শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

কুয়াকাটা সৈকতকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিন

স্টাফ রিপোর্টার
০৮ জানুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশ পর্যটন সম্পদে পরিপূর্ণ। যাকে ঘিরে বিশ্বের বুকে নতুন করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে এ দেশের। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা না থাকা ও বাস্তবায়নে আন্তরিকতার অভাবে এসব সম্পদের অপব্যবহার হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনাময় পর্যটন সম্পদ। পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন পর্যটন ও পরিবেশকর্মীরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটন মোটেলের অডিটোরিয়ামে মেরিন জার্নালিস্টস’ নেটওয়ার্ক আয়োজিত ‘উপকূলের পরিবেশ বিষয়ক’ সিম্পোজিয়ামে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সমুদ্রবিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি’র মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে মতবিনিয়ম সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুয়াকাটা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। সভায় দেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের পরিবেশ ও পর্যটনবিষয়ক সাংবাদিকরা পরিবেশ বিপর্যয় ও পর্যটন উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে নানা পরামর্শ তুলে ধরেন।

নিজের উপকূল বিষয়ক সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক শাহেদ শফিক বলেন, ‘বাংলাদেশের পুরো উপকূলের যেখানেই যাই না কেন সমুদ্রে প্লাস্টিক আবর্জনা দেখতে হচ্ছে, যা সমুদ্র প্রতিবেশকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না কোথাও।’ এছাড়া, নতুন নতুন চর জেগে ওঠায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলেও জানান শাহেদ শফিক।

দ্য ডেইলি সানের সিনিয়র রিপোর্টার আনিসুল ইসলাম নূর বলেন, বাংলাদেশের সৈকতগুলোর মতো বিশ্বের কোনো পর্যটন কেন্দ্রে এমন অব্যবস্থাপনা নেই। আমরা আমাদের সৈকতগুলোকে বিশ্বের কাছে ব্র্যান্ডিং করতে হলে আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যটন নগরীগুলোকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান তিনি।

সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদক কেফায়েত শাকিল তার পরিবেশ ও পর্যটনবিষয়ক নানা কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকতের কারণে কক্সবাজারের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে কক্সবাজার অপরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা চলছে কুয়াকাটার ক্ষেত্রেও। কুয়াকাটাকেও এখনো কোনো পরিকল্পনায় সাজানো হয়নি, সৈকত অপরিচ্ছন্ন থাকে, সৈকতকে ঘিরে বস্তির মতো টঙঘর গড়ে উঠছে, যে কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে এই স্থানটিও। সৈকতের যথাযথ দেখভালের অভাবে মানুষের মলমূত্রসহ নানা আবর্জনা পর্যটকের বিরক্তির কারণ হচ্ছে। দ্রুত উদ্যোগ না নিলে সম্ভাবনাময় এ স্থানটি জনপ্রিয়তা হারাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’

সিনিয়র সাংবাদিক শাহাদাৎ স্বপন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে কুয়াকাটার জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে; কিন্তু তার আগেই কুয়াকাটাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’ এখনো চাইলে কুয়াকাটাকে ঢেলে সাজানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে যত্রতত্র বাস না রেখে নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড তৈরি, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল তৈরি, ঝড়-ঝঞ্জা থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং বিচ মেনেজমেন্টক ব্যবস্থাকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

কুয়াকাটার লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, সমুদ্রের পানি আগে অনেক দূরে ছিল; কিন্তু বালু ক্ষয়ে ক্ষয়ে এখন সমুদ্র জনপদের দিকে এগিয়ে আসছে। বালু ক্ষয়ের কারণে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কুয়াকাটার মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। কুয়াকাটার উপকূলবাসীকে নিরাপদ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।


উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা ও পর্যটন তুলে ধরতে মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক ও সেভ আওয়ার সি’র উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, কুয়াকাটা বিশ্বের অন্যতম একটি সুন্দর সৈকত। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার পাশাপাশি আশপাশের উপকূলীয় বনকে ঘিরে এর অনেক সম্ভাবনা থাকলেও একে সেভাবে তুলে ধরতে না পারায় এখনো এ সম্ভাবনা অধরাই রয়ে যাচ্ছে। কুয়াকাটার পর্যটন সম্ভাবনা তুলে ধরতে সরকারের পাশাপাশি জাতীয় গণমাধ্যমগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে সেভ আওয়ার সি’র মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, করোনার সময় আমরা দেখেছি কক্সবাজারে ডলফিন দেখা গিয়েছিল। সেটা দেখতে করোনার মধ্যেও কক্সবাজার যাওয়ার চেষ্টা ছিল অনেকের। এটা প্রমাণ করে প্রাণী ও প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটন কেন্দ্রের মূল্য বাড়ায়। কিন্তু আমরা পর্যটন করতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করছি।

কক্সবাজারের তুলনায় কুয়াকাটায় এখনো প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে জানিয়ে এ পরিবেশবাদী নেতা আরো বলেন, কুয়াকাটার পর্যটন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এজন্য কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সৈকতে মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করা ও সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে কুয়াকাটার পর্যটন উন্নয়নে সবসময় সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা, সৈকত এলাকার টঙ দোকান তুলে নেয়া, পরিবেশ ট্যাক্স আদায়, পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও কুয়াকাটায় বিমানবন্দর করার প্রস্তাবনা দেন সেভ আওয়ার সি’র মহাসচিব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে আমি মেয়র হয়েছি। আমি স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তবে সমস্যা হলো এ নগরের উন্নয়নের কোনো ক্ষমতাই মেয়রের হাতে নেই। মাস্টারপ্ল্যান তৈরির আগে এসব সমস্যার সমাধান করাও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

বিচ মেনেজমেন্ট কমিটিতে স্থানীয়দের কোনো অংশগ্রহণ নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিচ মেনেজমেন্ট কমিটি চলে পটুয়াখালী থেকে। অথচ বিচ অবস্থিত কুয়াকাটায়। এতে বিচে কখন কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই জানে না কমিটি। ফলে অব্যবস্থাপনাগুলো অব্যবস্থাপাই রয়ে যায়। তাই বিচ মেনেজমেন্ট কমিটিতে ৫০ শতাংশ স্থানীয়দের যুক্ত করা জরুরি।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মেরিন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের সদস্য ইমাম হোসাইন সোহেল, রেজাউল করিম, ইকবাল ফরহাদ, তানভীর আহমেদ, কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী সাঈদ, উপকূলীয় মানব উন্নয়ন সংস্থার (সিকোডা) প্রধান নির্বাহী আনোয়ার হোসেন আনু প্রমুখ।

দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়ক
উল্লাপাড়ায় পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে

আপনার মতামত লিখুন