বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অর্থনীতি

ভিসতা: সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা মানের পণ্য, লক্ষ্য শীর্ষ স্থান অর্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ নভেম্বর ২০২২

ইতালি শব্দ ‘ভিসতা’ অর্থ দেখা, সুখদর্শন, দূরদর্শী। এর ভাবার্থ সাফল্যের সিঁড়ি। বাংলাদেশে বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি, বাজারজাত করা এবং রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে গত বছর যাত্রা শুরু করে ‘ভিসতা’ ব্র্যান্ড। ‘এক্সিলেন্স ইন টেকনোলজি’ স্লোগানে অভিজাত পণ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডের একটি হওয়াই ভিসতার উদ্দেশ্য।

ভিসতার উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত আছেন পাঁচ স্বপ্নবান, অভিজ্ঞ ও মেধাবী উদ্যোক্তা। যাঁরা সবাই দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পেছনের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে।

ভিসতার চেয়ারম্যান শামসুল আলম, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন দেশের ইলেকট্রনিকস খাতে। ইলেকট্রনিক পণ্যের মেশিনারিজ ও কাঁচামাল বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেফ্রিজারেটর কারখানা প্রতিষ্ঠার পেছনে সরাসরি কাজ করেছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন আকাশ, যাঁর হাত দিয়েই বাংলাদেশ প্রথম ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানি করে। ইলেকট্রনিক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ তিনি। ভিসতার পরিচালক উদয় হাকিম ব্র্যান্ডিং, করপোরেট কমিউনিকেশন, পাবলিক রিলেশন, মিডিয়া ও মার্কেটিং বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। নতুন বা ছোট একটি ব্র্যান্ডকে জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি এর আগে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দীর্ঘ ১২ বছর সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন উদয় হাকিম ভিসতার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা বিজনেস ডটকমের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ভিসতার আরেক পরিচালক প্রকৌশলী মইনুল হক, যাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রথম ইলেকট্রনিকস কারখানা হয় এবং ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য প্রথম উৎপাদনে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা প্রকৌশলী হিসেবে তিনি পরিচিত।

ভিসতার অন্যতম পরিচালক চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সিনেমার পর্দার পাশাপাশি বাস্তবেও তিনি সফল একজন করপোরেট ব্যক্তিত্ব। নায়ক এবং উদ্যোক্তা ইলিয়াস কাঞ্চনের চেয়ে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে সমধিক পরিচিত ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’–এর জন্য।

দেশি–বিদেশি অসংখ্য ব্র্যান্ডের ভিড়ে কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, তা বাছাই করাটা অনেক সময় ক্রেতাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে। সেই বাস্তবতায় ভিসতার লক্ষ্য—বেশি মুনাফা নয়, সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা মানের পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

দেশের বাজারে প্রথম ‘জেনুইন অ্যান্ড্রয়েড-৯’ টিভি নিয়ে এসেছিল ভিসতা। বেসিক এলইডি এবং স্মার্ট টিভির চেয়ে অনেক বেশি আপগ্রেডেট হলো অ্যান্ড্রয়েড টিভি। অ্যান্ড্রয়েড টিভি হচ্ছে আগামী প্রজন্মের পণ্য। ভিসতা টিভি গুগল সার্টিফায়েড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আপগ্রেড হবে অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোনের মতো।

ভিসতার এসব অ্যান্ড্রয়েড টিভির হার্ডওয়্যার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের। সফটওয়্যার যুক্তরাষ্ট্রের। ভিসতা টিভির প্যানেল তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শীর্ষ কারখানা থেকে। ভিসতার নিজস্ব কারখানা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই–টেক সিটিতে।

বর্তমানে উচ্চ মানের অ্যান্ড্রয়েড ও বিভিন্ন ধরনের টিভি উৎপাদন করছে ভিসতা। এরই মধ্যে হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও এসি উৎপাদন কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করছে তারা। এরপর স্মার্ট রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে যাবে। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড প্রজেক্টর, বিভিন্ন ধরনের মনিটর, ভিডিও ওয়াল, ডিজিটাল সাইনেজ, ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড, রাউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট মিরর, মেডিকেল ডিসপ্লে, ভিআরএফ এসি, অ্যাকসেসরিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য বাজারজাত করছে ভিসতা।

ভিসতা টিভির ভেতরে-বাইরে

দামে অন্যদের চেয়ে বেশ সাশ্রয়ী কিন্তু মানে সেরা হওয়ার কারণে ভিসতা একটি অভিজাত ব্র্যান্ড। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আলট্রা হাই ডেফিনেশন রিয়েল ফোরকে ভিসতা টিভি এখন উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। আর তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও বিশ্বকাপ ফুটবলকে সামনে রেখে বড় পর্দার টিভি বাজারে এনেছে ভিসতা।

ভিসতা ইলেকট্রনিকসের প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু হাই–টেক সিটিতে নিজস্ব কারখানায় উচ্চ মান বজায় রেখে তৈরি হচ্ছে ভিসতা টিভি। প্যানেল, মাদারবোর্ড, প্রসেসর—এসব ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডের।

ভিসতা ইলেকট্রনিকসের নির্বাহী পরিচালক এবং বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান তানভীর জিহাদ জানান, ভিসতা যে মানের টিভি তৈরি করছে, তা বাংলাদেশের বাজারে আর নেই বললেই চলে।

ভিসতার প্রকৌশলীরা জানান, তাঁদের রয়েছে ৩২, ৪৩, ৫৫, ৬৫, ৭৫ ও ৮৬ ইঞ্চির বিভিন্ন ধরনের টিভি। তবে ৪৩ ইঞ্চি অ্যান্ড্রয়েড টিভির চাহিদা বেশি। এটি ফোরকে, আলট্রা এইচডি। দাম ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা। উজ্জ্বল স্ক্রিন, ব্ল্যাক ট্যাগ কালার, অর্গানিক লাইট ইমিটিং ডিসপ্লে থাকায় এর ছবি বাস্তবের চেয়েও বাস্তব!

