শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

প্রকৃতির শোভা আশুরার বিল

সন্তোষ কুমার দেব
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বন ও জলাশয়ের সমন্বয়ে আশুরার বিল। আশুরার বিল নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৫৮৮.২২ একর ও বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের প্রায় ২৬৯.২৩ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত। নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মোট ৬টি মৌজার মধ্যে এ বিলের অবস্থান। তার মধ্যে নবাবগঞ্জের হরিপুর, খটখটিয়া কৃষ্ণপুর, আলোকধুতি ও বড় জালালপুর মৌজায় এবং বিরামপুরের ধানজুড়ি, কালীশহর ও সাতানি খাসালপুর মৌজায় এ বিলের অবস্থান। আশুরার বিলের মোট আয়তন ৮৫৭.৪৫ একর বা ৩৪৭.১৪ হেক্টর। অন্যদিকে আশুরার বিলের সঙ্গে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের সহাবস্থান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আশুরার বিলকে অপরূপ রূপে সজ্জিত করেছে। ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়েই শালবন। স্থানীয়দের কাছে পঞ্চবটী বন নামে পরিচিত। ২০১০ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই বনটি নামকরণ হয় শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান। এই জাতীয় উদ্যানে প্রায় ২০-৩০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। দেশি মাছের অভয়ারণ্য খ্যাত এই বিলের ওপর নির্মিত উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় শাল কাঠের ব্রিজ, যা বিল ও বনের মধ্যে দু'পাড়ের মধ্যে এক যোগসূত্র হওয়ায় বনের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। জেড আকৃতির ৯০০ মিটার লম্বা শাল কাঠের এই সেতুটি পশ্চিমে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্বদিকে নবাবগঞ্জ, যা দুই অংশের মধ্যে এক সংযোগ স্থাপন করেছে। পর্যটন সম্ভাবনার এই অনন্য জায়গাটি ঘিরে দরকার মহাপরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যটন-সংশ্নিষ্ট সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন-সংশ্নিষ্ট কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা। অন্যদিকে, দিনাজপুর শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ১৫০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে নান্দনিক সৌন্দর্যের এক স্বপ্নিল বিনোদন জগৎ স্বপ্নপুরী। ওখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পশু-পাখির অবিকল ভাস্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝরনা এবং ইট-সিমেন্টে নির্মিত বাংলাদেশের এক সুবিশাল মানচিত্রের সমন্বয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম ও জীবন্ত পশু-পাখিদের চিড়িয়াখানা ও শিশুদের জন্য পার্ক। ইকো ট্যুরিজম নিশ্চিত করে টেকসই পর্যটনের জন্য অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণ হলো আশুরার বিল। আশুরার বিলে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ হলে বনের তিন দিকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে, যা পর্যটকদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বনের মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের জন্য নিরাপত্তা চৌকির ব্যবস্থা থাকলে পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশীয় পর্যটক যখন ঘুরতে যাবেন আশুরার বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য, তবে তাদের জন্য গুণগত মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পর্যটকদের জন্য বনের মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে কিছুসংখ্যক বিশ্রামাগার থাকা প্রয়োজন এবং লোক-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ খাবার দোকান প্রয়োজন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ২০৩০-এর যে ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি লক্ষ্য সরাসরি পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং অন্য লক্ষ্যগুলো পরোক্ষভাবে পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কভিড-১৯-পরবর্তী বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যে পাঁচটি সেক্টরকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে পর্যটন উল্লেখযোগ্য। আশুরার বিল ও বনের নান্দনিক ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ সম্ভব। বনের মধ্যে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষ্টি-কালচার, জীবনধারা ও সংস্কৃতি নিয়ে কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম উন্নয়ন করলে ওই অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হবে। যদি পরিকল্পনা করে একনেকের মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্রভিত্তিক একটি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে এই স্থানটিকে অনন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

ড. সন্তোষ কুমার দেব:
চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

এবারও ওয়ালটনের ঝুলিতে বাণিজ্য মেলার সেরা পুরস্কার ‘গোল্ড ট্রফি’
বিদেশ ভ্রমণে প্রয়োজনীয় যেসব জিনিস সঙ্গে নেবেন

আপনার মতামত লিখুন