শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ ঝুলন্ত ব্রীজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি
০৯ মার্চ ২০২২
রামকোট ঝুলন্ত সেতু

রামকোট ঝুলন্ত সেতু

কক্সবাজারের রামুতে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নতুনমাত্রায় যুক্ত হয়েছে ঐতিহাসিক রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে সদ্য নির্মিত রামকোট ঝুলন্ত সেতু।পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ ও রামুর পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে বিহার কতৃপক্ষএই সেতুর নাম করন করেছেন রাংকুট পদ্মবীনা ঝুলন্ত ব্রীজ। ইতিমধ্যে এটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে।

রামু কক্সবাজারের একটি উপজেলা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার সময় পথে রামুর অবস্থান। জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ রম্যভূমি। রামুতে সড়কের দুইপাশে সুদৃশ্য সারিসারি রাবার বাগান। যা আপনার চোখকে জুড়িয়ে দেবে। উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে সবুজ অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার।

রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ বিহার। এই বিহারকে কেন্দ্র করে এক সময় এ অঞ্চলে বৌদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। মৌর্য বংশের তৃতীয় সম্রাট অশোক এটি স্থাপন করেন। অনেকের কাছে এটি রামকোট বৌদ্ধ বিহার নামেও পরিচিত।

রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের আবাসিক প্রধান তাপস সেন ভান্তে বলেন, রাংকুটের বর্তমান বয়স প্রায় ২৩শত বছর, এবং এটির প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট অশোক। সম্রাট অশোক প্রায় ৮৪ হাজার চৈত্য নির্মাণ করেছিলেন।

রামুর চৌমুহনী স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে রাজারকুল এলাকায় পাহাড় চূড়ায় মন্দিরটি অবস্থিত। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ৩০৮ খ্রিস্টপূর্বে সম্রাট অশোক এটি নির্মাণ করেন। প্রবেশ পথের দুথধারে সারিসারি ঝাউবাথি আর সাজানো গুছানো বাগান দেখে আপনার মনপুলকিত হবেই। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠেই দেখবেন বড়বড় দুটি বুদ্ধমূর্তি। বৌদ্ধদের মতে, এর একটিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের বক্ষাস্থি স্থাপিত হয়েছে। আশেপাশে ঘুরলে আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে পাবেন এখানে। বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থস্থান এটি।

মহাবিহারের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় উপাসনারত বুদ্ধের মূর্তি। ফটকের ডানপাশে রয়েছে উপাসনারত ৩৫টি বুদ্ধ মূর্তি আর বামপাশে রয়েছে ৫০টি। মূল ফটক থেকে কিছুটা সামনে এগোতেই চোখে পড়বে ১৪শ বছরের পুরনো বটবৃক্ষ । চৈনিক পরিব্রাজক হিউ এন সাং-এর ভারত ও বাংলাদেশে বুদ্ধের অবস্থানস্থল আবিষ্কারের সময়ে রোপিত হয় এই বৃক্ষটি। এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে রয়েছে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ত্রিপিটক হাতে সম্রাট অশোক মহারাজার ২৩ ফুট উচু ভাস্কর্য।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে প্রাচীন আরাকানের ধন্যবতী (ধাঁঈয়াওয়াদি) নগরের রাজা মহাচন্দ্র সুরিয়ার আমন্ত্রণে গৌতম বুদ্ধ তার শিষ্যদের নিয়ে তৎকালীন সমতটের চৈতগ্রামের (বর্তমান চট্টগ্রাম) উপর দিয়ে ধন্যবতী নগরে যাওয়ার পথে এই স্থানে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করেছিলেন।সম্রাট অশোক বুদ্ধের ৪৫ বছর ব্যাপী ৮৪ হাজার ধর্মবানীকে বুদ্ধ জ্ঞানের প্রতীকরূপে বুদ্ধের অস্থি সংযোজিত ৮৪ হাজার চৈত্য স্থাপন করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম রামুর এ চৈত্যটি।

পরবর্তীতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮ অব্দে আরাকান রাজা চন্দ্রজ্যোতি (চেঁদি রাজা) কর্তৃক বুদ্ধের উক্ত বক্ষাস্থি সাদা পাথরের ৬ ফিট উঁচু বুদ্ধবিম্বের মাথায় সংযোজিত করে বুদ্ধবিম্বটি স্থাপন করেন। সময়ের বিবর্তনে রাংকূটের অস্তিত্ব বিলীন হল হয়ে যায়। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীলংকান পুরোহিত জগৎ জ্যোতি মহাস্থবির রামকোট বৌদ্ধ বিহারটি সংস্কার পূর্বক পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৩ মার্চ থেকে প্রতিদিন ইউএস বাংলার ঢাকা-চেন্নাই ফ্লাইট
বাগানের গোলাপগুচ্ছ হতে

আপনার মতামত লিখুন