শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মতামত

সুন্দরবনের নীরব কান্না

ইসমাইল গাজী
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ইসমাইল গাজী

ইসমাইল গাজী

সুন্দরবন, প্রশস্ত বনভূমি যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র-উপকূলীয় বন হিসেবে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দান করেছেন।

আজ ভালোবাসা দিবস, ফাগুনের প্রথম দিন আমরা অনেকে হরেক রকমের সাজে সেজেছি। রাজধানীসহ সারাদেশে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও এই আনন্দে ভাগাভাগি করে রমনাপার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন পার্ক, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকে আনন্দ উৎসবে সময় কাটিয়েছে। কারণ সবাই প্রকৃতির সৌন্দর্যের পিপাসু। 

আমাদের এই আনন্দের সাথে সুন্দরবন রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ এই বন বাঁচাতে না পারলে আগামীতে আমাদেরকে বড় বিপদের সম্মুখীন  হতে হবে।

প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হচ্ছে, ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো 'বিশ্বের বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ  ফরেস্ট' হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনকে অভয়ারণ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। প্রতিবেশী দেশ ভারতের থেকে বাংলাদেশের (৬২%) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। 

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল, বনের উপরে মানুষের চাপের কারণে তা দিনদিনতা সংকুচিত হচ্ছে। 

সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানির মিলন স্থল।

সুন্দরবনের পাশে পশুর নদী সহ খুলনা, বরিশাল বিভাগের নদী গুলোতে লবনক্ততা বেড়েছে, যার কারণে এই সব অঞ্চলের স্বাস্থ্য, মৎস্য, কৃষি উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ছে।

সরকারের খামখেয়ালি মেগা প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক  বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধ, অপরিকল্পিত নৌযান, বিষ প্রয়োগে মৎস্য আহরণ, উন্নয়নের নামে বন নিধন করা বন্ধ না করতে পারলে সুন্দরবনে ধ্বংস হবে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩০ প্রজাতির চিংড়ি সহ সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে  পরিচিত করা সে বাঘ মামা হয়ে যাবে ধ্বংস। 

এই সুন্দরবন হলো আমাদের উপকূলীয় ১৬টি জেলা সহ সারাদেশের সেইভগার্ড। 

প্রবীণদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১২ই নভেম্বর ১৯৭০ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা একরাতে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেলো লাখো মানুষের স্বপ্ন এবং মারা গিয়েছিল প্রায় ৫লাখ মানুষ।

এই ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সিডর, আইলা, আমফান সহ বড়বড় ঘূর্ণিঝড় যার ফলে উপকূল সংলগ্ন এলাকার মানুষের কষ্টের নেইতো কোন শেষ। 

আমাদের প্রতিবেশি দেশ, তাদের সুন্দরবন অংশে দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে প্রচুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমাদের এখানে তার তুলনায় অনেক কিছু অনুপস্থিত, আমরা যদি ইকোসিস্টেম ঠিক রেখে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের অংশকে সাজিয়ে নিতে পারি, তাহলে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন পাল্টিয়ে দিতে পারে আমাদের অর্থনীতির গতিপথ। 

আসুন সবাই সুন্দরবনকে ভালোবাসি আগামীর পৃথিবীকে বাঁচাতে।

লেখক: পরিবেশ কর্মী

পর্যটক হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আকৃষ্ট করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ
মরিশাসের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চায় বাংলাদেশ

আপনার মতামত লিখুন