টিভি কেনার সময় দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হয়—প্যানেল এবং সাউন্ড কোয়ালিটি। ভিসতা টিভিতে ব্যবহার করা হয়েছে ন্যানোসেল টেকনোলজির ব্ল্যাক প্যানেল। ফলে কালার পারফেকশন থাকে শতভাগ। ব্ল্যাক প্যানেল অনাবশ্যক আলোক শোষণ করে। দরকারি আলোর সন্নিবেশ ঘটিয়ে স্ক্রিনে ঝকঝকে রঙিন ছবি প্রদর্শন করে। ভিসতা টিভির অ্যাসপেক্ট রেশিও ১৬:৯। ভিউইং অ্যাঙ্গেল ১৭৮ ডিগ্রি। ফলে যেকোনো পাশে বসেই ক্লিয়ার ভিউ পাওয়া যায়। কালার শিফটিং হয় না। কারণ, এর ডিসপ্লেতে কালার আছে ১.০৭ বিলিয়ন।

ভিসতা ৪৩ ইঞ্চি টিভি অরিজিনাল ফোরকে; এর রেজুলেশন ৩৮৪০ × ২১৬০। ফলে এর ডিসপ্লে ব্রাইটনেস থাকে সঠিক। রিয়েল ফোরকে হওয়ায় নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমের মতো চ্যানেল বা প্ল্যাটফর্মে ফোরকে স্ট্রিমিং করা যায়।

ভিসতার এই ফোরকে আলট্রা এইচডি টিভিতে ব্যবহৃত হয়েছে ব্রিটিশ টেকনোলজির করটেক্স এ৫৩ কোয়াডকোর প্রসেসর। যার সর্বোচ্চ ক্লক স্পিড ১.৫ গিগাহার্টজ। রয়েছে মডেলভেদে ১ থেকে ২ জিবি র‌্যাম এবং ৮ থেকে ১৬ জিবি রম। অপারেটিং সিস্টেম লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড-১১।

ভিসতায় ব্যবহার করা হয়েছে মার্কিন ডলবি ডিজিটাল আটমোস সারাউন্ডিং সাউন্ড সিস্টেম। যুক্ত হয়েছে ৮ ওয়াটের দুটি সাউন্ড স্পিকার। ফলে স্পষ্ট শব্দে মনমতো উপভোগ করা যায় যেকোনো অডিও-ভিডিও কনটেন্ট।

ভিসতা অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে মডেলভেদে ছয় শতাধিক অ্যাপ রয়েছে হোমস্ক্রিনেই। নেট কানেকশন থাকলে ডিশ লাইন ছাড়াই উপভোগ করা যাবে অসংখ্য টিভি চ্যানেল। বিল্টইন ক্রম কাস্ট এবং ই-শেয়ারের মাধ্যমে টিভির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে মুঠোফোন। এ ছাড়া ৭ হাজারের বেশি অ্যাপের মাধ্যমে মুভি, খেলা, জনপ্রিয় সিরিজ, মিউজিক উপভোগ করা যাবে। বিস্তারিত জানা যাবে vistabangladesh.com ওয়েবসাইেট।

মার্কেটিং নেটওয়ার্ক

বর্তমানে ডিস্ট্রিবিউটর বা ডিলার মার্কেটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ভিসতা। সারা দেশে ইলেকট্রনিক পণ্যের ৩০ হাজারের মতো ডিলার আউটলেট রয়েছে। নিজস্ব আউটলেট না করে দ্রুত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সেসব অভিজ্ঞ ডিলারের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ব্র্যান্ডটি

গ্যারান্টি–ওয়ারেন্টি

মানে সেরা বলেই ক্রেতাদের আকর্ষণীয় গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি দিচ্ছে ভিসতা। থাকছে ৫ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি, ৪ বছরের প্যানেল রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি, ৪ বছরের স্পেয়ার পার্টস গ্যারান্টি এবং ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা। সারা দেশে রয়েছে ভিসতার বিক্রয়োত্তর সেবার সুযোগ। এমনকি হোম সার্ভিস সিস্টেমের আওতায় অনলাইনে সেন্ট্রাল সার্ভিস সেন্টার থেকেই সফটওয়্যার সমস্যার সমাধান করা যায়।

ব্র্যান্ডিং, সিএসআর স্ট্র্যাটেজি ও লক্ষ্য

ব্র্যান্ডিং এবং সিএসআর কৌশলকে সমন্বয় করে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্টে বেশি দৃষ্টি দিচ্ছে ভিসতা। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজ, স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবলে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ব্র্যান্ডটি। মেয়েদের একটি ক্রিকেট একাডেমিতে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছে ভিসতা টিম। তবে কিশোর, তরুণ ও যুবসমাজকে ক্রীড়ামুখী করতে সামনে আরও কিছু উদ্যোগের পরিকল্পনা রয়েছে ভিসতা কর্তৃপক্ষের।

দেশ-বিদেশের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে আরও বড় পরিসরে কারখানা স্থাপনের কাজ চলমান। আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রকৌশল খাতের একটি অভিজাত ব্র্যান্ড এবং শক্তিশালী মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় তারা। এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক হারে রপ্তানির পর বিশ্বের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ভিসতা।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এলো হিউমালগ ২০০ কুইকপেন ইনসুলিন
২৪ নভেম্বর থেকে আকাশে উড়বে ‘এয়ার অ্যাস্ট্রা’

আপনার মতামত লিখুন