রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

প্রত্যাশিত অর্জন আসেনি পর্যটন খাতে

স্টাফ রিপোর্টার
১২ অক্টোবর ২০১৯

২০১৯ সালের জন্য ঢাকাকে সিটি অব ট্যুরিজম ঘোষণা করেছিল ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি); কিন্তু বছরের নয় মাস পেরিয়ে গেলেও এ নিয়ে কার্যকর কোনো প্রচারণা ও উদ্যোগ নেই। এতে করে পর্যটনশিল্প বিকাশের মাধ্যমে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরির বিরাট সুযোগ হারাচ্ছে দেশ। সম্প্রতি পালিত হয়েছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। পর্যটন দিবসে ইউনাইটেড ন্যাশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের (ইউএনডাব্লিউটিও) এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটন ও চাকরি : সবার জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ’।


ইউএনডাব্লিউটিওর ভাষ্যমতে ২০১৮ সালে বিশ্বের মোট কর্মসংস্থানের ১০ শতাংশ সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন খাতে। আগামী বছরগুলোতে সেই হার আরো বেশ কয়েক শতাংশ বাড়বে। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিষদের (ডাব্লিউইএফ) ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ক সূচকে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এ হার ১ দশমিক ৯ শতাংশ। সংস্থাটির হিসাবে, বাংলাদেশের মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ বা ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ জন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৭ সালে যা ছিল ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯০ জন। পর্যটন কর্মসংস্থানে পিছিয়ে থাকার জন্য অনেক কারণকে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষ অভিজ্ঞ জনবলের অভাব, পর্যটনকে আলাদাভাবে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার পরও যথাযথ গুরুত্ব না পাওয়া, পর্যটননীতিকে আইনে পরিণত না করা, পর্যটনসংশ্লিষ্ট পেশায় আগ্রহী ব্যক্তিদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসহ প্রভৃতি কারণ। এ পেশায় এতদিনেও নিশ্চয়তা আসেনি। পর্যটন পেশায় আকৃষ্ট হওয়ার মতো পরিবেশ, প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়নি আজও। তরুণ প্রজন্ম পর্যটনকে সম্ভাবনাময় খাত বিবেচনা করলেও পর্যটনসংশ্লিষ্ট পেশায় নিজেদের জড়ানোর মতো অনুকূল ভাবতে পারছে না, এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা সৃষ্টি, দক্ষ অভিজ্ঞ চৌকশ মানবসম্পদ সৃষ্টির ব্যাপারে সরকারি প্রচেষ্টা সন্তোষজনক এবং যথেষ্ট নয় মোটেও। পর্যটন পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন উন্নত এবং আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ। দেশে যদিও পর্যটন বিষয়ে অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য গড়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউট। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম বিষয়ের ওপর স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করেছে। পর্যটন পেশায় অভিজ্ঞ ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে স্বল্পকালীন অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ই-টিকিটিং রিজার্ভেশন কোর্স, ট্যুর গাইডিং কোর্স, ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট কোর্স—প্রভৃতি চালু করা একান্ত জরুরি। সম্মানজনক স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে অনেক ছেলেমেয়ে পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করে, আলাদা প্রশিক্ষণ নিয়েও এ পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও অন্য কোনো চাকরিতে নিয়োজিত হন। যে কারণে এ খাতে পেশাদারিত্ব ভাব গড়ে উঠছে না। ফলে আমাদের পর্যটনশিল্প যেভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল তা এখন পর্যন্ত হয়নি। দেশের পর্যটন নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। তাদের উভয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি একটি বড়ো সমস্যা। পর্যটনশিল্প নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ না থাকার কারণে প্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। অফুরান সম্ভাবনাময় খাতটিকে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে যথাযথভাবে এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না


সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯-এ দেখা যায়, পর্যটন খাতে বৈশ্বিক গড় সূচকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। তবে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, অবকাঠামো ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পর্যটন সক্ষমতায় বেশ ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলো আধুনিক, টেকসই বা যুগোপযোগী করা সম্ভব হয়নি নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার কারণে। ফলে বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও বিদেশি পর্যটকদের প্রত্যাশিত হারে টানা সম্ভব হচ্ছে না। গত দুই বছরে বৈশ্বিক সক্ষমতা পাঁচ ধাপ বেড়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২০তম। ২০১৭ সালে অবস্থান ছিল ১২৫তম। তালিকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু পাকিস্তানই বাংলাদেশের নিচে ১২১তম অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের অবস্থান ৩৪তম, শ্রীলঙ্কা ৭৭তম ও নেপাল ১০২তম। উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে পিছিয়ে থাকার দুইটি অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের ভিসার আবশ্যিক শর্ত বাড়ানো আর পর্যটন সেবা অবকাঠামোতে নানা দুর্বলতা। পর্যটন খাতটি প্রত্যাশিত লক্ষ্যে না পৌঁছানোর আরো একটি বড়ো কারণ আমাদের পর্যটন খাত কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর সেজন্য এই খাতে নীতি নির্ধারকও অনেক। যার জন্য কেউ চাইলেও অন্যদের কারণে আন্তরিক হয়ে এই খাতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।


আগামী দিনগুলোতে পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ বাড়বে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪০ কোটি মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে যায়। অর্থাত্ প্রতি সাত জনের মধ্যে এক জন ইনবাউন্ড পর্যটক। তাদেরকে আমাদের প্রাকৃতিক নৈসর্গে আকৃষ্ট করতে পারলে এটি হবে রাজস্ব আয়ের বড়ো একটি মাধ্যম। ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা যখন ৯৫০ কোটিতে দাঁড়াবে তখন বার্ষিক ইনবাউন্ড ট্যুরিস্টের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক যা বছরে ৪৫০ কোটির মতো দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়। আর এর অর্ধেক আসবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বাংলাদেশের জিডিপিতে বর্তমানে মাত্র ২ দশমিক ১০ শতাংশ অবদান রাখছে এই খাত। পর্যটন শিল্পের বিকাশ শুধু বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের লিফট তৈরি করছে ওয়ালটন
সুনামগঞ্জের লাল শাপলার বিল এখন পর্যটন এলাকা

আপনার মতামত লিখুন