বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গাঁও গেরাম

ঘুরে আসুন খুলনার মনোরম স্পটগুলোতে

খুলনা প্রতিনিধি
১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদকে ঘিরে সকলেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আনন্দ আয়োজন করে থাকেন। উৎসবকে রঙ্গিন করে তুলতে কেউই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না। তাই খাওয়ার আয়োজন হোক, আর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের খাতির যত্নের বিষয় হোক- এই আনন্দ আয়োজনের অন্যতম একটি অনুসঙ্গ হচ্ছে ঘুরে বেড়ানো। কাছে-দূরের যে কোনও দর্শণীয় স্থানে কাছের মানুষদের নিয়ে একত্র যাত্রা করা ও সেখানে স্বপ্নের মতো কিছু সময় কাটানোতেই ঈদের আনন্দ খুঁজেন অনেকে।

বেড়াতে কার না ভালো লাগে! শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী তথা সকল বয়সের নারী-পুরুষই বেড়াতে পছন্দ করেন। বেড়ানোর সূচিও তৈরি হয় সামর্থ্য এবং সময় বিবেচনা করে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত খুলনা এলাকাতেও রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যমণ্ডিত নানা স্থান। ঈদের ছুটির স্বল্প সময়ে সেসব স্থানে যেতে পারেন ভ্রমণেচ্ছুরা। অবশ্য, হেমন্তের আগমণীতে আর গোটা শীত ও বসন্তকালটাতো ঘুরে বেড়ানোরই সময়। পর্যটনের কাল। পরিকল্পনা করে বন্ধুরা, পরিবারের সদস্যরা, ছুটে যেতে পারেন সাগর বা পাহাড়ে।

ঈদে কিংবা অবসরে খুলনার দর্শনীয় যেসব স্থানগুলোতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন:খুলনার শহরের কোল ঘেঁষা রুপসা নদীর উপর খানজাহান আলী সেতুটি খুলনাবাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত। গিলাতলা বনবিলাস চিড়িয়াখানা, পার্ক, শহীদ হাদিস পার্ক, গল্লামারীর লিনিয়ার পার্ক, বৈরব নদের পাড়ের ৪ নম্বর ঘাট, চরের হাট নেভী গেট ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর অভ্যন্তরে ওয়াটার ভিউ অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এখানকার পরিবেশ যথেষ্ট ভাল। তবে খালিশপুর ওয়ান্ডার ল্যান্ড শিশু পার্ক, মুজগুন্নি পার্ক, লবণ চরার ভ’তের বাড়িতেও বেড়াতে পারেন। এখানকার সামাজিক পরিবেশ তেমন দৃষ্টিনন্দন নয়।

খুলনার ফুলতলার দক্ষিণ ডিহিতে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। আজও সেই বাড়িটি আছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই বাড়িটি সযত্নে আগলে রেখেছে।

খুলনার রূপসার পিঠাভোগ হচ্ছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদিপুরুষের বাসস্থান। পাইকগাছার রাড়ুলী গ্রামে রয়েছে জগদ্বিখ্যাত রসায়নবিদ, সর্বস্বত্যাগী স্যার আচার্য পিসি রায়ের বসতবাড়ি। বাড়িটির একাংশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিজেদের আয়ত্বে নিয়েছে।

অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। বহু পর্যটক প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকেন। খুলনায় পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ঢাকা ও খুলনায় বেশ কয়েকটি ট্যুরিস্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া মোংলা থেকে বোট ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে অনেকে সুন্দরবনে যান। ট্যুরিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে উৎসাহী ব্যক্তিদের সুন্দরবনের কটকা, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্টসহ প্রভৃতি স্থানে নিয়ে যায়। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমতি নিতে হয়।

সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যকে স্বীকৃতি জানিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর একে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বলে ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালের ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ফলক উন্মোচন করেন।

