শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
গোলাম কিবরিয়ার ভ্রমণ কাহিনী

থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে

গোলাম কিবরিয়া
২৮ আগস্ট ২০২১

ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অবসর মিললেই সবাই ছোটেন প্রকৃতির টানে। ছোট ছোট অ্যাডভেঞ্চার গ্রুপের সংখ্যাও কম নয়। অজানা সব স্থান খুঁজে সেখানকার অপরূপ দৃশ্য অবগাহন করে তৃপ্ত হন তারা। এভাবে তাদের মাধ্যমে ভ্রমণের নতুন নতুন জায়গার খোঁজ পাই আমরা। ডিজিটাল এ যুগে ভ্রমণপিপাসু এই মানুষদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য গ্রুপ, পেজ ও হেল্পলাইন। সেখানে ভ্রমণের নানা ইভেন্টেও অংশ নিচ্ছেন অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু, যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকেই স্পষ্ট করে। ঋতুবৈচিত্র্যে আমাদের দেশ অপরূপ। শীতে যে পাহাড় দেখলে শুস্ক ও রুক্ষ মনে হয়; বর্ষার পর সেসব পাহাড়ই সবুজতায় স্নিগ্ধ ও সজীব হয়ে ওঠে।

প্রিয় পাঠক, সময় করে নিজ আঙিনার আশপাশ আমাদের দেখা হয় না। হয়তো সময় নয়তো অর্থের সীমাবদ্ধতায়। আর এসব বাধা জয় করে দেশটাকে একসঙ্গে ঘুরে দেখানোর কাজটা করে যাচ্ছে দেশের অনলাইনভিক্তিক ট্রাভেল গ্রুপগুলো।

পর্যটনই যে কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার। ফলে টেকসই পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্যপূর্ণ, দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে তা হওয়ার অপার সম্ভাবনা আছে। দেশকে পর্যটনে সম্ভাবনার জায়গায় নিয়ে যেতে বন্ধু হিসেবে এখন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পর্যটকরা সহজেই গন্তব্য নির্বাচন করতে পারছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ভ্রমণে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে নানা বয়সী মানুষের। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। ফেসবুকে ভ্রমণ বিষয়ক বেশ কিছু পেজ আছে। এগুলোতে পর্যটকরা নিজেদের ভ্রমণকাহিনি লিখছেন। প্রায় প্রতি মাসে ফেসবুক গ্রুপগুলো থেকে বিভিন্ন জায়গায় ট্যুরের আয়োজন করা হচ্ছে। ফলে ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ রূপ নিয়েছে ট্রাভেল এজেন্সিতে। কথা হয় বেশ কিছু অনলাইননির্ভর ট্রাভেল গ্রুপের সঙ্গে। তারা জানায়, কীভাবে সময়ের সঙ্গে ফেসবুকনির্ভর ট্রাভেল গ্রুপ এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল। ট্যুর গ্রুপ বিডির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও এমডি ইমরানুল আলম বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে ট্যুর দিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন জেলা ভ্রমণ-প্রকৃতির রূপ দর্শনই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। একসময় পরিচিত বিভিন্ন মানুষও আমাদের সঙ্গে ট্যুর দিতে চাইলেন। আমরা দলবেঁধে ট্যুর করা শুরু করলাম। ২০১৪ সালে এসে আমাদের মনে হলো, পেশা হিসেবে এটাকে নেওয়া যায়। দিন দিন ট্রাভেল গ্রুপগুলো কেন এত জনপ্রিয় হচ্ছে- এমন প্রশ্নে চলো বহুদূর ট্রাভেল গ্রুপের প্রধান মোশারফ হোসেন বলেন, বাজেট ট্যুরের কারণেই মানুষের, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বেশি সাড়া ফেলছে ট্রাভেল গ্রুপ।

এ ক্ষেত্রে সবাই উদাহরণ টানেন, দেশের এমন স্পট আছে, যা আগে মানুষ খুব একটা চিনত না। এই ট্রাভেল গ্রুপগুলোর মাধ্যমেই তা পরিচিতি ও পর্যটন স্পট হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেসব এলাকার জীবনমান উন্নয়নে অনলাইননির্ভর ট্রাভেল গ্রুপগুলোর ভূমিকা বেশি। তা ছাড়া স্বল্প বাজেটে ভ্রমণের আয়োজন করে সব শ্রেণির মধ্যে সাড়াও ফেলতে সক্ষম হয়েছে ট্রাভেল গ্রুপগুলো। গ্রুপগুলোর পরিচালনাকারীরা বলছেন, তারা কম খরচে মানুষকে বেড়ানোর সুযোগ দিতে চান। প্রতি মাসেই দু-একটা ভ্রমণের আয়োজন করে 'আমার বাংলাদেশ'। তিন উদ্যোক্তার একজন ফারুক হাসান বলেন, 'একসময় নিজেদের মতোই ঘুরতাম। আশপাশে বন্ধুদের নিয়ে ট্যুর পল্গ্যান করেছি। পরে মনে হয়, দেশটা তো আমার একার নয়। এর সৌন্দর্য উপভোগ করার অধিকার সবার। এ চিন্তা থেকেই এ গ্রুপের জন্ম।' এর একজন তত্ত্বাবধায়ক রনি অনলাইন ভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ সম্পর্কে বলেন, 'আগে মানুষ তথ্য জানত না। এখন যাওয়ার জায়গা সহজেই সামনে চলে আসছে। কেউ কোনো এক জায়গার সন্ধান পেলে তা ফেসবুকে পোস্ট করছে।'

সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে ওই জায়গার খবর। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখেন।

বর্ষার শুরুর দিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া মানুষের ছবি বা তথ্য কমবেশি সবার ফেসবুকের নিউজফিডেই এসেছে। এখন তো প্রতি সপ্তাহেই দলবেঁধে ইলিশ খেতে যাওয়ার ধুম পড়েছে মাওয়া বা চাঁদপুরে গিয়ে। বন্ধু-পরিজন ছাড়াও অনলাইনে গড়ে ওঠা ট্রাভেল গ্রুপ এর আয়োজক। গত কয়েক বছরে অনেক গ্রুপ হয়েছে, যারা দেশের আনাচে-কানাচে হরহামেশা ঘুরে বেড়াচ্ছে। চেনাচ্ছে অন্য বাংলাদেশকে। এ ধরনের গ্রুপ পরিচালনাকারীরা বলছেন, তারা কম খরচে মানুষকে বেড়ানোর সুযোগ দিতে চান।

বাংলাদেশে যেসব ট্রাভেল গ্রুপ বেশ সাড়া ফেলেছে তার মধ্যে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ, ট্যুর গ্রুপ বিডি (টিজিবি), চলো বহুদূর, জোসনা তরী, বিডি ট্রাভেলার্স, উইকেন্ড ট্যুর, কমফোর্ট ট্রাভেল বিডি, বেড়াই বাংলাদেশ, সোলো ট্রাভেল, ওয়াইল্ড অ্যাডভেঞ্চার, ছুটি ট্রাভেল গ্রুপ, এক্সপ্লোর বাংলাদেশ, আরবান বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।

রোমাঞ্চকর মায়াবী কির্সতং
হরিণের দ্বীপে একদিন

আপনার মতামত লিখুন