এ খাতের উন্নয়নে এই মহাপরিকল্পনার কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিশেষ প্রচারণার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ এবং সেগুলোর ইতিহাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্লগ আকারে পোস্ট করা হচ্ছে। যদিও খোঁজ নিয়ে এর তেমন অগ্রগতির প্রমাণ মেলেনি।
তবে ট্যুরিজম বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, পর্যটন খাতের উন্নয়নে তারা বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তবে পরিকল্পনার কত শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে আর প্রক্রিয়াধীনই বা কতটুকু এসবের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তিনি জানাতে পারেননি। তার ভাষ্য, ধীরে ধীরে তার সুফল মানুষ দেখতে পাবে।
তিনি বলেন, তিনটি পর্যায়ে উন্নয়নকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমে এ খাতের বর্তমান অবস্থা, কোথায় কোন সমস্যা, সম্ভাবনা, সঙ্কট চিহ্নিত করা হবে। এরপর পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস ও লিংকেজগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করা হবে। আর সব শেষে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া হবে। এভাবেই চলবে উন্নয়নকার্যক্রম।
তার ভাষ্য, ইতোমধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আকর্ষণীয় করা, পর্যটন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যটকদের জন্য দেশব্যাপী মানসম্মত পর্যটন সুবিধাদি সৃষ্টি, পর্যটন স্থাপনা উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও সংস্কার, পর্যটনকেন্দ্রের রাস্তা প্রশস্ত করার পরিকল্পনাসহ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া জেলাভিত্তিক পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার পাশাপাশি ঐতিহ্যের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে পর্যটন খাতের সঙ্কট অনেকটা কেটে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আপনার মতামত লিখুন