শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

বিপন্ন নাফ নদের গাংচিল

কক্সবাজার প্রতিনিধি
০৫ মার্চ ২০২২
সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ থেকে গাংচিলকে চিপস খাওয়াচ্ছেন এক পর্যটক।

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ থেকে গাংচিলকে চিপস খাওয়াচ্ছেন এক পর্যটক।

কক্সবাজারে টেকনাফের নাফ নদের অন্যতম সৌন্দর্য হাজার হাজার গাংচিল। সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গাংচিলের ওড়াউড়ির দৃশ্য দেখে পর্যটকরা মোহিত হন। কিন্তু তাদের ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট গ্রহণ এবং প্রজননক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় এ পাখি এখন বিপন্ন।

টেকনাফের কেরুনতলী ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পথে জাহাজ ছাড়ে প্রতিদিন। কয়েকদিন আগে এই জাহাজের যাত্রী ছিলেন সমকালের এ প্রতিবেদক। জেটি থেকে জাহাজ ছেড়ে দিতেই দেখা যায় শত শত গাংচিল চক্কর দিচ্ছে জাহাজকে ঘিরে। জাহাজযাত্রী পর্যটকরা তাদের খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ছুড়ে দিচ্ছেন। চিপস, বিস্কুট, খাবারের পরিত্যক্ত প্যাকেট থেকে কলার খোসা সবই ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব উচ্ছিষ্টাংশ খাচ্ছে পাখির দল, এই দৃশ্য দেখে অপার আনন্দ পর্যটকদের। জাহাজের কর্মীরা চেষ্টা করেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছেন না। সবাই পাখির কাণ্ডকারখানায় মুগ্ধ। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, উচ্ছিষ্ট খাবার গ্রহণের ফলে এ পাখি ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম শরীফুজ্জামান বলেন, সাগরের অন্যতম সৌন্দর্য গাঙচিলের খাদ্য হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। চিংড়ি জাতীয় অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং পানির ওপর ভাসমান পোকামাকড় তাদের খাদ্য। মানুষের ফেলে দেওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট, পলিথিন ইত্যাদি পেটে গেলে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে প্রজননক্ষমতা।

তিনি বলেন, এ পাখি খোলা জায়গায় ডিম পাড়ে। তাই মানুষের পায়ের চাপে ডিম নষ্ট হয়। মানুষের উপস্থিতিতে সংকুচিত হয়ে আসছে তাদের প্রজননক্ষেত্র। আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নির্জন স্থান ছিল এই সামুদ্রিক পাখির প্রজননভূমি। এখন দ্বীপে গাঙচিলের উপস্থিতি তেমন আর নেই। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ উপকূলে সমুদ্রে টন টন প্লাস্টিক পদার্থ, পলিব্যাগসহ নানা ক্ষতিকর পণ্য ফেলছেন পর্যটকরা। এখন নাফ নদসহ আশপাশের এলাকাতেও একই পরিস্থিতি। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ হচ্ছে ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য।

সেন্টমার্টিনের স্থানীয় অধিবাসীরাও জানালেন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য হারিয়ে গেছে। এখানে পাখি ও সামুদ্রিক প্রাণিকুলের প্রজননক্ষেত্র আর নেই। হারিয়ে গেছে অনেক পাখি। দ্বীপ ছেড়ে গেছে গাঙচিলের দল। বিপুল মানুষের উপস্থিতি ও নানা উপদ্রবে এ অবস্থা।

মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন সামুদ্রিক কচ্ছপ ও পরিযায়ী পাখি গাঙচিলসহ অনেক প্রাণীর প্রজননক্ষেত্র ছিল।

সামুদ্রিক কাঁকড়া ও নানা প্রজাতির উভচর প্রাণীর প্রজননভূমিও এই দ্বীপ। কিন্তু পর্যটকদের উপদ্রবে এখন সামুদ্রিক এই সব প্রাণীর দেখা মেলে না দ্বীপে।

সেন্টমার্টিনের পরিবেশকর্মী রফিকুল ইসলাম জানালেন, দ্বীপে দুই শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্টুরেন্টসহ কয়েকশ দোকান রাতে সৌরবিদ্যুৎ ও জেনারেটরের আলোতে আলোকিত থাকে। এর ওপর শব্দদূষণের কারণে দ্বীপে সামুদ্রিক কচ্ছপসহ প্রাণিকুলের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণে নির্বিচারে কর্তন হয়েছে নানা প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদ।

কক্সবাজারে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ নাজমুল আলম বলেন, সেন্টমার্টিনে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সরকার এ দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। কিন্তু পর্যটন বিকাশের কারণে দ্বীপের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়াতে জাহাজগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। সোমবারও তিনটি জাহাজকে জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দ্বীপে নতুন করে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন জোন তৈরি করার কাজ হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। বেসরকারি একটি সংস্থাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

সুন্দরবনে ৪ ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে
কাপ্তাইয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে কায়াকিং ক্লাব

আপনার মতামত লিখুন