বদলে গেল পুরান ঢাকার আকাশের রঙ!

পুরান ঢাকায় চলছে সাকরাই উৎসব। আজ ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো আকাশ ছিলো ঘুড়ির দখলে। বিকেল পর্যন্ত আকাশ জুড়ে উড়েছে নানান রঙের শত শত ঘুড়ি, যেন রঙ বেরঙের প্রজাপতির সমাবেশ। ছাদে ছাদে সব বয়সী মানুষের ভিড়। শিশু-কিশোরেরা ব্যস্ত ঘুড়ি উড়াতে, যুবক-বৃদ্ধারাও বসে নেই, একদিনের জন্য তারাও ফিরে গেছেন কৈশোরে। দেখে মনে হলো, এ যেন আকাশ দখলের উৎসব!
বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের পুরো চিত্রটাই বদলে গেল! যারা এতক্ষণ ঘুড়ি নিয়ে কাটাকাটিতে ব্যস্ত ছিলো, তারা খেলছে আগুন খেলা। মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন ছুড়ে মারছে আকাশের দিকে। প্রতি সাকরাইনে মুখে কেরাসিন নিয়ে আগুন ফুঁ দেন তন্ময়।
মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন জ্বালানোর এই খেলায় কখনো দুর্ঘটনা ঘটেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুন নিয়ে খেলা করার সময় পুরান ঢাকায় এখনো কোনো দুর্ঘটনার খবর জানি না। তবে ছাদে ঘুড়ি উড়ানোর সময় অনেকেই ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অনেকেই ব্যস্ত ফানুস ওড়াতে। সারারাত পুরান ঢাকার আশপাশ এলাকার রাতের আকাশে উড়তে থাকবে হাজার হাজার ফানুস। বিভিন্ন রঙের ডিজিটাল ও হেলোজেন লাইটে সজ্জিত করা হয়েছে প্রতিটি বাসার ছাদ। চারদিকে আতশবাজির আলোক বিচ্ছুরণ ও বিকট শব্দে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো শহর।
পুরোনা ঢাকার বাসিন্দা আকমল সিকদার বলেন, পুরনো ঢাকার ঘুড্ডি উৎসবটি শুরু হয়েছে ব্রিটিশ আমল থেকেই। তখন উৎসবটি সনাতন ধর্মের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো, আর এখন বাংলাদেশের সব মানুষ এই উৎসব পালন করেন।
সাকরাইনে পুরান ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাইদের নাটাই, বাহারি ঘুড়ি উপহার দেয়া এবং পিঠার ডালা পাঠানো একটি অবশ্য পালনীয় অঙ্গ। ডালা হিসেবে আসা ঘুড়ি, পিঠা আর অন্যান্য খাবার বিলি করা হয় আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়ার লোকদের মধ্যে।
প্রাচীনকাল থেকেই পৌষকে বিদায় জানাতে মাঘ মাসের প্রথমদিন পুরান ঢাকাইয়ারা আয়োজন করে সাকরাইন উৎসব। সাকরাইন উৎসব আজ পুরান ঢাকার বর্ণিল ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। পুরান ঢাকার লক্ষীবাজার, জুরাইন, সূত্রাপুর, ওয়ারী, বংশাল, বাবু বাজার, মিলব্যারাক, হাজারীবাগ, সদরঘাট, নবাবপুর, লালবাগ, চকবাজার এলাকায় এ উৎসব বেশি হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে এ উৎসবে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় আতশবাজী ও ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব এলাকায় চলে আতশবাজীর খেলা।
আপনার মতামত লিখুন