শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

অনুমতি না নিয়ে সরকারি কার্যালয়ে মিছিল-সমাবেশ, তিন দিন ধরে অচলাবস্থা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে অনিয়মে জড়িতদের বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন বাতিলের দাবিতে গত তিন দিন ধরে রাজধানীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অবরুদ্ধ রেখে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন (বিভিএ)। বৃহস্পতিবার মহাপরিচালকের ভবনের ভেতরে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন। বহিরাগত ব্যক্তিদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন অধিদপ্তরের বেশকিছু কর্মকর্তাও। বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। ভয় ও আতঙ্কে সেবা প্রার্থীরা প্রবেশ করতে পারছেন না। শৃঙ্খলা ফেরাতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এমদাদুল হক কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টিকে সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর ইন্দন ও উস্কানি হিসেবে দেখছে। 

গত তিন দিনের আন্দোলনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সক্রিয় দেখা যায়। ইতোমধ্যে সমাবেশ অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এভাবে মাঠে নামতে পারেন না। তারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলের বাইরে গিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন, যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশু পালন ও জাত উন্নয়নে অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রিধারীদের বড় অবদান আছে। কিন্তু তাদের জন্য নেই কোনো কাউন্সিল। অথচ প্রাণিসম্পদ খাতে ভেটেরিনারি কাউন্সিল আছে। এ কারণে গত ১৮ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি কাউন্সিল আইন প্রণয়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন, রপ্তানি বাড়ানো, পশু পালনের সঙ্গে জড়িতদের আইনি সুরক্ষা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুগান্তকারী এ আইনকে স্বাগত জানিয়েছে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। এতে একচেটিয়া আধিপত্য খর্বের আশঙ্কা করছে একটি চক্র। তারা আন্দোলনে ভুল বুঝিয়ে উসকানি দিচ্ছেন। বিশেষ করে  বিভিএ’র মহাসচিব মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নিজের কব্জায় রাখার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, হাবিবুর রহমান মোল্লা দীর্ঘ দিন সংগঠনের পরিচয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি ও তদবির করে যাচ্ছেন। তাঁর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান এথেনা এন্টারপ্রাইজ ও হেসপার ফার্মার নামে কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন। হাবিবুর রহমানের অনুসারীদের মহড়ার কারণে অনেক ঠিকাদার দরপত্র কিনতে পারেন না। তার ভাড়াটে লোকজন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) গরু সরবরাহের দরপত্রেও প্রভাব খাটিয়েছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। গরু সরবরাহের ঠিকাদারি সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে তাকেই দেওয়া হয়। এ নিয়ে খামারিদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খামারি বলেন, হাবিবুর রহমান মোল্লা তার দুই প্রতিষ্ঠান এথেনা এন্টারপ্রাইজ ও হেসপার ফার্মার নামে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বাণিজ্য করছেন। তার প্রতিষ্ঠানের সরবরকৃত কৃমিনাশক, ভিটামিন, এন্টিবায়োটিকসহ নানা ওষুধ খুবই নিম্ন মানের। এ বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। এতে দেশের প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রান্তিক খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন। মাঠ থেকে তার ওষুধ সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষা করলে প্রকৃত তথ্য উদঘাটিত হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, হাবিবুর রহমান মোল্লা বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সুবিধা আদায়ে মরিয়া হয়ে থাকেন। স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলেই কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। কয়েক মাস আগে এলডিডিপি প্রকল্প থেকে সুবিধা না পেয়ে তার অনুসারীদের দিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেন।

অভিযোগ রয়েছে, এক সময় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে লাল রংয়ের একটি ভবন ছিল। দীর্ঘ দিন ভবনটি হাবিবুর রহমানসহ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের কয়েকজন নেতার দখলে ছিল। ভবনে রুম ভাড়া দিয়ে চলেছে বাণিজ্য, খালি জায়গায় করা হয় রেস্তোরা। 

বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রি এসোসিয়েশনের (বাহা) সভাপতি ও সাবেক সচিব জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, সারা পৃথিবীতে দুটি আলাদা আলাদা আইন আছে। এখানে দুটি আইন হলে একটি গোষ্ঠীর দাপট কমে যাবে। ফলে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের (বিভিএ) মহাসচিব ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন, এখানে আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। গত তিন দিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কোনো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে না। আমরা প্রাণিসম্পদ খাতকে রক্ষায় মাঠে নেমেছে, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি এখনও আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, হাবিবুর রহমান মোল্লা বেপরোয়া। দীর্ঘদিন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে লাল বিল্ডিং তাদের দখলে ছিল। সেটা ভাংতে বাধা দিয়েছে। কিন্তু, আমরা ভেঙেছি। সেখানে নতুন ভবন হবে। হাবিব মোল্লাসহ তাদের অনেকেই টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ সচিবের। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমরা যখন ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিই, তখনো এটা না করতে বাধা এসেছিল। কিন্তু আমরা করেছি। সামনে আমরা পোল্ট্রি বোর্ডও করবো। ভেটেরিনারি এবং অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি, দুটি আলাদা সাবজেক্ট। যারা এ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েট তারা পোল্ট্রি উৎপাদন, জাত উন্নয়ন, পুষ্টি উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। আর ভেটেরিনারিয়ান গ্রাজুয়েটরা পশু চিকিৎসা করবেন। নতুন আইনের মাধ্যমে দুটি বিষয় আলাদা হবে।

সাফা ‘ওভারঅল উইনার’ এবং ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলো ওয়ালটন
ওয়ালটনে ইংরেজি নববর্ষবরণ

আপনার মতামত লিখুন