বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

রিকুইজিশন আতঙ্কে পর্যটন ব্যবসায়ীরা

ডেস্ক রিপোর্ট
১২ অক্টোবর ২০২২

পর্যটনের মৌসুমে পুলিশ, প্রশাসনের রিকুইজিশন (অধিযাচন) আতঙ্কে আছেন দেশের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের জন্য বুক থাকলেও হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের রুম, জাহাজ, নৌকা, গাড়ি ইত্যাদি রিকুইজিশন করায় বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণত সরকারি কাজে রিকুইজিশনের বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারি কাজের বাইরে রিকুইজিশন করায় ক্ষুব্ধ পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা। অন্তত পর্যটনের মৌসুম ও ছুটির দিনগুলোতে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট হোটেল, মোটেল, জাহাজ, নৌকা, গাড়ি ইত্যাদি রিকুইজিশনের আওতামুক্ত রাখার দাবি ব্যবসায়ীদের।

পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,বাংলাদেশর অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা আছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়টা পর্যটন মৌসুম। হাওর অঞ্চলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম। এছাড়া শুক্র ও শনিবারের আগে অথবা পরে সরকারি ছুটির দিন হলে পর্যটকদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের রুম, জাহাজ, নৌকা, গাড়ি ইত্যাদি অতিথিদের জন্য বুক করা থাকলেও পুলিশ, প্রশাসন তা রিকুইজিশন করে। অতিথিদের জন্য বুক থাকার বিষয়টি জানানো হলেও তারা বাধ্য করে অতিথির বুকিং বাতিল করতে। ফলে অতিথিকে শেষ মুহূর্তে বুকিং বাতিলের বিষয়টি জানাতে হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি কাজে রিকুইজিশন যেমন করা হয়, অনেক সময় সরকারি কাজের বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে রিকুইজিশন করা হয়। সরকারি কাজের বাইরে রিকুইজিশনের ক্ষেত্রে কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয় না। নির্ধারিত মূল্যও পরিশোধ করা হয় না। স্থানীয় প্রশাসন যখন রিকুইজিশন করতে চায়, তখন ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করার সুযোগ পান না।

এদিকে ১০ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনকে চিঠি দিয়ে হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের রুম, জাহাজ, নৌকা, গাড়ি ইত্যাদি রিকুইজিশন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পর্যটন মৌসুম নির্ভর। দেশে সাধারণত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়কে ধরা হয় পর্যটন মৌসুম। হাওর অঞ্চলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চার মাসের আয় দিয়ে পুরো বছরের খরচ মেটাতে হয়। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকরা ভ্রমণ করে থাকেন। তবে শুক্র ও শনিবারের আগে অথবা পরে সরকারি ছুটির দিন হলে পর্যটকদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু ছুটির দিনগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের হোটেল-মোটেল-রিসোর্টের রুম, জাহাজ, বোট, গাড়ি ইত্যাদি শেষ মুহূর্তে রিকুইজিশন করে। এ কারণে বাধ্য হয়ে পর্যটকদের পূর্বনির্ধারিত বুকিং বাতিল করতে হয়। এতে হোটেল, মোটেল, জাহাজ, বোট মালিকদের পর্যটকদের জবাবদিহি করতে হয়, জরিমানাসহ ক্ষতিপূরণের সম্মুখীন হতে হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ভরা মৌসুমে ও ছুটির দিনগুলোতেই পর্যটকরা ভ্রমণ করে থাকেন। এ সময় বিভিন্ন হোটেলের রুম, জাহাজ, বোট ইত্যাদি রিকুইজিশন করলে ট্যুর অপারেটররা ও পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। আগে বুকিং করা ট্যুর বাতিল হলে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। পর্যটন শিল্পের প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। এতে করে পর্যটকদের বিদেশমুখী হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

এ অবস্থায় ভরা মৌসুমে ও ছুটির দিনগুলোতে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট হোটেল, মোটেল, জাহাজ, বোট, গাড়ি ইত্যাদি রিকুইজিশনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য টোয়াবের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি কাজে রিকুইজিশন হলেও সান্ত্বনা পেতাম। সরকারদলীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও রিকুইজিশনের নামে  হোটেল, মোটেল, জাহাজ, বোট, গাড়ি ব্যবহার করা হয়।  আমরা লিখিতভাবে রিকুইজিশনের কাগজপত্র চাইলেও দেয় না।  এখন এসব বিষয়ে কথা বললে রোষানলে পড়ার ভয় থাকে। দেখা যাবে যিনি প্রতিবাদ করেছেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযানের নামে জরিমানা করা হবে। নানা ভাবে হেনস্তার শিকার হতে হবে।

(টোয়াব সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, করোনাকালে ট্যুর অপারেটররা এমনিতেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রিকুইজিশন  এখন নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের লোকজন  রাতে এসে বলে হোটেলের রুম দিতে হবে, নৌকা দিতে হবে। অথচ কোনও অতিথির জন্য বুক করা থাকলেও সেটি বিবেচনা করা হয় না। হুট করে কোনও অতিথির তার বুকিং বাতিল করায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়।

শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, আমরা পর্যটন মৌসুমে ও ছুটির দিনগুলোতে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট হোটেল, মোটেল, জাহাজ, বোট, গাড়ি ইত্যাদি রিকুইজিশনের আওতামুক্ত রাখার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, রিকুইজিশন সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে আমরা সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। ট্যুর অপারেটররা যদি তাদের  হোটেল, মোটেল, জাহাজ, বোট, গাড়ির বুকিং সংক্রান্ত তথ্য জেলা প্রশাসন বা আমাদের জানায় তাহলে সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। সরকারি কাজে রিকুইজিশন আমরা বন্ধ করতে পারবো না, কিন্তু কীভাবে সমন্বয় করে সমাধান করা যায় সেটি আমরা চেষ্টা করবো।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার পেলেন মো. মজিবুল হক রিপন
পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ, ক্ষতির সম্মুখীন হাজারো লোক

আপনার মতামত লিখুন