শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

পর্যটক কমছে সুন্দরবনে, রাজস্ব নিয়ে শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার
১৫ জানুয়ারি ২০২২

আবারও পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ছে সুন্দরবনে। শীত মৌসুম এলেই যার সৌন্দর্য দেখতে প্রতি বছরই লাখো পর্যটক ভিড় করেন সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন দেখতে। কিন্তু গত বছরের মার্চ থেকে একের পর এক করোনা প্রকটের ধকল, তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য নানাবিধ পরিবহনের সমস্যা, ফলে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না সুন্দরবনের এ পর্যটক খাত।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কিছুটা পরিবর্তন হলেও আবারও ১৩ জানুয়ারি থেকে তৃতীয় ধকলে শুরু হয়েছে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের নির্দেশনা, তাই ক্রমান্বয়ে কমে আসছে সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণা। ফলে এ খাতে চলতি অর্থ বছরের রাজস্ব’র টার্গেট নিয়ে শঙ্কায় বন বিভাগ।

সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানি। বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, হরিণ ও নানাবিধ পশু-পাখিসহ বন্যপ্রাণী স্থল ও জলজ প্রাণীর আশ্রয়স্থল এই বন।

বনের বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে জল ভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। এ বিশাল জল ভাগের ছোট-বড় ৪৫০টি নদী ও খাল বিস্তীর্ণ রয়েছে বন জুড়ে। বিশাল আয়তনের এই সুন্দরবনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী।

নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন কুমির ও ২১০ প্রজাতির মাছ। তার বিচরণ ও সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখার জন্য দেশি-বিদেশি লাখো দর্শনার্থীরা ভিড় করে থাকে সুন্দরবনে। কিন্তু বিশ্বে নতুন করে ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটক শিল্প ও এর ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের মাঝে উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্রমান্বয়ে ধস নামছে সুন্দরবন পর্যটন শিল্পে। আবার জীবন বাঁচাতে নতুন করে লড়াই করতে হবে পরিবার পরিজন নিয়ে নির্ভরশীল এ পেশার কর্মজীবীদের। তবে এ সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার যদি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রণোদনা দেন তাহলে কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে সুন্দরবনের পর্যটক খাতে জড়িত মানুষেরা।

করোনা ভাইরাসের প্রকটে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুললেও ৪ থেকে ৫ মাস পর আবারও ওমিক্রনের তৃতীয় ধকল শুরু হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে আসে নতুন ঘোষণা।

১৩ জানুয়ারি থেকে পুনরায় করোনা নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের জন্য যাতায়াত ও গাড়ি চলাচল সীমিত করা হয়েছে। যার ফলে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্র ও শনিবার দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী চারের এক অংশে নেমে পড়েছে গোটা সুন্দরবনের পর্যটক স্পটে। করোনা মহামারির পূর্বে শীত মৌসুমে শুধুমাত্র করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। আর সেখানে এ বছর গত সাড়ে ৪ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।   

করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ফরেস্টর হাওলাদার আজাদ কবির জানান, সরকারের বর্তমানে নতুন যে নির্দেশনা আছে সেটি বন বিভাগের সরকারি কর্মজীবীরা মানতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়, তার পরেও এ নিয়ম মানতে হবে। বনরক্ষীরাও চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে সুন্দরবনের ভ্রমণে আসা পর্যটকরা স্বাস্থ্য সচেতনভাবে মাস্ক পরিধান করে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে এবং সকলকে সচেতনভাবে চলাচলের জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, পর পর তিনটি ধকল পড়ছে পর্যটক খাতের ওপর, তাই এ অর্থ বছরের রাজস্বের টার্গেট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বন বিভাগ।

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, বিশ্বের মহামারির ফলে এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর চরম আঘাত এনেছে করোনা ভাইরাসের বর্তমান ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন। তাই সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানতে গিয়ে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা যাতে বেকার হয়ে না যায় তার জন্য তাদের প্রণোদনা বা সহায়তা দেওয়া উচিত। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে অভাব অনটনে এই পেশার লোকজন বেকার হয়ে গেলে পর্যটন শিল্পের ওপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সুন্দরবনে প্রতি বছর শীত মৌসুমে গড়ে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন। বার বার করোনা মহামারিতে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ধস নামতে পারে সুন্দরবন পর্যটনশিল্পে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বমানের পণ্য নিয়ে বাণিজ্যমেলায় ওয়ালটন
পর্যটন জোন হচ্ছে হাতিয়ার নিমতলী সৈকত

আপনার মতামত লিখুন