বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
জাতীয়

পদ্মা সেতুর সুফল মিলছে না সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পে

ডেস্ক রিপোর্ট
১৩ জুলাই ২০২২

প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আগামী মৌসুমে পর্যটকের আগমন আরও কয়েকগুণ বাড়বে। বর্তমানে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে পদ্মা সেতু পার হয়ে আসা যাচ্ছে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জে। গাড়ি থেকে নেমেই সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় একমাত্র এ এলাকা থেকে।

তবে দ্রুতগতির ভালো মানের জলযান ও হোটেল-মোটেলসহ আধুনিক আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় এ পথে সুন্দরবনে আসতে আগ্রহী নন অনেকে। এছাড়া সুন্দরবন পশ্চিম বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জের পর্যটন স্পটগুলোর অবকাঠামো পর্যটকবান্ধব নয়। বনে প্রবেশে অনুমতি প্রাপ্তিতে বিধিনিষেধ ও আধুনিক জলযান না থাকায় এখনই এ রেঞ্জে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে না বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়দের দাবি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক জলযান চলাচলের অনুমতি ও সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল নির্মাণ হলে সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে। পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুফল মিলবে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে পরিবারসহ সুন্দরবনের মুন্সিগঞ্জে আগত রকিবুল খান বলেন, এর আগে কয়েকবার সুন্দরবন ভ্রমণ করেছি। ইচ্ছা ছিল বর্ষায় একবার সুন্দরবন ঘুরতে আসবো। এজন্য পদ্মা সেতু পার হয়ে পরিবার নিয়ে সুন্দরবনে এলাম। কিন্তু প্রবেশে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঢুকতে পারিনি। ট্রলারে সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ ঘুরে রাতেই ফিরে যাবো। থাকার মতো ভালো হোটেল নেই এখানে। এছাড়া খাবার পানি ও টয়লেটের সমস্যা রয়েছে। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এ অঞ্চলে পর্যটকরা আসবে না।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের পর্যটক গাইড মো. মানিক মোড়ল  বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রতিদিনই অনেক পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে সুন্দরবনে প্রবেশে বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কলাগাছিয়াসহ পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য আমরা আগতদের ট্রলারে সুন্দরবনের আশপাশের এলাকা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি।

সুন্দরবনের পর্যটকবাহী ট্রলারচালক মো. ফেরদাউস হোসেন  বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রচুর লোক সুন্দরবন ঘুরতে আসছেন। কিন্তু বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে আগস্ট মাস পর্যন্ত বনের ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না। এজন্য আমরা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এখানে এসে ফিরে গেছেন।

সুন্দরবন সংলগ্ন বরষা রিসোর্টের ম্যানেজার মো. রাজু হোসেন  বলেন, মুন্সিগঞ্জে মাত্র দুটি রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়া এখানে আর কোনো আবাসিক হোটেল-মোটেল নেই। এখন অফ সিজন কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর আমাদের রিসোর্ট প্রায় সময় সম্পূর্ণ বুক থাকছে। এবার পর্যটন মৌসুমে অগ্রিম বুকিং ছাড়া কেউ এলে রুম দিতে পারবো না।

সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটি সাতক্ষীরার আহ্বায়ক গাজী সালাউদ্দিন বাপ্পি বলেন, যানবাহন থেকে নেমেই সরাসরি সুন্দরবন দেখা যায় একমাত্র সাতক্ষীরা রেঞ্জে। খুলনা বা বাগেরহাট হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণে গেলে নৌপথে অনেক দূর অতিক্রম করার পর সুন্দরবনের দেখা মেলে। পদ্মা সেতু চালুর পর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলেও অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। এখানে ভালো মানের কোনো খাবার হোটেল বা আবাসিক হোটেল নেই। সরকারিভাবে কোনো আবাসিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়নি। সুন্দরবনে ভেতরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই। নোঙর জেটি, ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার থাকলেও সেগুলোর দৈন্যদশা। পর্যটকদের জন্য স্প্রিডবোর্ডসহ আধুনিক জলযান চলাচলের অনুমতি না থাকায় ধীরগতির পুরাতন ট্রলারেই চলাচল করতে হয়। ফলে এ রেঞ্জে পর্যটক বাড়ছে না।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় সেটি বিকশিত হচ্ছে না। সবার আগে সরকারিভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করতে হবে। সুন্দরবনে ইকো সিস্টেমকে ঠিক রেখে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। আধুনিক জলযান চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আবাসিক ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটকদের আগমন বাড়াতে এখনই সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বর্তমানে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। আগস্ট মাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়া আগামী মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকের আগমন কয়েকগুণ বাড়বে। এখনো প্রতিদিন অনেক পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসছেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা তাদের অনুমতি দিতে পারছি না।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের কলাগাছিয়ায় পর্যটকের বিভিন্ন সুবিধার পাশাপাশি ফুট ট্রেইল পাকাকরণ, হরিণ ও কুমিরের বেষ্টনী নির্মাণ, স্যুভেনির শপ, গোলঘর এবং বেঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হানি ট্যুরিজম চালু করা হয়েছে। এছাড়া মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতসহ আরও নতুন নতুন ইকো ট্যুরিজম স্পট নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর সাতক্ষীরার সুন্দরবন অংশে পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আকাশ নীলা নামে একটি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সীমিত আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। আগামীতে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশগত বিষয়টি খেয়াল রেখে অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পর্যটন
কোথাও মুখর, কোথাও ফাঁকা

আপনার মতামত লিখুন