
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা দুর্যোগে বছরে কয়েক দফা ক্ষতির মুখে পড়তে হয় উপকূলবাসীকে। আর এতে সবচেয়ে বড় শিকার কৃষক। বন্যা, লবনাক্ততা, নদী ভাঙন, উষ্ণতা, ঘূর্ণিঝড়ে কৃষক আরও দরিদ্র হয়ে পড়েন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির আর্থিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিমা। কৃষক কিংবা প্রান্তিক মানুষের জন্য বিমা সহজলভ্য করার পাশাপাশি বিমার বিষয়ে তাঁদের সচেতন করে তোলা প্রয়োজন।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে পুলা এ্যডভাইজারস্ এর আয়োজনে 'উপকুলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ঝুঁকির বীমা' শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পুলা এ্যডভাইজারস্ জলবায়ু ঝুঁকি স্থানান্তরের সেবা উদ্ভাবন করেছে। এ বিষয়ে ৩ বছরের একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সম্ভাবতা যাচাই করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
কর্মশালায় মূল প্রতিবেদনে পুলা এ্যডভাইজারস্ এর প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাকির বায়েজিদ বলেন, পুলা এ্যডভাইজারস্ সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক কৃষি বীমা ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠানটি দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষকে নিত্য-নতুন উদ্ভাবনী পণ্য ও সেবা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ বছরই ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাসহ তিনটি বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে প্রায় ৮ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য-প্রাণিতে ক্ষতির পরিমান ৫৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১.৭ মিলিয়ন কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু বরিশাল বিভাগের কৃষি খাতে রেমালে ক্ষতির পরিমান ৫০৮ কোটি টাকা। এ বছরই পর পর দুটি ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর অঞ্চললের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বছর বছর দুর্যোগ বাড়লেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ঝুঁকি মোকাবিলায় উদ্যোগ অপ্রতুল। বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক দেশের মতো প্রযুক্তি নির্ভর সহায়তাও মিলছে না।
কর্মশালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রধান সমস্যা হলো বিমার ব্যাপারে মানুষের আস্থা অত্যন্ত কম। বিমার প্রতি মানুষকে আরও আস্থাশীল করে তুলতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, পুলা এ্যডভাইজারস্ উদ্ভাবিত আধুনিক প্যারামেট্রিক ইন্সুরেন্সের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। পুলা এ্যডভাইজারস্ প্রাথমিক তহবিলের ব্যবস্থা করেছে। সংস্থাটির ৩ বছরের পাইলট প্রকল্পের প্রথম বছর সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম ভর্তুকি থাকবে। বাংলাদেশ সরকার পরবর্তী ২ বছর এ প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখবে। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সহযোগিতা করছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পরিচালক নাহিদ সুলতানা মল্লিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডিজাস্টার সাইন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার এস এম ইব্রাহিম হোসেন এবং সুইস কন্ট্যাক্টের ডেপুটি হেড অব বিএমএমডিপি নব নাশিত তারিক।
আপনার মতামত লিখুন