বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঐতিহ্য

হাওরে কমে যাচ্ছে পাখির বিচরণ

জাহিদুর রহমান
১৬ জানুয়ারি ২০২২
টাঙ্গুয়ার হাওরে জলচর পাখি। জানুয়ারির শুরুতে পাখিশুমারির সময় তোলা- সংগৃহীত

টাঙ্গুয়ার হাওরে জলচর পাখি। জানুয়ারির শুরুতে পাখিশুমারির সময় তোলা- সংগৃহীত

টাঙ্গুয়ার হাওর ও বাইক্ক্যা বিলকে বলা হয় পরিযায়ী পাখির স্বর্গরাজ্য। তবে এখানে পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গণনা করে পাখির যে মোট সংখ্যা পাওয়া গেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগের। গত বছরের তুলনায় এবার সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখির বিচরণ কমেছে প্রায় ৩২ হাজার। আর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের প্রায় ১২০ একরের বাইক্ক্যা বিলে পাখি কমেছে আট হাজারেরও বেশি।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের যৌথ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে গত ২-৩ জানুয়ারি এবং বাইক্ক্যা বিলে ৪ জানুয়ারি জলচর পরিযায়ী পাখিশুমারি পরিচালনা হয়।

পাখিশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দুই দিনে টাঙ্গুয়ার হাওরে মোট ৩৬ প্রজাতির ২৭ হাজার ১৭০টি পাখি গণনা করা হয়। এগুলোর মধ্যে ৩৩ প্রজাতির ২৭ হাজার ১৬৭টি জলচর পাখি। পরিযায়ী বুনোহাঁসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে লালমাথা ভূতিহাঁস। সাত হাজার ৩৩২টি ভূতিহাঁস গণনা করা সম্ভব হয়েছে। দেখা গেছে, মরচে রঙের ভূতিহাঁসও। এদের মোট সংখ্যা সাত হাজার ২০৫। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে ৩৫ প্রজাতির ৫১ হাজার ৩৬৮টি পরিযায়ী পাখি ছিল। তবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও তিন প্রজাতির জলচর পরিযায়ী পাখি বেড়েছে। ওই সময় সংখ্যা সাত হাজার ৭০৬টি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ৭৪টিতে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩০টি পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। একইভাবে ২০১৮ সালে ৫৯ হাজার ৫৪২টি, ২০১৭ সালে ৯১ হাজার ২৩৬টি, ২০১৬ সালে ৪২ হাজার ৫৫৮টি এবং ২০১৫ সালে ৫২ হাজার ২৯৯টি পাখি গণনা করা হয়। ২০০২ সালে এ হাওরে একসঙ্গে ৯০ হাজার ৯০০টি মরচে রং ভূতিহাঁস দেখা গিয়েছিল।

টাঙ্গুয়ার হাওরের পর গত ৪ জানুয়ারি বাইক্ক্যা বিলে শুমারিতে মোট ৩৪ প্রজাতির তিন হাজার ২৩০টি জলচর পাখি দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে ছিল ৯০০টি গেওয়ালা-বাটান, ৪৫২টি বেগুনি-কালেম ও ২৫০টি খয়রা-কাস্তেচরা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এ বিলে ৩৯ প্রজাতির ১১ হাজার ৬১৫টি পাখি পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে এই পাখির সংখ্যা ছিল ৩৮ প্রজাতির পাঁচ হাজার ৪১৮টি। তবে ২০১৭ সালে বাইক্কা বিল জলাভূমিতে জলচর পাখির সংখ্যা ছিল ৪১ প্রজাতির ১০ হাজার ৭১৩টি। ২০১৬ সালে পাওয়া গিয়েছিল ৩১ প্রজাতির আট হাজার ৮৩১টি পাখি। এর আগের বছর ২০১৫ সালে পাখিশুমারির সময় ছয় হাজার ৯৯১টি জলচর পাখি পাওয়া যায়। তবে বাইক্ক্যা বিলের ২০২০ ও ২০২১ সালের পাখির সংখ্যা পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ওই দুই বছর পুরো হাইল হাওরে শুমারি হয়।পাখিশুমারির মূল কাজটি (গণনা) হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। এর পরও পাখির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করে বার্ড ক্লাব ও আইইউসিএন। এ কাজটি এখনও চলছে। হাওরের পর উপকূলীয় এলাকায় গত ৭ জানুয়ারি থেকে পাখিশুমারি শুরু হয়েছে, যা চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।

পাখির সংখ্যা কমার বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনাম আল হক সমকালকে বলেন, গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে পাখি কমেছে বলা যাবে না। কারণ প্রতিবছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শুমারি হয়। এবার ফেব্রুয়ারির শুমারির পর বলা যাবে।

তবে বিশ্বজুড়েই পাখির আবাসস্থল কমে আসছে জানিয়ে এ গবেষক বলেন, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এশিয়ায় পাখি বেশি কমছে। বাংলাদেশে জলাভূমিগুলোতেও পাখি কমছে। এর পেছনে বৈশ্বিক নানা কারণও আছে। দেশে যেসব পাখি দেখা যায়, তার বেশিরভাগই পরিযায়ী। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিশ্বের ২০টি দেশে তারা বিভিন্ন ঋতুতে যায়। যে দেশে তাদের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে, সেই দেশ থেকে তারা অন্য দেশে চলে যাবে। এজন্য সব দেশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে পাখির অন্যতম আশ্রয়স্থল টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরে পাখিরা তাদের জীবন বিপন্ন মনে করলে আর সেখানে ভিড় করবে না। ফলে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা সমকালকে বলেন, হাওর এলাকায় পাখিশিকারিরা বিভিন্ন কায়দায় পাখি ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। এ ছাড়া পর্যটকের পদচারণা, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার, মাছ ধরতে বিষ প্রয়োগ ও দূষণে দিন দিন পাখির সংখ্যা কমছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে জলাভূমিগুলোকে পাখির জন্য নিরাপদ করতে হবে।

পর্যটকদের জন্য ট্যুরিজম বোর্ডের নির্দেশনা
কক্সবাজারের ঘোড়ার আসলেই 'ঘোড়ারোগ'

আপনার মতামত লিখুন