শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গোলাম কিবরিয়ার ভ্রমণ কাহিনী

চট্টলা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানী

গোলাম কিবরিয়া
২৮ আগস্ট ২০২১

চট্টগ্রাম (ঐতিহাসিক নাম পোর্টো গ্র্যান্ডে এবং ইসলামাবাদ) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। বন্দরনগরী নামে পরিচিত শহর, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাহাড়, সমুদ্র এবং উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম শহর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য প্রাচ্যের রানী হিসেবে বিখ্যাত। ঢাকার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হচ্ছে চট্টগ্রাম।

একই সঙ্গে পাহাড়, হ্রদ, বন ও সমুদ্র দেখতে চাইলে এই সময়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। কাজেই এখানে আপনি পুরোনো নিদর্শনের পাশাপাশি পাবেন আধুনিকতার ছোঁয়া। চট্টগ্রাম শহর এবং এর পাশের জায়গা বিশেষ করে সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও ফটিকছড়িতে দেখতে পাবেন অনেক কিছু। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলই আসলে দেখার মতো।

একদিনেই আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, ওয়ার সিমেট্রি, বাটালি হিল, লালদীঘি মসজিদ, ফয়'স লেকসহ চট্টগ্রাম শহরের ভেতরের দর্শনীয় স্থানগুলো। সুফি সাধক বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে ওঠা মাজারটির দেখা পাবেন শহরের নাছিরাবাদ এলাকায়।

কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রামের দামপাড়া এলাকায়, ১৯নং বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়কে অবস্থিত। এটি মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে, চট্টেশ্বরী সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাছাকাছি এবং ফিনলে গেস্ট হাউসের নিকটবর্তী পাহাড়ি ঢালু আর সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন আপনি। তা ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের আশপাশে দেখার মতো আরও অনেক কিছু রয়েছে। নতুন রূপে সেজেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। যেতে পারেন আনোয়ারার পারকি সৈকত দেখতে। এ ছাড়া মহানগরীর ফয়'স লেকও এ সময়ের জন্য খুব ভালো একটা জায়গা। ফয়'স লেক চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম হ্রদ। এটি ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে খনন করা হয় এবং সে সময় পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারেন। উপভোগ করতে পারেন জল থিম পার্ক সি ওয়ার্ল্ডের বিভিন্ন রাইড।

শহর ছাড়িয়ে যেতে পারেন সীতাকুণ্ড, মিরসরাই অথবা ফটিকছড়ি। ফটিকছড়িতে রয়েছে হাজারি খিল অভয়ারণ্য, যেখানে ঘুরতে ও তাঁবুতে রাত কাটানোর জন্য যেতে পারেন। ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডারে পাবেন মাইজভাণ্ডারী সাধকদের মাজার। বাংলাদেশে মাইজভাণ্ডারী বলে যে লোকসংগীত প্রচলিত, এ মাইজভাণ্ডার থেকেই তার উৎপত্তি।

মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে বিস্তৃত বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানে খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, কমলদহ, সহস্রধারাসহ অনেক ঝরনার দেখা পাবেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খুব কাছে বলে এসব ঝরনা দেখতে যাওয়া খুব সহজ। কয়েক দিন বৃষ্টি পড়লেই ঝরনাগুলোয় পানি থাকে, তাই গরমের সময় এসব জায়গায় যেতে বেশ ভালো লাগে। যদি অল্প সময়ের জন্য ট্রেকিং করতে চান, তাহলে যেতে পারেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায়।

সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক থেকে হেঁটে যেতে পারেন সেখানে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটি শিবমন্দির। এ ছাড়া যেতে পারেন ঝরঝরি ট্রেইলে। এই ট্রেইল ধরে আপনি পন্থিশীলা-সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম ট্রেকিং করতে পারবেন। এই পথে বেশ কিছু ঝরনা রয়েছে।

সীতাকুণ্ডে পাবেন গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, যেটি মুরাদপুর বিচ নামে পরিচিত। গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত এটি সীতাকুণ্ডের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। প্রকৃতি ও গঠনগত দিক থেকে এটি অন্যান্য সমুদ্রসৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর একদিকে দিগন্ত জোড়া জলরাশি, অন্যদিকে কেওড়া বন দেখা যায়। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখা যায়। এই বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। সীতাকুণ্ড এলাকাতেই পাবেন সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝরনা। মূলত সীতাকুণ্ড একটি প্রাচীন অঞ্চল। এখানে পাহাড়, বন, ঝরনা, সমুদ্রসৈকত সবকিছুরই দেখা পাওয়া যায়।

মিরসরাইতেও দেখা মিলবে পাহাড়, বন, ঝরনা ও সমুদ্রসৈকত। আর থাকছে বাওয়াছড়া লেক। এটি ওয়াহেদপুর গ্রামে বারমাসিছড়ার মুখেই অবস্থিত। এ ছাড়া ঘুরে আসা যায় মহামায়া লেক থেকে। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। এখানে আপনি কায়াকিং করতে পারেন অথবা বোট নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এর আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। মহামায়া কৃত্রিম লেক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের রূপে ও মাধুর্যে মুগ্ধ করেছে। সবকিছু মিলে স্বল্প সময়ের জন্য চট্টগ্রাম হতে পারে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

মনে রাখবেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে পল্গাস্টিকসহ আপনার ব্যবহূত জিনিসপত্র ফেলবেন না। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ ঘুরতে গিয়ে করবেন না।

কীভাবে যাবেন: সারাদেশের সঙ্গেই চট্টগ্রাম সড়ক, আকাশ ও রেলপথে সংযুক্ত। তবে ছুটির দিনের আগে ট্রেনের টিকিট পাওয়াটা মোটামুটি দুঃসাধ্য ব্যাপার। থাকার জন্য চট্টগ্রামে অনেক হোটেল রয়েছে। নগরীর জিইসি মোড়ের আশপাশে বিলাসবহুল হোটেলগুলো আছে আর স্টেশন রোডে বাজেট হোটেলগুলো পাবেন।

চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান: বাটালি হিল, লালদীঘি মসজিদ, ভাটিয়ারী লেক, ফয়'স লেক, পারকি সৈকত, পতেঙ্গা সৈকত, রাউজানের সাহেব-বিবি মসজিদ, নন্দীর হাটের জমিদারবাড়ি, ঝরঝরি ট্রেইল, বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার, ওয়ার সিমেট্রি, কাপ্তাইয়ের লেকভিউ লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, মেধস মুনির আশ্রম, খেজুরতলা বিচ, কুমারীকুণ্ড, মিরসরাইয়ের বাওয়াছড়া লেক, সোনাইছড়ি ট্রেইল, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চালন্দা গিরিপথ, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, হাজারি খিল অভয়ারণ্য, সন্দ্বীপ, কালুরঘাটের মিনি বাংলাদেশ, ছাগলকান্দা ঝরনা, কমলদহ ঝরনা, চন্দ্রনাথ পাহাড়, সুপ্তধারা ঝরনা, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, সহস্রধারা ঝরনা, মহামায়া লেক, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, খৈয়াছড়া ঝরনা, লোহাগাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মহামুনি বৌদ্ধবিহার, খিরাম সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি।

ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্বেষণে
ঢাকা বিভাগের ১০টি মনোরম স্থান

আপনার মতামত লিখুন