রোববার, ০৫ মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঘুরে আসি

ছনখোলা থেকে পর্যটন

ডেস্ক রিপোর্ট
০২ জুলাই ২০২২

একসময়ে ছিল রাবার বাগান। একই সঙ্গে ছিল ছনখোলা। বাবার লালিত স্বপ্নকে দীর্ঘ সাধনায় সন্তান বাস্তবে রূপ দেওয়ায় সেই রাবার বাগান ও ছনখোলাই আজ পরিণত হয়েছে দেশের পর্যটন শিল্পের এক অনন্য প্রতিষ্ঠানে। দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে যার সুনাম। হবিগঞ্জের সন্তান লন্ডনপ্রবাসী কামাল হোসেন প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘দ্য প্যালেস’। এ লাক্সারি রিসোর্টটি হাওর, বাঁওড়, পাহাড়ি টিলা আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হবিগঞ্জ জেলাকেও নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

বাহুবল উপজেলার বুক চিরে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। পুটিজুরী ইউনিয়নের বৃন্দাবন চা বাগানের পাশের টিলায় বিশাল এলাকা জুড়ে একসময় ছিল রাবার বাগান ও ছনে ভরপুর। এলাকার লোকজনের কাছে জায়গাটি পরিচিত ছিল ‘কামালের বাগান’ নামে। প্রবাসী কামাল হোসেনের বাবা আকদ্দছ আলী ছিলেন হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির একাধিকবারের সভাপতি আকদ্দছ আলী রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। তিনি ছিলেন তৎকালীন হবিগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা এবং পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। আকদ্দছ আলীর পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট কামাল হোসেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার সুখ্যাতি ছিল জেলাজুড়ে। সিলেট ক্যাডেট কলেজে লেখাপড়া শেষে পাড়ি দেন যুক্তরাজ্যে। দেশে ফিরলেই ছুটে যেতেন রাবার বাগানে। বাবার নির্দেশ ছিল এ বাগানে এমন কিছু করতে হবে যা হবিগঞ্জকে নতুন করে তুলে ধরা যায়। বাবার আদেশ শিরোধার্য মেনে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন কামাল।

দেশে পর্যটন এলাকা হিসেবে চট্টগ্রামের পরেই আসে সিলেটের নাম। কামাল হোসেন পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তার রাবার বাগানকে রিসোর্টে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেন। তবে এজন্য পরিবেশ ও প্রতিবেশের কোনো ক্ষতি করেননি। রাবার ও অনন্য গাছগাছালি কাটাকাটি না করেই ‘কামালের বাগান’ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে আজকের ‘দ্য প্যালেস’ রিসোর্ট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা-যাওয়ার ফাঁকে কামাল হোসেন দীর্ঘদিন পর সন্ধান পান সিলেট ক্যাডেট কলেজে তার জুনিয়র শিক্ষার্থী আরিফুর রহমানের। দুজনের মধ্যে কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে রাবার বাগানকে ঘিরে তার (কামাল) বহুদিনের আকাক্সক্ষার কথা। আরিফও তার সঙ্গে একমত হন। অন্যান্য ব্যবসায়িক অংশীদারকে নিয়ে কামালের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। একপর্যায়ে ২০১১ সালে শুরু হয় প্যালেস নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। ১২২ একর জমির বিরাট অংশজুড়ে দেশি-বিদেশি স্থপতিদের সহায়তায় গড়ে তোলা হয় ‘দ্য প্যালেস’। কামাল হোসেন জানান, রিসোর্টটি তৈরিতে রূপালী ব্যাংকের ঋণ সহায়তা পেয়েছেন।

অংশীদাররা জানান, টিলার প্রাকৃতিক পরিবেশকে অক্ষুণœ রেখে কোনো গাছগাছালি না কেটে আধুনিক স্থাপত্য নকশায় গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্ট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। সংযোগ নেওয়া হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অটুট রাখতে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়া হয়েছে। পাঁচ তারকা মানের হোটেল টাওয়ারসহ ২৫টি ভিলা রয়েছে রিসোর্টে। পুরো রিসোর্টকে সবুজায়নে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ।

রিসোর্টটিতে যেতে আঁকাবাঁকা পথে চোখে পড়ে চা বাগান ও গ্রামীণ জনবসতি। কামাল হোসেন জানান, কাজ শুরুর পর পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায় পল্লীবিদ্যুৎ। এছাড়া গ্যাস জেনারেটরের সাহায্যে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি কাজেই সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তার পাশাপাশি এলাকাবাসীর সহযোগিতা পেয়েছেন তারা।

রিসোর্ট ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ের সঙ্গে পাহাড়ের সংযোগ করা হয়েছে স্টিলের ব্রিজ দিয়ে। পাঁচ তারকা মানের হোটেল ছাড়াও এখানে রয়েছে চারটি বড় সভাকক্ষ, পাঁচটি রেস্টুরেন্ট, টেনিস, ব্যাডমিন্টন ও বাস্কেটবল কোর্ট, কিডস জোন, ফিশিং জোন, সিনেপ্লেক্স, গেম জোন, সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, বার, হেলিকপ্টার রাইড, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ ও ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থাসহ আরও অনেক সুবিধা।

রিসোর্টের অতিথি বাবলী চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানকার চমৎকার নির্মাণশৈলী ও মনোরম পরিবেশ মনকে ভালো করে দেয়। এ যেন সত্যিই রাজপ্রাসাদ।’

কামাল হোসেনের স্ত্রী ও রিসোর্টের অংশীদার লিনা খাতুন বলেন, ‘রিসোর্টটির সৌন্দর্য দেখে অতিথিদের অনেককেই বিস্মিত হতে দেখেছি। ভালো জিনিসের মর্যাদা পাওয়া খুব কঠিন নয়। আমাদের রিসোর্টের আধুনিকতা ও মানসম্মত সেবার জন্য ২০১৮ সাল থেকেই রিসোর্ট ক্যাটাগরিতে ট্রিপ অ্যাডভাইজের সার্টিফিকেট পেয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে দ্য প্যালেস। কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঙ্গে আমি নিজেও সঙ্গে থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

ওআইসির দেশগুলোকে পর্যটন মেলা করার আহ্বান
পরিকল্পিত পর্যটন শিল্প ও পদ্মা সেতু

আপনার মতামত লিখুন