শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সাক্ষাৎকার

ভিসতাকে বিশ্ব সেরা করাই আমাদের লক্ষ্য: উদয় হাকিম

অনলাইন ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২২

ইতালি শব্দ ‘ভিসতা’ অর্থ দূরদর্শী। এর ভাবার্থ সাফল্যের সিঁড়ি। বাংলাদেশে বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরি, বাজারজাত করা এবং রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে ২০২১ সালে যাত্রা শুরু করে ‘ভিসতা’ ব্র্যান্ড। ‘এক্সিলেন্স ইন টেকনোলজি’ স্লোগানে অভিজাত পণ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডের একটি হওয়াই ভিসতার উদ্দেশ্য।

ভিসতার উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত আছেন পাঁচ স্বপ্নবান মানুষ। তাদের একজন হলেন উদয় হাকিম। অভিজ্ঞ ও মেধাবী এই তরুণ এর আগে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পেছনের কারিগর হিসেবে কাজ করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে। নতুন এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে কথা বলেছেন ভিসতার পরিচালক উদয় হাকিম। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

ভিসতার বিশেষত্ব কি? 

ভিসতা শব্দের অর্থ দূরদর্শী। ভিসতা একটি পিউর বাংলাদেশী ব্র্যান্ড। বাংলাদেশী স্ট্রার্ট আপ। 

আমরা যেতে যাই অনেক দূর। আমাদের লক্ষ্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের কাতারে যাওয়া। আমরা জানি তার জন্য কি করতে হবে। সময় লাগবে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে চাই আমরা। 

তবে আমরা জানি- বিশ্ব সেরা হওয়া সহজ নয় মোটেও। আবার অসম্ভবও নয়। বলা হয় মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। সেই বড় স্বপ্নই ভিসতাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। 

আমাদের পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে থাকছে বাংলাদেশে সেরা হওয়া। এরইমধ্যে সে কাজ অনৈকটাই সহজ হয়ে গেছে। কোয়ানটিটিতে না হলেও এরইমধ্যে কোয়ালিটিতে ভিসতা সেরা হয়ে গেছে। কীভাবে? সেটা ব্যাক্ষা করছি। 

শুরুর দিকে আমরা বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ে গবেষণা করেছি। দেশের বাজার, পণ্যের দাম, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা, মার্কেটিং প্রসেস- সিস্টেম এসব নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি, দেশ-বিদেশের অনেক ব্র্র্যান্ড এদেশে বিজনেস করছে। বিশ্বের সেরা ব্র্র্যান্ডগুলো যেমন আছে, তেমনি বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে দেশী ব্র্র্যান্ডগুলোও। এখন তাদের সাজানো বাজারে নতুন কারো প্রবেশ, কিম্বা জায়গা দখল মোটেও সহজ নয়। কিন্তু আমরা আশার আলো দেখলাম কিছু বিষয়ে। প্রথমত এখানে বিশ্বসেরা ব্র্রান্ডগুলো আকাশচুম্বি মুনাফা করছে। বাংলাদেশের টাকা তারার ভোঁজবাজির মতো বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশীয় ব্র্র্যান্ডগুলো অতি নিম্নমানের পণ্য বাজারজাত করছে, এমনকি তারাও বেশি মুনাফা করছে। মুদ্দাকথা, ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে কোয়ালিটি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেখানেই ভিসতা তার জায়গা খুঁজে পেলো। প্রথমত, আমরা বিশ্বের সেরা মানের পণ্য দিচ্ছি। দ্বিতীয়ত, দাম রাখছি অন্যদের চেয়েও কম। মুনাফা নয়, গ্রাহক সেবা এবং টেকসই পণ্য দিয়ে দীর্ঘদিন আমরা থাকতে চাই। 

অনেকেই আমাদের বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে জানতে চায়। আমরা বলি, ভিসতা এতোটা উচ্চমানের পণ্য দিচ্ছে যে, বিক্রয়োত্তর সেবার প্রয়োজন খুব একটা হবে না। প্রয়োজন হলে তার সব ব্যবস্থাও আমাদের আছে।  

 গুনগত মান কিভাবে নিশ্চিত করছেন ?

আমরা বিশ্বের সেরা পার্টস কম্পোনেন্ট ব্যবহার করছি। ভিসতা অ্যান্ড্রয়েড টিভি গুগল সার্টিফায়েড। এতে অরিজিনাল আমেরিকান অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদারবোর্ড, চিপস এগুলো আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্যের ব্র্র্যান্ড থেকে সোর্স করা। প্যানেল তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং নাম্বার ওয়ান কারখানা থেকে। বিশ্বের ১৯৩ টি দেশে বাজারজাত করার সুযোগ রয়েছে ভিসতা টিভি। ইউরোপ-আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে আমরা টিভি তৈরি করছি। কোয়ালিটি ঠিক রাখার জন্য আমরা অনেক কিছুর সাথে কম্প্রোমাইজ করিনি। উৎপাদন খরচ বেশি পড়লেও ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় রেখে কোয়ালিটিতে কোনো ছাড় দিচ্ছি না আমরা। 

দাম হাতের নাগালে কি? 

