শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
মতামত

হাওর অঞ্চলে পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা

ড. মো. হুমায়ুন কবীর
১৩ মার্চ ২০২২
টাঙ্গুয়ার হাওর। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গুয়ার হাওর। ছবি: সংগৃহীত

দেশে এখন বোরো মৌসুম চলছে। এ মৌসুমটি বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশে যে পরিমাণ বোরো ধান উত্পাদিত হয় তার সিংহভাগ উত্পাদিত হয় হাওরাঞ্চলে। অর্থাৎ পরিসংখ্যান বলে দেশের বোরো উত্পাদনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ হাওরাঞ্চলে উত্পাদিত হয়। সম্প্রতি হাওর নিয়ে বেশ আলোচনা উঠে এসেছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কিত বিষয়কে ঘিরে। সেখানকার সাবমরজিবল ও অলওয়েদার খ্যাত নবনির্মিত রাস্তা-ঘাট পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। কাজেই হাওর নিয়ে এখন ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের অন্ত নেই। আর হাওরের একমাত্র ফসল বোরোধান হওয়ায় এর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। একদিকে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়ায় দিন দিনই হাওরের গুরুত্ব বেড়ে চলেছে। আর সে কারণেই বিষয়টি সামনে নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।

হাওর মানেই বিস্তীর্ণ দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। আবার বর্ষাকালে যেখানে থৈ থৈ পানি। সবগুলোই দৃষ্টিনন্দন বিষয়। এর নান্দনিকতা আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পায় সাম্প্রতিক হাওর উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রমে। এক সময় হাওরের কথা শুনলেই গা শিউরে উঠত। কোনো সরকারি চাকুরে তার পোস্টিং নিয়ে হাওরে যেতে চাইতেন না। কিন্তু এখন সময় পালটেছে। এমন সময় খুব দূরে নয়, যখন সেখানে তদবির করে যেতে চাইবেন অনেকে। কারণ সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত। সরাসরি নদীর তাজা মাছ, খেতের তরি-তরকারি, শাক-সবজি, চাল-ডাল, ডিম-দুধ, দেশীয় ফল-মূল ইত্যাদি সহজেই পাওয়া যায় সতেজ ও সুলভ মূল্যে।

এই তো মাত্র গত বছরের (২০২১) নভেম্বর-ডিসেম্বরে যেসব এলাকা ছিল একেবারে পানির নিচে, তার মাত্র ২-৩ মাসের ব্যবধানে এখন সেসব এলাকাই সবুজের সমারোহে ভরপুর। সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালে যেন প্রাণমন জুড়িয়ে যায়। বোরো ধানের আবাদের জন্য খুবই উপযুক্ত এলাকা এটি। আমি আগেই উল্লেখ করেছি, সারা দেশের বোরো উত্পাদনের একটি বড় অংশ উত্পাদিত হয় এই হাওরাঞ্চলে। এখানে একমাত্র ফসল বোরো হওয়ায় কৃষককে আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলতে হয় সর্বদা। কারণ আমরা জানি, বোরো ফসলের উত্পাদন ও সংগ্রহ দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। উত্পাদন যতই হোক না কেন, যদি সেটি সময়মতো সংগ্রহ ও মাড়াই করা না যায় সেটি বিপর্যয় ডেকে আনে।

আমরা পুরো বর্ষা মৌসুমে যখন হাওরে ভ্রমণ করি তখন একধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখি আবার যখন এ শুস্ক মৌসুমে সেখানে যাই সম্পূর্ণ উলটো চিত্র ও পরিবেশ দেখতে পাব। শীতকালে বোরো ধান রোপণের সময়। আর তখন পানি কম থাকে বিধায় সেখানে দেশি জাতের সুস্বাদু মাছগুলো ধরা পড়তে থাকে। আবার এখনকার আবহাওয়ার কারণে শুধু সবুজের সমারোহ। যেদিকেই তাকানো যায় দিগন্ত জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই আবার সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ হবে অন্যরকম। তখন ধানের শীষ বের হবে। তারপর ধান পাকতে শুরু করবে। কাজেই যারা ভ্রমণপিপাসু এবং সৌন্দর্যপ্রিয় তারা যে কোনো সময়েই হাওরের এমন অলওয়েদার রূপ দেখতে যেতে পারেন।

হাওরের এমন উন্নয়নের রূপকার হলেন আমাদের হাওরের শাদু‌র্লখ্যাত বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল হাওরকে এমন একটি স্হানে নিয়ে যাওয়া। সেখানে কিশোরগঞ্জ সদরের সঙ্গে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম—এই তিনটি উপজেলাকে আপাতত সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার চেষ্টা করেছেন। সেখানকার যোগাযোগ, বিদু্যতায়ন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। এগুলো প্রকারান্তরে সেখানকার কৃষিকেই সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। কারণ হাওরের বোরোধান ফসল ঘরে তোলা যেহেতু একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য সেখানকার রাস্তাঘাট সেখানে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

কাজেই পরিশেষে বলতে হয়, হাওর শুধু বর্ষাকালের পর্যটন সম্ভাবনা নয়। সেটি সারা বছরের একটি কমপ্রিহেনসিভ পর্যটন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। সেখানকার দিগন্ত জুড়ে অথৈ পানি যেমন ভ্রমণপিপাসুদের মনতুষ্টি করতে পারে, ঠিক তেমনিভাবে বছরের অন্য সময়েও সেটি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং বর্ষাকালে যেসব জায়গায় নৌকা ও জলযান ছাড়া যাতায়াত করা যায় না, বছরের অন্যান্য সময় সেখানে নৌকা কিংবা কোনো জলযানের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া সেখানকার পর্যটকদের সুবিধার্থে এবং পর্যটক আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট করার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে।

আমাদের দেশসহ বিশ্বে যে করোনা পরিস্হিতির ভয়াল থাবা চলছে, সেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। আর সে পরিস্হিতিতে হাওরের বোরোধান, মাছ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ আমাদের খাদ্য চাহিদার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ মিটিয়ে থাকে। কাজেই হাওরের মানুষের জন্যও এখন সেখানকার পর্যটন গুরুত্ব বাড়তি আয়-ইনকামের সুযোগ সুষ্টি করেছে। এখন সেখানকার মানুষজন তাদের নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে। কারণ তারা এখন শুধু কৃষক নয়। তারাও দেশের মানুষের মনোরঞ্জনের উপলক্ষ্য হতে পারছে। সামনের দিনগুলোতে এ গুরুত্ব বাড়তেই থাকবে, যা অবহেলিত হাওরকে নতুন মাত্রা দেবে।

লেখক: রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

মালয়েশিয়া ভ্রমণে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভ্রমণ বিধিনিষেধ
জব ফেস্টিভ্যালে ওয়ালটন স্টলে উপচে পড়া ভিড়, দুই হাজার সিভি জমা

আপনার মতামত লিখুন