৪০০ বছরের পুরোনো বটবৃক্ষটি হতে পারে পর্যটন স্পট
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুইতলা মল্লিকপুরে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটবৃক্ষ। ১৯৮৪ সালে বিবিসির জরিপে বটবৃক্ষটি এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটবৃক্ষ বলে স্বীকৃতি পায়।
ওই উপজেলার সুইতলা মল্লিকপুরে প্রায় ১১ একর জমি জুড়ে অবস্থিত বৃহত্তম বটবৃক্ষটি। এ বৃক্ষের মোট ৩৪৫টি বায়বীয় মূল শিকর রয়েছে। যে মূলগুলো মাটির গভীরে প্রবেশ করেছে। আর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে ৩৮ থেকে ৪০টি মূল। যা দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভীড় জমায় ঐতিহ্যবাহী এ বৃক্ষটির তলে। প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীরা শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে এই অজ পাড়াগায়ের বটবৃক্ষের তলে এসে কোকিল, ঘুঘু, টিয়া, শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেকে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলেন।
স্থানীয়রা জানান, বেথুলী গ্রামের একটি কুয়ার পাশে জন্মায় গাছটি। এটি রোপণ করা হয়েছিল বা এমনিতেই জন্মেছে তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসীর ধারণা আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে কোনো উড়ন্ত পাখির মুখ থেকে পড়া ফলেই জন্ম হতে পারে এ বৃক্ষের। প্রাচীন এ বটবৃক্ষের মূল গাছটি বিলীন হলেও তা থেকে জন্মানো গাছ এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রায় ৪শ বছরের পুরোনো এই বটবৃক্ষটি নষ্ট হতে বসেছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। ২০০৭ সাল থেকে যশোর সামাজিক বন বিভাগ বৃক্ষটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিলেও জমি অধিগ্রহণসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো অগ্রগতি নেই। চারপাশে রাস্তা আর মানুষের অবাধ চলাচলের কারণে দিন দিন ক্ষতি হচ্ছে গাছটির। এ অবস্থায় এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও গাছটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আগত দর্শনার্থী ও এলাকাবাসী।
মল্লিকপুর গ্রামের সমাজসেবক আয়ুব হোসেন জানান, ঐতিহ্যবাহী এ বৃক্ষটি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থার জন্য অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কিন্তু আজও কোনো কাজ হয়নি।
মল্লিকপুর গ্রামের আরজ আলী জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি বৃক্ষটি দেখে আসছেন। গাছটি এলাকার বাইরে পরিচিত হলেও এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই।
বলাকান্দর গ্রামের আছাদুর রহমান জানান, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটবৃক্ষটির তিন দিকের রাস্তা পিচঢালা। আর উত্তর পাশে মালিকানাধীন জমি রয়েছে। ফলে আপন গতিতে আর বাড়তে পারছে না বৃক্ষটি। এটি রক্ষা করতে হলে বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। ফলে সরকারি উদ্যোগে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন।
বেথুলী গ্রামের আশাদুল মোল্যা জানান, ছোটবেলা থেকে দেখছি এ বৃক্ষটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসে। অজ পাড়াগায়ের এ বৃক্ষটির তলে নির্জন মনোরম পরিবেশ দেখে সবার মন ভরে যায়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। অথচ জাতীয় সম্পদটি নষ্ট হতে বসেছে।
ঝিনাইদহ বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, জনবল সংকটের কারণে রক্ষণাবেক্ষণে কিছুটা সমস্যা হলেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন