শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

হ্রদের বুকে ছোট্ট দ্বীপে আনন্দবাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার
১০ জানুয়ারি ২০২১

চারদিকে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি থৈথৈ করছে হ্রদজুড়ে। রৌদ্রোজ্জ্বল হ্রদে সকালে থাকে একরূপ, সন্ধ্যায় দেখা মেলে সূর্যাস্তের আলোকচ্ছটায় নয়াভিরাম রোদেলা বিকেল। প্রাকৃতিক সম্পদের ভরপুর এই হ্রদের বুকে আছে ছোট্ট একটি দ্বীপ। সেই এক টুকরো দ্বীপই এখন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠেছে ঘুরে বেড়ানোর প্রথম পছন্দের জায়গা। আর পাহাড়ে আসা পর্যটকদের দ্বীপে বসে রাতে জলরাশির মিতালি ও হ্রদের প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ মধুময় করে তুলতে আধুনিক সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এটি। দ্বীপের মধ্যে পানি ঘেঁষে ঝুম ঘরের আদলে ট্রি কটেজ, ব্যাম্বো কটেজ রাঙামাটির পর্যটন খাতে এনেছে নতুনত্ব। দ্বীপের চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বিলাসী কটেজও। ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য তাঁবুতে রাত্রিযাপনের অনন্য সুযোগও রয়েছে দ্বীপে। হ্রদের পানিতে গা ভেজাতে যাদের ভয়, তাদের জন্য আছে সুইমিং পুলে শরীর ভেজানোর সুযোগ। বড়দের মতো শিশুদের বিনোদনের ষোলকলা পূরণ করতে আকর্ষণীয় রাইড ও খেলার সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পেল্গ গ্রাউন্ড। হ্রদঘেরা এই দ্বীপটির নাম 'ডিভাইন লেক আইল্যান্ড'। এটি রাঙামাটির লেবুছড়ি এলাকায় অবস্থিত।

এই পর্যটনকেন্দ্রের আরেকটি বিশেষত্ব হলো রিসোর্টের জমিতে গড়ে তোলা নিজস্ব বাগানের শাক ও সবজি এবং লেকের তাজা মাছ দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন। আছে বারবি কিউ পার্টি করার সুযোগও। রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের ১৫ জন বন্ধু মিলে দ্বীপের এই রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।

ডিভাইন লেক অ্যাইল্যান্ডের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. ইমতিয়াজ আসাদ বলেন, 'গত ১০ বছরে রাঙামাটির পর্যটন খাতে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। তাই পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে আমরা নিজ উদ্যোগে কিছু রিসোর্ট করেছি। আগে পর্যটকরা রাঙামাটি এসে হতাশ হয়ে ফিরে গেলেও এখন হ্রদ, পাহাড় ও প্রকৃতির স্বাদ নিয়ে আনন্দ উপভোগ করেই ফিরে যাচ্ছেন। পাহাড়ে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের উন্নত, নিরাপদ ও প্রকৃতিবান্ধব একটু ভিন্নরকমভাবে থাকা ও খাওয়ার সুযোগ করে দিতেই রিসোর্টটি গড়ে তুলেছি। সাধারণ রিসোর্ট থেকে এটা একটু ভিন্ন। চারদিকে পানি, মাঝখানে ডিভাইন লেক আইল্যান্ড রিসোর্ট।'

'ডিভাইন লেক আইল্যান্ড' নতুন পর্যটনকেন্দ্রটি করোনা মহামারির কারণে গত আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে চালু হয়। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে থাকা দ্বীপ রিসোর্টে দুটি বিলাসী কটেজ, পাঁচটি ব্যাম্বো ট্রি কটেজ ও ১০টি তাঁবু আর সুবিশাল রেস্তোরাঁয় বিনোদন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন পর্যটকরা।

রাঙামাটি শহরের আসাম বস্তির সেতু থেকে পর্যটকদের নিজস্ব নৌকায় করে ডিভাইন লেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। দ্বীপের মাঝে রাত কাটানোর জন্য ব্যাম্বো ট্রি কটেজটি ভূমি থেকে একটু ওপরে গাছের ডগায় তৈরি করায় পর্যটকদের কাছে এটি বেশি লোভনীয়। কটেজ থেকেই উপভোগ করা যায় হ্রদ পাহাড়ের রূপ। এ কটেজে দুই থেকে চারজন থাকার ব্যবস্থা আছে। শুধু রাত্রিনিবাস নয়, নাটক কিংবা মিউজিক ভিডিও বা যে কোনো ধরনের শুটিংয়ের জন্য উত্তম পরিবেশ রয়েছে এখানে। রিসোর্টের ভেতরেই রয়েছে আমবাগান, ফলদ গাছ ও বৈচিত্র্যময় ফুলের বাগান। একেবারে প্রাকৃতিক পরিবেশে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করে রাত কাটানোর মজাই অন্যরকম। হ্রদের দ্বীপে গড়ে ওঠা এ রিসোর্টে পর্যটকদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে রোমাঞ্চপ্রিয়দের রাত্রিযাপনে ১০টি তাঁবুর ব্যবস্থাও রয়েছে। দুই থেকে চারজন একটি তাঁবুতে কাটাতে পারেন রাত।

'ডিভাইন লেক আইল্যান্ড'-এর কর্মকর্তা কাজি সোহরাব পারভেজ বলেন, 'আমাদের দ্বীপ রিসোর্টের মূল আকর্ষণ হলো হ্রদের চারদিকে পানি তার মাঝখানে রাতযাপন। সঙ্গে রয়েছে হ্রদের পাশে বসে মাছ ধরা, বারবি কিউ পার্টি করার সুযোগ-সুবিধা। রিসোর্টে রাত্রিযাপনের জন্য বিলাসী কটেজ পাঁচ হাজার টাকা এবং ব্যাম্বো ট্রি কটেজ তিন হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল বাতেন বলেন, 'রাঙামাটিতে হ্রদ, ঝরনা ও পাহাড় ঘিরে পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগানো হচ্ছে না। পাহাড়ের পর্যটন খাত এগিয়ে গেলে স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকাও সমৃদ্ধ হবে।'

তিন পার্বত্য জেলায় বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব
‘বিদেশ ভ্রমণে যেতে হবে না, বিদেশিরা ঢাকায় ভ্রমণে আসবে’

আপনার মতামত লিখুন