শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
লাইফস্টাইল

ভ্রমণকন্যা আজমেরী : ঘুরে বেড়ানো ফড়িং

ডেস্ক রিপোর্ট
০২ জানুয়ারি ২০২২
চীনের গ্রেটওয়ালে কাজী আসমা আজমেরী- সংগৃহীত

চীনের গ্রেটওয়ালে কাজী আসমা আজমেরী- সংগৃহীত

এক আকাশ থেকে অন্য আকাশ। এক দেশ থেকে ভিন্ন দেশ। একে একে দুনিয়ার ১১৬ দেশ, তার দেখা শেষ! যেন ঘুরে বেড়ানো এক ফড়িং। পুরো বিশ্বকে দুই নয়নে ধরে রাখার কী এক অদম্য বাসনা! বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে লাল-সবুজের জয়গানে সুর মেলাতে চান বিশ্বমঞ্চে। সেই পথে হাঁটছেন ঠিকই, কিন্তু এই অ্যাডভেঞ্চারে মাড়াতে হচ্ছে 'বন্ধুর পথ'।

কাজী আসমা আজমেরী। খুলনার মেয়ে। বয়স তেত্রিশ। এখনও বাঁধেননি গাঁটছড়া। রেড ক্রসে চাকরি সূত্রে থিতু নিউজিল্যান্ডে। শুধু ছেলে নয়, বাংলাদেশি মেয়েরাও যে ভূ-গোলকের সব দেশে একাকী পা ফেলতে জানে, তা পুরো পৃথিবীতে রটাতে চান এই ভ্রমণকন্যা। সেই নেশায় বুঁদ আজমেরী। করোনার টালমাটাল প্রেক্ষাপটে কিছুটা দম নেওয়ার সময় পেলেন বই কী! অতিমারি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আজমেরী ফের গুছিয়ে নিয়েছেন ব্যাকপ্যাক। এবার উড়াল দিয়েছেন লেবানন। এরপর নোঙর ফেলার ইচ্ছা দক্ষিণ আফ্রিকায়।

পুরো দুনিয়াকে দেখার আজমেরীর স্বপ্নের বীজের বপন ছোটবেলায়। সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখতে তিনি যে সময়কে বেছে নিলেন, সালটা ২০০৯। নিজের স্বর্ণালংকার বেচে দিয়ে টাকা জড়ো করে বেরিয়ে পড়লেন। প্রথম গন্তব্য 'জাদুর দেশ' থাইল্যান্ড। এরপর গত এক যুগে পা রেখেছেন দুবাই, চীন, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, সাইপ্রাস, নেপাল, ভারত, ফিলিপাইন, গ্রিসসহ একে একে ১১৬ দেশের মাটিতে। এক বিভুঁই থেকে আরেক বিভুঁইয়ে যেতে যেতে তার ঝুলিতে জমা হয়েছে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা।

কাজী আসমা আজমেরী জানান, নিউজিল্যান্ডে চাকরির বেতন ও জমানো টাকা দিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশ ঘোরেন। দেড় বছর চাকরি করেন, আর ছয় মাস ভ্রমণে মাতেন। ২০১২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে থাকার পরও বাংলাদেশকে ভালোবেসে নাগরিকত্ব বদলাননি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশনে হয়রানি, এমনকি ভিয়েতনাম ও সাইপ্রাসে দু'বার জেল খাটতে হয়েছে তাকে। নানা প্রতিকূলতায়ও তিনি দমে যাননি।

আজমেরী জানান, ২০১৯ সালে তিনি গ্রিসে যান। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে নতুন কোনো দেশে যেতে পারেননি। ভারত ভ্রমণ শেষে মাসখানেক আগে খুলনায় ফেরেন। গত ১৬ ডিসেম্বর গেছেন লেবানন। এখনও আছেন সেখানে।

কিছুদিন আগে খুলনা নগরীর ৮৫/এ, রায়পাড়া মেইন রোডের আজমেরীর বাসায় বসে আলাপকালে তিনি বলেন, সবার ধারণা, ছেলেরাই শুধু একা একা দেশের বাইরে ঘুরতে পারে, মেয়েরা পারে না। একটা ছেলে পারলে একটা মেয়ে কেন পারবে না? তা দেখিয়ে দিতেই আমি বিশ্বভ্রমণে নামি। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমার ঘোরাঘুরির শখ ছিল।

ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময় হরেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণ করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। সাইপ্রাসে গিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ২৭ ঘণ্টা জেল খাটতে হয়েছে। তিনি ইউরোপে থেকে যেতে পারেন- এমন আশঙ্কায় তাকে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া একবার ভিয়েতনাম গিয়ে তাকে ২৩ ঘণ্টা আটক থাকতে হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমি ২০১২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে থাকছি। তারপরও আমি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করছি। দেখিয়ে দিতে চাই- বাংলাদেশি পাসপোর্টেও বিশ্বভ্রমণ করা যায়।'

আজমেরী বলেন, 'ভ্রমণ অনেক ব্যয়বহুল, বিশেষ করে বিমানের টিকিট। অনেকেই আমার ভ্রমণের স্পন্সর হতে চায়। কিন্তু স্পন্সরশিপ আমি নিই না। কারণ, আমি মনে করি ভ্রমণটা আমার নিজের, আমার ভালো লাগার জন্য আমি ঘুরি। সেজন্য আমার ভালো লাগাটা আমি কারও সঙ্গে শেয়ার করতে রাজি না। স্পন্সর নিলে তাদের মতো করে ঘুরতে হবে, এটা আমি পছন্দ করি না।' তার ভাষায়, ভ্রমণ মানুষকে জ্ঞানী ও বিনয়ী করার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সহায়তা করে। যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা বাড়ায়।

আজমেরী জানান, ১১৭তম দেশ হিসেবে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ভিসাও পেয়েছেন। লেবানন থেকে ফিরে সেখানে যাবেন। আজমেরী বলেন, 'আমি এমন কিছু করতে চাই, যেন দেশের বাইরের মানুষ বাংলাদেশের পাসপোর্ট সম্মানের চোখে দেখেন। আমার মতো ভ্রমণে গেলে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন। বাংলাদেশিরা শুধু শ্রমিক হিসেবেই বিভিন্ন দেশে যান না, ভ্রমণ করতেও যান।'

আজমেরী জানান, নিজে ভ্রমণের পাশাপাশি তরুণ-তরুণীদেরও নিয়মিত ভ্রমণে উৎসাহ দেন তিনি। ভ্রমণের সময় সংগ্রহ করা বই ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে নিজের বাড়িতে মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন। আজমেরী বলেন, দেশে যারা ভ্রমণকারী রয়েছেন, তাদের সঙ্গে একত্র হওয়ার জন্য এই মিউজিয়াম গড়ে তুলেছি।

চালু হলো দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জোকস ওয়েবসাইট ‘জোকবক্স’
নতুন কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ওয়ালটনে মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টার চালু

আপনার মতামত লিখুন