বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গোলাম কিবরিয়ার ভ্রমণ কাহিনী

পর্যটনে নারীর সুবিধা-অসুবিধা

গোলাম কিবরিয়া
০২ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অসুবিধা ছাড়াও, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকরা উদ্বিগ্ন থাকেন। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকরা ছিনতাইসহ নানা রকমের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিশেষত নারী ও বিদেশি পর্যটকরা বেশি সমস্যায় পড়েন।

বাংলাদেশে নারীরা এখন একাই বেরিয়ে পড়তে চান। পর্যটনের প্রতি তাদের আগ্রহ এখন বেশ বেড়েছে। কাজের ফাঁকে কখনও একা, কখনও গ্রুপভিত্তিক হয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। বাংলাদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় নারীর এই অগ্রযাত্রা সামাজিক ও আর্থিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

পিছিয়ে পড়া নারী যখন সব বাধা ডিঙিয়ে একাই ঘর থেকে বেরোতে চান তখন এটি স্পষ্ট যে, পর্যটন নারীকে টানছে। আর্থিক ও সামাজিকতার সম্মুখভাগে চলে এসেছেন নারী। যথেষ্ট আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার কারণেই নারীরা এখন বেরিয়ে পড়তে চান একা, তার নিজের মতো করে, পছন্দের জায়গায়। এ এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

পারিবারিকভাবে হোক, বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা সমাজকর্মে, অফিসিয়াল কাজেও নারীকে ঘর থেকে বের হয়ে তার পর্যটন স্বাদ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। ফলে নারীর নিরাপত্তা সমাজের আর সবার নিরাপত্তার সঙ্গেই সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। আলোচনায় এসেছে, নারীর নিশ্চিত নিরাপত্তা। নারী পর্যটক সায়মা জাহান সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন বান্দরবান। তিনি জানালেন, আগে নারীর একা ঘর থেকে বেরোনোর বিষয়টি ছিল অকল্পনীয়। এখন এ শহরেই রাত কি দিন, নারীরা একজন পুরুষের সমান ঝামেলা নিয়েই কর্মব্যস্ত সময় কাটান। এই নারীদের জন্যই বিনোদন, বিশ্রাম কিংবা অবসরের জন্য নিরাপদ ভ্রমণ এখন সময়ের দাবি। কোলাহল থেকে দূরে, ছুটির সময়ে যদি নিজেকে ভিন্নভাবে আবিস্কার করা যায়, প্রকৃতির মাঝে বিলীন হয়ে প্রফুল্লচিত্তে ঘরে ফেরা যায়, তবে সেটা জাতীয় অর্থনীতির জন্যই সুখকর এবং ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। পূর্ণোদ্যমে কাজে ফিরলে তার উৎপাদনশীলতা বহুগুণে বেড়ে যায়। একইভাবে ভ্রমণ জগতে নারীর অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা গেলে বিদেশি নারী পর্যটকরাও একা এ দেশে আসতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন; যা সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন বৈদেশিক মুদ্রা। শক্তিশালী হবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। শুধু কি তাই, বেকারত্বের এই দেশে কর্মসংস্থানও অনেক বেড়ে যাবে। ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য শুধু এই এক পর্যটননির্ভরতাই যথেষ্ট। সংশ্নিষ্টরা বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইডের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

আমার বাংলাদেশ ট্রাভেল গ্রুপের একজন উদ্যোক্তা ফারুক হাসান বলেন, পর্যটন স্পটগুলোকে আরও বেশি নারীবান্ধব করতে পৃথক বিশ্রামাঘার, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ট্যুরিস্ট পুলিশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী সদস্যসহ পর্যটন খাতের অন্য সেবাগুলোয় বেশি সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ জরুরি। এক কথায় নারীর জন্য নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পর্যটন সেবার গুরুত্ব মাথায় রেখেই নীতি প্রণয়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নারীকে নারী না ভেবে একজন পর্যটক হিসেবেই দেখতে হবে। এটি শুধু পর্যটনের জন্যই নয়, সার্বিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জানবেন এ দেশে একজন নারী একা ভ্রমণ করতে পারেন, তারা সঙ্গতকারণেই ভাববেন দেশটি বেশ নিরাপদ এবং বিনিয়োগের জন্য উত্তম স্থান। আর এই প্রক্রিয়ায় আমরা উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে পাড়ি দিতে সক্ষম হবো। ডিজিটাল এ যুগে ভ্রমণপাগল এই মানুষকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্রুপ, পেজ ও হেল্পলাইন। সেখানে ভ্রমণের নানা ইভেন্টগুলোতেও অংশ নিচ্ছেন অসংখ্য ভ্রমণপিপাসুরা, যা বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাকেই স্পষ্ট করে।

পর্যটনশিল্প এখনও পুরোপুরি নারীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। ট্যুরিস্ট পুলিশের সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নারীর নিরাপত্তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী এখন সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। পুরুষের মতো তারাও বেরিয়ে পড়তে চান তাদের পছন্দের জায়গায়। কিন্তু শুধু নারীদের হোটেল ভাড়া দেওয়া এবং নিজের মতো তাদের ভ্রমণের নিরাপত্তা কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? উত্তরটি অবশ্যই 'না'। পর্যটন এলাকাগুলোকে আরও বেশি নারীবান্ধব করতে পৃথক ও পরিচ্ছন্ন বিশ্রামাগার এবং নিরাপত্তার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পর্যটনে অধিকসংখ্যক নারী কর্মীদের নিয়োজিত করাও যেতে পারে। পর্যটন এলাকায় নারীর অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করতে পারলে বিদেশি নারী পর্যটকরাও এ দেশে আসতে আগ্রহী হবেন। এটি সার্বিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ আকর্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের মানসিকতার যেমন পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন, তেমনি সরকারের পরিকল্পনা ও উদ্যোগও হাতে নিতে হবে। 

আমাদের ভাষা আন্দোলন জাদুঘর
নেত্রকোনার দুর্গাপুর যেন পৃথিবীর বুকেই স্বর্গ

আপনার মতামত লিখুন