শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় বাড়ছে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ অক্টোবর ২০২২

পদ্মা সেতু পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় বিনিয়োগের দ্বার খুলে দিয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ সুবিধার কারনে প্রকৃতির অপরূপ বৈচিত্র্যে ভরপুর কুয়াকাটায় সরকারিভাবে নতুন প্রকল্প ও বেসরকারি উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ছে। 

স্থানীয় উন্নয়ন, আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন ধরণের নতুন-নতুন অবকাঠামো এখন গড়ে উঠছে কুয়াকাটায়। ইতিমধ্যে অন্তত ২০টি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। 

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়নে ১ হাজার ২১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। সৈকতের ১২ কিলোমিটার এলাকা রক্ষার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে কাজ শুরু হবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানিয়েছেন, ‘জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আমরা ছয় একর জমি পেয়ে গেছি। সেখানে ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে মাটি ভরাাট, সীমানা দেয়াল এবং নর্দমা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করি। এরপরই নতুন বাস টার্মিনালটি চালু করা হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়ক, নর্দমা-কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে হয়তো সময় লাগবে। তবে পর্যায়ক্রমে আমরা কুয়াকাটা পৌরসভাকে একটি সুন্দর ও আকর্ষনীয় পৌরসভায় উন্নীত করতে পারবো। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সৈকত এলাকাসহ পৌর এলাকায় আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার কাজ শেষ হবে। পাশাপাশি সৈকতের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে আরও তরান্বিত করা হবে বলে তিনি জানান।

সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি বলা হয় কুয়াকাটাকে। এর কারণ হলো একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। তা ছাড়া নিঃসীম জলরাশী, সমুদ্র বক্ষে জেলেদের মাছ ধরার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সমুদ্র পাড় ঘেঁষা বন-বনানী, নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাকে পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষনীয় করে তুলেছে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন এলাকায় ৪৩ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে পাঁচ তারকা মানের ‘বে-ব্রিজ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট’। গোল্ড স্যান্ডস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ১৮ তলা বিশিষ্ট আবাসিক এ হোটেল ভবনটির বেজমেন্টের কাজ শেষ হয়ে প্রথম তলার কাজ চলছে।

হোটেলটির পরিচালক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) বাহার শাহদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা কুয়াকাটায় অনেক আগেই জমি ক্রয় করেছি। কুয়াকাটার প্রতি উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের আগ্রহ থাকলেও এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অন্যতম এক প্রতিবন্ধকতা। পদ্মা সেতু প্রতিবন্ধকতা দূর করে আমাদের স্বপ্নের দ্বার খুলে দিয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় গত তিন মাস ধরে কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়েছে। এ কারণে আমরাও বিনিয়োগ করতে সাহস পেয়েছি।’ 

কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, গোল্ড স্যান্ডসের বে-ব্রিজ হোটেলটিতে যে কারও সাফ কবলা মালিকানায় বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকছে। এতে বিনিয়োগকারী যেমন নিজে ফ্রি-তে হোটেলে অবকাশ যাপন করতে পারবেন, আবার হালালভাবে আয় করারও সুযোগ থাকছে। যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উত্তরাধীকারসূত্রে ভোগদখল করার সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি কুয়াকাটায় ‘গোল্ড স্যান্ডস ট্যুরিজম সিটি’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ সিটিতে থাকছে থিম পার্ক, আউটডোর পার্ক, হেরিটেজ সাইট, কালচারাল ফ্যাসিলিটিজ, স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ফ্যাসিলিটিজ, ট্যুরিজম ইভেন্টস ইত্যাদি। কুয়াকাটায় পর্যটন খাতে তাঁদের বিনিয়োগ জনবান্ধব ও আকর্ষনীয় হবে বলে তিনি জানান।

কুয়াকাটার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বে-ব্রিজের মতো বহুতল বিশিষ্ট এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন অন্তত ২০টি আবাসিক হোটেল নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।

কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, গড়ে ওঠা মাছ ফ্রাইয়ের বাজার, চা-পানের দোকানদার, চটপটি বিক্রেতা, শুটকি বিক্রেতাদের কারণে সৈকতের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় এসব ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করা কার্যক্রম পরিচালনা করেন উপকূলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মৎস্য ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্রের নীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিসের ইকোফিশ-২ অ্যাক্টিভিটির পটুয়াখালী জেলার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি।

তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকি। যখন বলি তারপর কয়েকদিন ঠিক থাকে, আবার সবকিছু পাল্টে যায়। এ পরিবেশকর্মী মনে করেন,  স্থানীয় প্রশাসন কঠোর হলে সব ঠিক হয়ে যায়। সরকারি-বেসকারি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডগুলো ফলপ্রসু হবে।

খাগড়াছড়ির পর্যটন এলাকায় হোটেল ভাড়া-খাবারের দাম অস্বাভাবিক
আমিরাতে ভ্রমণ ভিসায় যেসব পরিবর্তন

আপনার মতামত লিখুন