বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

আরাকান সড়কের দ্রুত সম্প্রসারণ দরকার

রুপম চক্রবর্তী
১১ জানুয়ারি ২০২২

যতই দিন যাচ্ছে ততই মানুষের জীবন যাত্রা শহরমূখী হচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কর্ম সংস্থানের জন্য গ্রাম থেকে শহরে যান। আবার সন্ধ্যাবেলায় শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসেন। এই আসা যাওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে সড়ক পথ।

বাংলাদেশের পুরনো সড়ক পথগুলোর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আরাকান সড়ক উল্লেখযোগ্য। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এবং হাজার হাজার গাড়ি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক তথা আরাকান সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। মহাসড়কটি দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর কক্সবাজার দেশের পর্যটন বিজ্ঞাপনের পোস্টার গার্ল। সমুদ্র, ঝাউবন, ঝর্ণা আর দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড়ের রূপ দেখতে প্রতিবছর ৬০-৭০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার আসেন। 

বান্দরবান, কক্সবাজার  দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা। অসংখ্য পর্যটক বহনকারী গাড়ি এই সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করে। শঙ্খ এবং মাতামুহুরি নদীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন শীতকালীন সব্জির চাহিদা দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। তাই কৃষিজাত পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে এই সড়কের গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে এই সড়কের প্রশস্থতা খুব বেশি নয়। দিনের পর দিন মহাসড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে।

এ সড়কে দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের চাপ। কক্সবাজারে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ব্যস্ততম এই সড়ক। ২০১৭ সালে কক্সবাজারের এক জনসভায় দুই লেনের এ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কটির চারলাইনে উন্নীত করা হলে জনসাধারণের যাতায়ত ও পণ্য পরিবহণে সুবিধা হবে।

কক্সবাজার ঘিরে সরকারের জ্বালানি উৎপাদন অঞ্চল, সাবরাং ও সোনাদিয়ায় বিশেষায়িত পর্যটন অঞ্চল এবং মহেশখালীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে  দুটি ইমার্জেন্সি লেনসহ ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ছাড়াও ধীরগতি এবং স্থানীয় গাড়ি চলাচলের জন্য দুটি সার্ভিস লেন নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকার। পটিয়া থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত দেড় লেনের সড়কটি সবচেয়ে খারাপ, আঁকাবাঁকা ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ। 

মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার। দুই ঘণ্টায় এই দূরত্ব অতিক্রম করতে পারলেও কক্সবাজার যেতে  সময় লেগে যায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। দূরপাল্লার গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে।  শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর পরে মইজ্যারটেক, ক্রসিং, পটিয়ার শান্তিরহাট, কলেজ বাজার, বাদামতল, মনসা, চৌমুহনী, ভেল্লাপাড়া, মুন্সেফ বাজার, থানার মোড়, ডাকবাংলোর মোড়, বাসস্ট্যান্ড, পোস্ট অফিস মোড়, চন্দনাইশের রৌশন হাট, বাগিচা হাট,  দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলী এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন যানজটে পর্যটকসহ স্থানীয় যাত্রীরা গাড়িতে আটকে থাকে।

রাস্তাটির বেহাল দশা দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। দুই লেনের মূল সড়কটি মাত্র ২৪-২৫ ফুটের। সড়কের উভয় পাশের শত শত একর জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। সড়কের অবস্থা নাজুক করে তুলেছে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বাজার ও  বাঁক এবং বিভিন্ন দোকান ।

অবৈধ হাট-বাজার ছাড়াও রাস্তার দু’পাশে সিএনজি, মাহেন্দ্র, মাইক্রোসহ অন্যান্য যানবাহন রাখাও যানজট সৃষ্টির মূল কারণ। সড়কের বিভিন্ন অংশে থাকা বাঁকগুলো এতই বাঁকানো যে, একদিক থেকে গাড়ি এলে অন্যদিকে দেখা যায় না। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। এই বাঁকগুলো অনেক মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছে। এসব বাঁক সোজা করা জরুরী। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ  বিভিন্ন  পয়েন্ট পটিয়া, দোহাজারী, কেরানীহাট, লোহাগাড়া ও চকরিয়ায় এই বাঁকগুলো দেখা যায়। এসব বাঁক পয়েন্টে যানজট হয় এবং আশে পাশে বাজার রয়েছে।

এসব পয়েন্টে প্রয়োজন অনুপাতে আন্ডারপাস-ওভারপাস নির্মাণ করতে হবে। রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক দ্রুত চার লাইন অথবা ছয় লাইনে উন্নীত করা হোক। কর্মরত চালকদের বিপুল সংখ্যক ড্রাগ অ্যাডিকটেড। এছাড়া, অনেকের চোখের সমস্যা রয়েছে।’ দূরপাল্লার যানের চালক ও হেলপারদের প্রয়োজনীয় বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। তাদেরকে অনেক সময় একনাগাড়ে এক থেকে দেড় দিন ডিউটি করতে হয়।

আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোর পরিবেশের মান চরম খারাপ। এই সড়কটির উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন পয়েন্টে বিশ্রামগারও তৈরি করে দিতে হবে। তাই আমি এই বিষয়ে সম্মানিত যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন নিয়মিত যাত্রী হিসেবে অনুরোধ জানাচ্ছি  যেন দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম - কক্সবাজার মহাসড়কটি কাজ শেষ করা হয়।

সেন্ট মার্টিনের জাহাজ, কোনটা কেমন
দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র

আপনার মতামত লিখুন