শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ইভেন্ট

কোথাও মুখর, কোথাও ফাঁকা

ডেস্ক রিপোর্ট
১৩ জুলাই ২০২২
কোরবানির ঈদের ছুটিতে পদ্মা সেতু দেখতে মানুষের ভিড়

কোরবানির ঈদের ছুটিতে পদ্মা সেতু দেখতে মানুষের ভিড়

ঈদের ছুটিতে দেশের পর্যটন এলাকায় উপচে পড়া ভিড় থাকে। এবার পরিস্থিতি একটু ব্যতিক্রম। কোনো কেন্দ্র পর্যটকে মুখর, আবার কোনটিতে নেই কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণপিপাসু। বন্যার প্রভাবে এবার সিলেটে পর্যটনে ধস নেমেছে। একই কারণে খরা মৌলভীবাজারেও। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির স্পটগুলোতেও নজরে পড়ছে না আশানুরূপ দর্শনার্থী। প্রায় অভিন্ন অবস্থা কক্সবাজারে। নানা অফার দিয়েও প্রয়োজনীয় পর্যটক টানতে পারেনি বিশ্বের বৃহত্তম এই সমুদ্রসেকতের হোটেল-মোটেলগুলো। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর জন্য যাতায়াত সহজ হওয়ায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার দেখা গেছে। ভিড় ছিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়ও। 

কক্সবাজার :জোয়ার-ভাটা নিয়ে খেললেও এবার পর্যটকের খরা কাটাতে পারেনি এই সমুদ্রসৈকত। ঈদ ও বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজার ভ্রমণপিপাসুতে টইটম্বুর থাকলেও এবার তাতে ভাটা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থী থাকলেও কাঙ্ক্ষিত চাপ নেই। অনেকটা আলস্যে সময় কাটছে হোটেল-মোটেলের কর্মী ও সংশ্নিষ্টদের। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালু হওয়া পদ্মা সেতু অধিকাংশ মানুষ দেখতে গেছেন এবং সেই সঙ্গে চলাচল সহজ হওয়ায় অনেকে গেছেন কুয়াকাটা।

সিলেট :এ অঞ্চলে বর্ষাকাল পর্যটনের ভরা মৌসুম হলেও বন্যা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসার প্রত্যাশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পর্যটকের অভাবে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র খালি পড়ে রয়েছে। করোনা মহামারির সময় স্থানীয় পর্যটকদের ঢল দেখা গেলেও এবার তাও দেখা যায়নি। সব মিলে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে তীব্র হতাশা দেখা দিয়েছে। নগরীর বিভিন্ন হোটেলে রুম খালি পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট। অথচ এ দুটি উপজেলায় রয়েছে জাফলং, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, সাদাপাথরের মতো সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।

নগরীর জিন্দাবাজারের গোল্ডেন সিটি হোটেলের মহাব্যবস্থাপক মলয় দত্ত বলেন, ঈদে কোনো কক্ষ খালি থাকে না। এবার প্রায় সব খালি।

ঈদের সময় নগরীর আশপাশের চা বাগান ও বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় দেখা যায়। এবার এসব জায়গায়ও লোকসমাগম কম। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত জানান, বন্যায় বিপর্যস্ত ছিল সিলেট। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিতভাবে পর্যটক আসেননি। ফলে এ খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে।

মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল :এবার হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য। সর্বত্র যেন সুনসান নীরবতা। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির আঙিনা এবার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়নি। এতে পর্যটননির্ভর জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিক হতাশাগ্রস্ত।

লাউয়াছড়া বিট অফিসার আনিছুজ্জামান বলেন, ঈদের দিন মাত্র ৪২৯ জন পর্যটক লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করেছেন। তার মধ্যে স্থানীয়রাই বেশি। গত ঈদে দিনে ৪-৫ হাজার পর্যটক যাতায়াত করেছেন। এর কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, বন্যার প্রভাব পড়ায় হয়তো এ বছর পর্যটক কমে গেছে।