শুরুতেই ভিসতা’র সেলস-মার্কেটিং কৌশল বলেছি। আমাদের পণ্য সস্তা নয়, সাশ্রয়ী। মানে সেরা, দামে তুলনামূলক কম। সেটাই সবাই চায়। সুতরাং ভিসতা দিচ্ছে সেরা মানের পণ্য, আবার দামও অন্যদের চেয়ে কম। 

আপনাদের লক্ষ্য কি?

শুরুতেই ভিসতা’র উদ্দেশ্য বলেছি। সেরা মানের পণ্য দেব, সাশ্রয়ী মূল্যে। অন্যদের মতো বেশি দামে নিম্নমানের পণ্য আমরা বিক্রি করব না। 

আমাদের লক্ষ্যের বেশ কিছু পর্যায় রয়েছে। সেরা পণ্য উৎপাদন করব, বিক্রি করব সাশ্রয়ী মূল্যে। এরপর আমরা যাব রপ্তানিতে। যদিও রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রোডাক্ট লাইনে ধীরে ধীরে যোগ হবে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্য। টার্গেট থাকবে বিশ্ববাজারে মেইড ইন বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছে দেয়া। যাতে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা থাকলে ভোক্তারা মনে করেন এটি উচ্চমানের পণ্য। আমাদের লক্ষ্য দেশের এবং আন্তর্জাতিক শেয়ার মার্কেটে ভিসতাকে যুক্ত করা। ভিসতাকে বিশ্বব্যাপি একটি অ্যারিসটোক্রেটিক ব্র্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। 

কর্মস্থানের সুযোগ তৈরিতে কি ভূমিকা রাখবে ভিস্তা? 

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বেই কর্মসংস্থানের ব্যাপক অভাব। অনৈকেই চাকরী হারিয়েছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এখনো অনেক কম চাকরীর সুযোগ তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্র থেকেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। ভিসতা তার সাধ্যমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। সমস্যা হলো ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। যার অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে টেকনিক্যাল পণ্যে রোবোটিক প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। ফলে পণ্যমান বাড়লেও শ্রমিকের প্রয়োজন কিছুটা হলেও কমছে। 

ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে কি কি কাজ করছেন?

ব্র্র্যান্ড প্রমোশন এবং মার্কেটিং এ পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে ভিসতা। টিভি, প্রিন্ট, অন লাইন মিডিয়া মাধ্যমে ভিসতা তার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফরমে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ক্রিকেট, ভলিবলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ভিসতা। এছাড়া করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির আওতায় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে ভিসতা। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য ক্রেতাদের বড় আকারের ছাড় দেয়া হচ্ছে পণ্য কেনার সময়। ক্রেডিট কার্ডে পণ্য কিনলে ইএমআই সুবিধা রয়েছে। পরিবেশকদের ভালো কমিশন দেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ‘ভিসতা পণ্য মানে সেরা’ এরকম একটি পজিটিভ ধারণা সবার কাছে পৌঁছে গেছে। আসলে পণ্য ভালো হলে তার প্রচার বা ক্রেতা আকর্ষণের জন্য আর বাড়তি তেমন কিছূ লাগে না। 

এটি মূলত কোন দেশের পণ্য?

ভিসতা বাংলাদেশী ব্র্র্যান্ড। ভিসতা পণ্য বাংলাদেশের পণ্য। গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে স্টেট অব দি আর্ট টেকনোলজি সমৃদ্ধ কারখানা করেছে ভিসতা। সেখানেই তৈরি হচ্ছে ভিসতা অ্যান্ড্রয়েড টিভি। 

আপনারা কি কি সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন ?

সম্প্রতি র ম্যাটেরিয়ালস আনার ক্ষেত্রে এক ধরনের সমস্যা হচ্ছে সবার জন্যই। এর বাইরে তেমন কোনো প্রবলেম নেই। সরকার এই সেক্টর নিয়ে বেশ আন্তরিক। বিশেষ করে, গার্মেন্টস এর বিকল্প কিম্বা তার চেয়েও আরো অনেক বেশি সম্ভাবনাময় এই ইলেকট্রনিক্স শিল্প। এক্ষেত্রে রপ্তানির উপর প্রণোদনা বা ইনসেনটিভ বাড়ানো যেতে পারে। তবে নতুন উদ্যোগের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ব্যাংক লোন। নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যাংকগুলো লোন দিতে চায় না। মর্টগেজ এখানে একটি বড় অন্তরায়। সবাই ‘তেলা মাথায় তেল দিতে’ চায়। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার দিয়েছিল। ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতার আলোকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দেয়া যাবে বিনা জামানতে। সেটি কেউ মানছে না। এই মুহুর্তে ভিসতা’র ম্যানেজমেন্টে যুক্ত আছেন দেশের ইলেকট্রনিক্স সেক্টরের সবচেয়ে মেধাবী টিম। 

নিজস্ব পণ্য তেরি কবে নাগাদ শুরু করবেন?

ভিসতা নিজেদের কারখানায় নিজেদের পণ্য তৈরি করছে। তবে হ্যাঁ, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমরা বড় পরিসরে আরো একটি কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। 

সূত্র: অপরূপ বাংলা অনলাইন

ভিসতা-এবি ব্যাংক চুক্তি: ভিসতা পণ্যে ৩৬ মাসের ইএমআই সুবিধা
নোয়াখালীতে সমতায় যাত্রা তারুণ্যের সাইকেল র‍্যালি

আপনার মতামত লিখুন