বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

সাইবেরিয়ার পাখি বারবার আসে, পর্যটক আসেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকের অনুপস্থিতি তাঁকে খুব ভাবায় বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। বিদেশি পর্যটক না আসার কারণও জানিয়েছেন তিনি। এক সেমিনারে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা পাখির জন্য আমরা পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছি। কিন্তু পর্যটকদের জন্য পারছি না। কারণ, পর্যটকেরা আমাদের কাছে যা চান, তা দিতে পারি না। এমনকি দেশের পর্যটকদেরও ধরে রাখতে পারছি না। তাঁরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। সাইবেরিয়ার পাখি বারবার আসে। পর্যটক আসেন না।’

‘মুজিবস বাংলাদেশ: বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতি ও পর্যটন’ শীর্ষক সেমিনারে মাহবুব আলী এসব কথা বলেন। আজ বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সেমিনার হয়।

মাহবুব আলী বলেন, ‘আমরা পর্যটন এলাকা হিসেবে শুধু সেন্ট মার্টিনের কথা বলি। সবার চিন্তা সেন্ট মার্টিনকে কীভাবে বাঁচাতে পারি। এটা নিয়ে অনেক আন্তমন্ত্রণালয় সভা করছি। কিন্তু পর্যটকদের জন্য আমরা বিকল্প কোনো এলাকার ব্যবস্থা করতে পারছি না। পর্যটন এলাকার বৈচিত্র্য দিতে পারছি না।’

পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর মতে, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া মিনি সুন্দরবন হতে পারে। অথচ সে ব্যবস্থা করতে পারছেন না। কেন পারছেন না, তার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘ওয়াইন-বিয়ার ছাড়া অনেক পর্যটক এক দিনও থাকতে পারেন না। পাশের দেশ ভারত ১২০ কোটি মানুষের দেশ। সেখান থেকে আমাদের দেশে পর্যটক আসতে পারেন। কিন্তু আসেন না।’

বাংলাদেশের ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা জটিল উল্লেখ করে পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভিসার ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। বিমানবন্দরে পর্যটকদের ভোগান্তি বন্ধ করে তাঁদের যাতায়াতব্যবস্থা সহজ করতে হবে। পর্যটকদের জুজুর ভয় দেখালে তো হবে না।

মাহবুব আলী বলেন, মানুষ কেন দলে দলে দার্জিলিং যায়। কারণ, সেখানকার সেবা ভালো। পর্যটকদের জন্য পথ সহজ করলে পর্যটক আসবেনই। বক্তব্য দিতে গিয়ে একপর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে এত নিয়মকানুন, এসব সহজ করতে হবে। পার্বত্য জেলায় যেতে হলে আলাদা অনুমতি লাগে। সোনারগাঁও হোটেল, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল কিংবা পর্যটন করপোরেশনের মিলনায়তনে বসে সেমিনার করলে পর্যটক বাড়বে না। মানুষকে সেবা দিতে হবে। তাঁদের সচেতন করে তুলতে হবে।

বাংলাদেশের ভিসা দেওয়ার ৩৩টি ক্যাটাগরি আছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভিসা নীতিমালা করতে যাচ্ছি।’ এই সচিবের মতে, পর্যটকবাহী বিলাসবহুল জাহাজের মাধ্যমে পর্যটকের বিকাশ সম্ভব। বঙ্গোপসাগর দিয়ে ভারত, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ভিসাপদ্ধতি সহজ করে ক্রুজ জাহাজ চালু করা যেতে পারে।

সুনীল অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান রাখার সুযোগ নিয়ে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ। তিনি বলেন, যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণের আগে পরিবেশের দিকে সবার খেয়াল রাখা উচিত। অনেকে কাজ শেষ করে পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করেন। এটা ঠিক নয়।

ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘নীল সমুদ্র অর্থনীতি ও পর্যটনে আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমরা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছি না। দক্ষ জনবলের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর বলেন, ‘সংস্কৃতি বলতে আমরা শুধু গান, যাত্রা এসব বুঝি। কিন্তু এর বাইরেও যে সংস্কৃতির অনেক দিক আছে, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে চাই না। আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, জাদুঘর—এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কম উল্লেখ করে তিনি এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য কাউসার আহাম্মদ। সভাপতিত্ব করেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন।

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় পর্যটক শূন্য বান্দরবান!
আশুরার বিল ছেয়ে গেছে শাপলা ও পদ্ম ফুলে

আপনার মতামত লিখুন