শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

নষ্ট হওয়ার উপক্রম দুই শ’ বছরের প্রাচীন নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ অক্টোবর ২০২২

গত নয় বছরেও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় সন্ধান পাওয়া দুই শ’ বছরের পুরোনো পালতোলা নৌকা। নৌকাটি বৃষ্টিতে ভিজে-রোদে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। ফলে হতাশ নৌকাটি দেখতে আসা পর্যটকরা।

তবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে এই প্রাচীন নৌকা সংরক্ষণের পাশাপাশি একটি জাদুঘর তৈরির দাবি এলাকাবাসীর। নৌকাটি সংরক্ষণ না করলে পূর্বপুরুষের শেষ স্মৃতিটুকু হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাখাইনরা। এদিকে নৌকাটি সংরক্ষণের জন্য কাজ করার কথা জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সমুদ্র সৈকতের অব্যাহত ভাঙনে বালুর নিচ থেকে জেগে ওঠে ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের ৯০ টন ওজনের কাঠের তৈরি এ নৌকাটি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী টেকনিক্যাল সহায়তায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পৃক্ত করে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রেললাইনে তুলে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের পূর্বপাশে নৌকাটি প্রতিস্থাপন করা হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, দুই শ’ বছরের আগে রাখাইনরা এই নৌকায় কুয়াকাটায় এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। কালের বিবর্তনে রাখাইনদের নানান স্মৃতি হারিয়ে গেলেও বর্তমানে এই নৌকাটি এই অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করছে। তবে দীর্ঘদিনে সংস্কার না করায় বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে শুকিয়ে নৌকাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

নৌকাটি থেকে তামার তৈরি পেরেক, নারিকেলের ছোবলা দিয়ে বানানো রশি, ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরো, প্রচুর ধানের বহিরাবরণ বা চিটা, পাটকাঠি, মাদুরের অবশেষ, পাটের তৈরি ছালার নিদর্শন, লোহার ভারী ও বিশালাকৃতির শিকল উদ্ধার করা হয়। নৌকাটি কাঠের বাতা, স্টিলের পাত ও রং দ্বারা আবৃত করা হয়েছে। এটি পিতল প্রলেপ থাকার কারণে অনেকে সোনার নৌকাও বলছেন।

স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের তথ্যমতে, প্রায় ২২৫ বছর পূর্বে বার্মার আরাকান রাজ্য থেকে রাখাইন সম্প্রদায় জাতিগত কোন্দলের কারণে ১৫০টি পরিবার রাতের আধারে ৫০টি কাঠের নৌকায় উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় এসে বন পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করেছিলেন।

এদিকে কুয়াকাটায় সংরক্ষণ করা প্রাচীন নৌকাটি দেখতে এখন নিয়মিত পর্যটকরা ভিড় করছেন।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রাসদান আমান বলেন, নৌকাটি এ অঞ্চলের রাখাইনদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করছে। নৌকাটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।

কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ইন্দ্রোং বংশ ভিক্ষু বলেন, নৌকাটি আমাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতি। এটিকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। নৌকাটি যদি সংরক্ষণ না করা হয়, তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিটুকু হারিয়ে যাবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, একটি যাদুঘর নির্মাণ করে রাখাইনদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত প্রাচীন পালতোলা নৌকাটি সংরক্ষণ করা উচিত। অন্যথায় বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে শুকিয়ে নৌকাটি নষ্ট হয়ে গেলে আদিবাসী রাখাইনদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে।

বরিশাল ও খুলনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, প্রাচীন এই নৌকাটি সংরক্ষণের জন্য কাজ চলছে। আমরা কাঠের তৈরি প্রাচীন নিদর্শন দীর্ঘ মেয়াদি সংরক্ষণের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করছি।

৪০০ বছরের পুরোনো বটবৃক্ষটি হতে পারে পর্যটন স্পট
বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ: বিপাকে ব্যবসায়ীরা

আপনার মতামত লিখুন