শ্রীমঙ্গল গ্রিনলিফ রেস্ট হাউসের মালিক এসকে দাস সুমন জানান, ঈদ উপলক্ষে একজন মাত্র পর্যটক তাঁর রেস্ট হাউসে উঠেছেন।

অন্যান্য সময় ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকে বেশির ভাগ রেস্ট হাউস-রিসোর্টের সব রুম বুকিং হয়ে যেত। এবার সব ফাঁকা। এ ধরনের প্রতিকূল অবস্থার মাঝে গ্লোবাল ভিলেজ, দাওয়াল, তানভীর, হিলভিউ রেস্ট হাউস ইতোমধ্যে পর্যটক না আসায় বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে আগে প্রতিদিন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হোটেল, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক ও হামহাম জলপ্রপাতে নেই উল্লেখযোগ্য পর্যটক। পর্যটনসংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে অনেক পর্যটক তাঁদের বুকিং ক্যান্সেল করে দিয়েছেন।

রাঙামাটি :ঈদের ছুটিতে এবার রাঙামাটিতে পর্যটন স্পটগুলোতে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক নেই। পর্যটনসংশ্নিষ্টরা জানান, ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহায় সব সময়ই পর্যটকের সমাগম কম হয়ে থাকে। কোরবানির ঈদে বেশিরভাগ মুসলিম পরিবার পশু কোরবানি দিয়ে থাকে। আবার বর্তমান মৌসুমে বৃষ্টিপাত, গরমও পর্যটক না আসার একটি কারণ। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা থাকায় অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের নিয়ে এবারের ঈদে পাহাড়ে বেড়াতে আসেননি।

পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ূয়া জানান, তাঁর মোটেলের ৬০ শতাংশ রুম বুক। ছুটিতে কয়েক দিনে পর্যটন কেন্দ্র ঝুলন্ত সেতুতে গড়ে এক-দেড় হাজার মানুষ টিকিট কেটে প্রবেশ করেছেন।

পটুয়াখালী, কলাপাড়া :ঈদের ছুটি ঘিরে প্রতিবছর কুয়াকাটায় আসেন শত শত পর্যটক। কিন্তু এবারের ঈদের ছুটির পরের চিত্র একটু ভিন্ন। পদ্মা সেতু খুলে দিয়েছে কুয়াকাটার ভাগ্য। মাত্র ১৮ দিন আগেও ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে সময় লাগত ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন কুয়াকাটায় আসতে সময় লাগে মাত্র ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা। তাই কুয়াকাটায় পর্যটকের বাঁধভাঙা জোয়ার।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, 'পদ্মা সেতু হওয়ায় কুয়াকাটায় এখন পর্যটকের চাপ বেশি। এবার বিদেশি পর্যটকেরও আগমন বেশি দেখা যাচ্ছে। এখানে ১৬০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির সব হোটেল-মোটেল ঈদের আগেই বুকিং হয়ে যায়।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ই প্রমাণ করে- পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। গোটা সৈকত ব্যবস্থাপনাসহ সব উন্নয়ন পর্যটনবান্ধব করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

চট্টগ্রাম :গতকাল সকাল থেকে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ছিল লোকারণ্য। সমুদ্রস্নান, স্পিডবোট, ঘোড়ার পিঠে চড়া সবই উপভোগ করেছেন ঘুরে বেড়ানো মানুষ। বেশিরভাগ মানুষ পরিবার নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে মানুষের ঢল    -সমকাল

পতেঙ্গা থানার ওসি কবীর হোসেন বলেন, সৈকতে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৈকতে প্যাট্রোল টিম, মোটরসাইকেল, মোবাইল টহল বাড়ানো হয়েছে।

পদ্মা সেতুর সুফল মিলছে না সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পে
কক্সবাজারে বেড়েছে পর্যটক, স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা

আপনার মতামত লিখুন