শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মতামত

নিস্তব্ধ ধানমন্ডি লেকের নতুন রূপ

সাজিদ আরাফাত
১৭ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসে ভুগছে মানুষ। এর উল্টোপিঠে ভিন্নচিত্র। মানুষ ভুগলেও প্রকৃতি যেন হাসছে। মনে হয় নতুন রূপ, নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আবির্ভূত হয়েছে সতেজ রূপে। 

মানুষের যাপিত জীবনে যখন ছেদ পড়লো, কলকারখানা বন্ধ হলো, যান চলাচল বন্ধ হলো ঠিক তখনই নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলো চারপাশের প্রকৃতি। 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফিরে এলো লাল কাঁকড়ার দল। দেখা মিললো ডলফিনের। মানুষের একটুখানি অনুপস্থিতিতে প্রাণীকূল একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো! 

বেশিদূরে যেতে হবে না। লকডাউনের শহর ঢাকাতেই মিলবে অপরূপ সৌন্দর্যের দেখা। দূষণমুক্ত ঢাকা সেজেছে নানা রূপ আর রঙের পসরায়। কিন্তু ঘরবন্দি মানুষের তা দেখবার উপায় নেই! 

ধানমন্ডি লেকের কথাই বলা যাক। এর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা আত্মার। কারণে-অকারণে আড্ডা, ঘোরাঘুরি কিংবা মাঝে মাঝে সকালে হাঁটতে যাওয়া। সবমিলিয়ে চেনা জায়গা। 

গেল প্রায় তিন মাস লেকে যাওয়া হয়নি। বাসা-অফিস-বাসা, এই রুটিনে বাঁধা পড়েছে জীবন। যদিও একঘেঁয়ে কিন্তু নিরূপায়। হঠাৎ সুযোগ মিললো লেকে যাবার। লেকে ঢোকার পথেই চক্ষু অনেকটা চড়কগাছ! কয়েকমাস আগে যে চিত্র ছিল তার ঠিক উল্টো। যতোই ভেতরে ঢুকছি মনে হয় যেন কোন গহীন অরণ্যে প্রবেশ করছি। চারপাশে সবুজ আর সবুজ। বেশ জনমানবহীন। নিরিবিলি, নি:স্তব্ধ। দু’একজনকে দেখা যায় দূরে দূরে। মানুষের পদচারণা না থাকায় লেকে বেড়েছে সবুজের সমারোহ। এক কোণায় দেখা মিললো থোকায় থোকায় বাগানবিলাসের। আর লেকের পানি? সেও নিজেকে সবুজে বিলীন করে দিয়েছে। থরে থরে সাজানো লাল পদ্ম। দেখলে মন উদাস হবে অনায়াসেই।

৩২ নম্বর থেকে সামনের দিকে একটু এগুলেই ডিঙি নামের একটি স্পট। স্বাভাবিক সময়ে এখানে লোকে লোকারণ্য থাকতো। এখন কেউ নেই। ডিঙি নৌকাগুলোর ব্যস্ততা নেই। অলস পড়ে আছে। আর এই সুযোগে লেকের পানিও মনে হলো আপন মনে ঢেউ খেলছে। ধানমন্ডি ৮ নম্বর ব্রিজ পেরোলেই রবীন্দ্র সরোবর। এইতো কিছুদিন আগেও মানুষের ভিড়ে যেখানে পা রাখাই মুশকিল হয়ে পড়তো, সেখানেই যেন রাজ্যের শূন্যতা। অবাধ বিচরণ নেই কারো। কোলাহল নেই। নেই গলা ছেড়ে গান গাইবার মানুষ। এমন নি:স্তব্ধাই হয়তো কাম্য ছিলো প্রকৃতির। এর ফাঁকেই নিজেকে মেলে ধরেছে এখানকার ঘাস, লতাপাতারা।

হয়তো আবার স্বাভাবিক হবে পৃথিবী। পুরনো ব্যস্ততা ফিরবে। কিন্তু প্রকৃতির এই রূপ, গন্ধ কি স্বাভাবিক থাকবে? মানুষের কোলাহলে বিলীন হবে নাতো আবার! তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। মানুষ মুক্তি পাক, প্রকৃতিও আপন আলোয় উদ্ভাসিত থাকুক, এটাই চাওয়া।

লেখক : প্রতিবেদক, সময় টেলিভিশন

লেখকের তোলা আরও কিছু ছবি

পর্যটনে করোনার ধাক্কা!
ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করতে চায় ইশাত

আপনার মতামত লিখুন