সুন্দরবনের আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো হচ্ছে- সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার চুনা নদীর তীরে মুন্সীগঞ্জ, আড়পাঙ্গাসিয়া নদীর তীরে বুড়িগোয়ালিনী, মালঞ্চ নদীর তীরে দোবেকী, পুষ্পকাঠি, সমুদ্রতীরবর্তী মান্দারবাড়ী; খুলনার বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী নীলকমল, শিবসা নদীর তীরবর্তী শেখেরটেক, সুতারখালী নদীর তীরে সুতারখালী। শিবসা নদীর তীরে নলিয়ান, সুতারখালী নদীর তীরে কালাবগী, বল নদীর তীরে ঝালিয়া, হংসরাজ নদীর তীরে পাটকোষ্টা, শেলা নদীর তীরে চাঁদপাই, পশুর নদীর তীরে ঢাংমারী, করমজল, জোংরা, শেলা নদীর তীরে মৃগামারী, পশুর নদীর তীরে হারবাড়িয়া, ভোলা নদীর তীরে শরণখোলা, বলেশ্বর নদীর তীরে সুপতি, কচিখালী ও সমুদ্র তীরবর্তী কটকা, দুবলার চর অন্যতম। করমজলে আছে কুমিরের খামার।

সুন্দরবনের আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র দুবলার চরে কার্ত্তিকের পূর্ণিমা বা তিথির ভিন্নতায় অগ্রহায়ণ মাসে বসে সাগর মেলা। রাশ মেলা। একে ঘিরে সমূদ্র স্নানও হয়ে থাকে। যাকে অনেকে গঙ্গা স্নানও বলে থাকেন। পৌরাণিক কাহিনীর ভিত্তিতে এর যাত্রা শুরু। একসময় এ তীর্থযাত্রায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষত্রীয়, নম:শূদ্র ও মৎস্য আহরণের সাথে যুক্ত জনগোষ্ঠী অংশ নিত। আজ সেখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ যোগ দেয়। মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় রাশমেলা।

বাগেরহাটে অবস্থিত হযরত খানজাহান আলী (রা:) এর মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলী দীঘি ও দীঘির কুমীর সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও দর্শণীয় স্থানেও যে কেউ যেতে পারেন। এছাড়া বাগেরহাটে রয়েছে সুন্দরবন রিসোর্ট, ফকিরহাটের চন্দ্রমহলেও বেড়াতে পারেন।

যশোরের কেশবপুরে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটে। তার প্রিয় কপোতাক্ষ নদ আজ শুকিয়ে গেছে, প্রিয় বাদামতলা, শানবাঁধানো ঘাট আজ আর আগের অবস্থায় নেই; তবুও কবির স্মৃতিবিজড়িত অনেক কিছুই এখনও টিকে আছে সেখানে। অদূরে কেশবপুরের ভরত ভায়নায় রয়েছে বৌদ্ধ মঠ, যা ভরতের দেঊল নামে পরিচিত। আছে বরণডালি গ্রামের হাম্মামখানা, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে প্রাচীন যশোরদী মন্দিরসহ রাজা প্রতাপ আদিত্যের সৃষ্ট দুর্গ, মঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

খুলনায় এসে দেখতে পাবেন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান। রয়েছে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্যতম বড় গণহত্যার স্থান চুকনগর বধ্যভূমি। এখানে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। একাত্তরের ১৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের সাথে পাকি বাহিনীর ইতিহাসখ্যাত ট্যাঙ্ক যুদ্ধের স্থান শিরোমণি। খুলনার অন্যতম প্রধান গণহত্যা স্থল গল্লামারী। এই বধ্যভূমির ওপর গড়ে উঠেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। আছে অদূরেই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। খুলনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ৭১এর গণহত্যা ও নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে।

খুলনার জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক। খালিশপুরে রয়েছে ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক, মুজগুন্নীতে রয়েছে আরও একটি ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্ক। এ ছাড়া রূপসী রূপসার বুকের উপর নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সেতু খানজাহান আলী সেতু ও এর সংলগ্ন এলাকা। রূপসা সেতুর সন্নিকটেই রয়েছে ৭ বীর শ্রেষ্ঠদের অন্যতম রুহুল আমীনের মাজার কমপ্লেক্স।

রূপের রাণী বান্দরবান
আসুন পথিক, এইতো নীলাচল

আপনার মতামত লিখুন