শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সীমানার ওপারে

যৌন আইন ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনে যেভাবে ক্ষতি করবে

ডেস্ক রিপোর্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২২

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের পছন্দের স্থান। কিন্তু করোনা মহামারির সময় নানা বিধিনিষেধের কারণে বালি দ্বীপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় আবার আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা সেখানে যাওয়া শুরু করেছেন। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, ইন্দোনেশিয়ার বিপর্যস্ত পর্যটনশিল্প এখন পুনরুদ্ধারের পথে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিক এমন সময়ে এসে গত মঙ্গলবার বিয়ে না করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্ট একটি ফৌজদারি আইন পাস করেছে। এ আইন শুধু ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়, দেশটিতে ভ্রমণ করতে যাওয়া অবিবাহিত বিদেশি পর্যটকেরাও এর আওতায় পড়বেন। দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে পর্যটন খাতে নতুন এ আইনের নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

তবে ইন্দোনেশিয়ায় নতুন এ আইন এখনই কার্যকর হচ্ছে না। আইনের বিধিবিধান তৈরি করতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে। 

পর্যটনশিল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন এ ফৌজদারি আইনের কারণে বিদেশি পর্যটকদের ইন্দোনেশিয়ায় আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর কারণে দেশটির বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পর্যটন রাজস্ব বিপুলভাবে কমে যাবে। ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় ট্যুরিজম গ্রুপ দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব দ্য ইন্দোনেশিয়ান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সিসের (আসিটা) চেয়ারম্যান পুতু উইনাস্ত্রা বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে এ আইন বিশেষ করে যৌনতা ও বিয়ের বিষয়টি বালির পর্যটনশিল্পের জন্য খুব প্রতিকূল হবে।’  

সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে যৌন–সম্পর্কিত আইনটি পাস হয়েছে। দেশটির আইনপ্রণেতারা বলেছেন, তাঁরা এই বৈচিত্র্যময় দেশে ‘জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা’ মেটানোর চেষ্টা করেছেন।

দেশটির আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াসোনা লাওলি মঙ্গলবার বলেন, একটি বহুসাংস্কৃতিক ও বহুজাতিক দেশের জন্য একটি ফৌজদারি আইন তৈরি করা মোটেও সহজ ছিল না, যে আইন আবার সবার স্বার্থ সংরক্ষণ করবে।

পুতু উইনাস্ত্রা বলেন, নতুন এ আইনে তাঁরা হতাশ হয়েছেন। কারণ, তাঁদের ধারণা ছিল, সরকার বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়ানোর বিষয়ে খুব উত্সাহী। এখন এমন আইন হলো যা, পর্যটক ও পর্যটনশিল্পের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াল।

বিশ্বের অধিকাংশ পর্যটন হটস্পটের মতো করোনাকালে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বালি দ্বীপ। বালিতে প্রতি মাসে ৫ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। কিন্তু করোনাকালের পুরো ২০২১ সালে বিদেশি পর্যটকদের এ সংখ্যা মাত্র ৪৫-এ নেমে এসেছিল।

করোনা নিয়ন্ত্রণের পর সরকার ও পর্যটনশিল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ খাত থেকে দারুণভাবে পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস করেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, এ খাত থেকে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আনা সম্ভব হবে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল পূর্বাভাস দিয়েছিল, আগামী ১০ বছরে ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনশিল্পের আয় ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে। খাতটি দেশের জিডিপিতে প্রায় ১১৮ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখবে। এ ছাড়া পরবর্তী এক দশকের জন্য প্রতিবছর ৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

স্থানীয় গাইড কেন কাতুত বলেন, গত নভেম্বরে বালিতে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পর্যটনশিল্প সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘যারা মহামারির সময় থেকে কাজের বাইরে ছিল, তাদের জন্য জি-২০ সম্মেলন দারুণ কাজ ছিল। এ সম্মেলন সত্যিই বালিতে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে।’

নতুন পাস হওয়া ফৌজদারি আইনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় দেশটির নাগরিক বা বিদেশি নাগরিক যে কেউ বিয়ে না করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ হবে। এ ছাড়া ফৌজদারি দণ্ডবিধির আওতায় প্রেসিডেন্ট কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমাননা এবং ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রীয় আদর্শবিরোধী যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এ আইন ঠিক কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি।

আসিটার চেয়ারম্যান পুতু উইনাস্ত্রা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘পর্যটকদের (বালিতে আসা) কি এখন থেকে প্রমাণ দিতে হবে যে তাঁরা বিবাহিত? তাঁরা বিবাহিত কি না, এ বিষয় কি আমাদের জানতে চাওয়া উচিত হবে? এখন বিদেশি পর্যটকেরা বালি ভ্রমণের আগে দুবার চিন্তা করবেন। কারণ তাঁরা জানেন, আইন লঙ্ঘন করলে তাঁদের জেল হতে পারে।’  

অধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে, নতুন এ আইন নারী ও সমকামী ব্যক্তিদের ওপর কীভাবে প্রয়োগ করা হবে?

দেশটির হোটেল কর্তৃপক্ষ আইনটির বিরোধিতা করে বলেছে, হোটেল বোর্ডারদের ওপর এমন নজরদারি তাদের পক্ষে অনেক কঠিন হবে।

দ্য ইন্দোনেশিয়ান হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (পিএইচআরআই) নির্বাহী পরিচালক ইদা বাগাস পুরওয়া সিদমেন বলেন, ‘পর্যটকেরা বিবাহিত কি না, তা জানতে চাওয়া অসম্ভব কাজ। কারণ, এটি খুবই ব্যক্তিগত একটি প্রসঙ্গ। এটা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে।’

ইদা বাগাস পুরওয়া সিদমেন মনে করেন, জনগণের প্রতিক্রিয়ার পর সরকার এ আইন পর্যালোচনা করবে। তিনি বলেন, ‘নতুন আইনের কারণে যদি আমাদের এখানে বিদেশি পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কী হবে? আমরা কি করোনা মহামারির সময় যে অবস্থায় ছিলাম, সে অবস্থায় ফিরে যাব?’

বিশ্বকাপ ফুটবল বাণিজ্য ও পর্যটন বৃদ্ধির সুযোগ: আমিরাতের অর্থমন্ত্রী
পর্যটন সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটি গঠন

আপনার মতামত লিখুন